জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের সঙ্গে আলোচনায় মমতা। ছবি: শৈলেন সরকার।
শিল্পাঞ্চলে এসে সরকারি সভায় নানা প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করলেও শিল্পোন্নয়ন নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে সব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন, তার মধ্যে রাস্তা, নালা বা পায়ে চলা পথের সংস্কার ও নির্মাণ যেমন আছে, তেমনই আছে সেতু প্রশস্ত করা ও কৃষি বিপণন কেন্দ্র। আসানসোলের জন্য একটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শিল্পাঞ্চলে এসে শিল্পের প্রসার ও উন্নতি নিয়ে তিনি কোনও কথা না বলায় কিছুটা হতাশ বাণিজ্য মহল।
বৃহস্পতিবার আসানসোলের পুলিশ লাইন মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি সভা ও কর্মসূচির আয়োজন হয়। মঞ্চ থেকে তিনি ২৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৫৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। মঞ্চ থেকেই সবুজ পতাকা উড়িয়ে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের ২০টি বাসের যাত্রাপথের সূচনা করেন তিনি। আসানসোল-দুর্গাপুরের বিভিন্ন শহরে চলবে এই বাসগুলি। জেলায় এই রকম আরও ১০২টি বাস চলবে বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন। আসানসোলে একটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হবে জানিয়ে তিনি দাবি করেন, সারা রাজ্যে এই রকম চল্লিশটি হাসপাতাল হবে। বর্ধমান জেলায় হবে দু’টি, আসানসোল ও কালনায়। তবে কবে এই হাসপাতাল তিনি তৈরি করবেন তার দিনক্ষণ অবশ্য জানাননি।
মমতা এ দিন বলেন, “আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও কুলটি নিয়ে একটা বড় পুরসভা বানাচ্ছি। দেখে নেবেন, এ বার অনেক উন্নতি হবে। আসানসোলে একটা মেগাসিটিও বানাব।” রানিগঞ্জে ধসের সমস্যার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে, ওখানকার মানুষজন যেন কোনও ভাবে বঞ্চিত না হন, আবার ধসে ডুবে না যান। ওখানকার বাসিন্দারা যদি চান তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করব। অন্যত্র বাড়ি-ঘর বানিয়ে দেব। জেলাশাসক দেখবে বিষয়টা।” বীরভূমের পাঁচামিতে পাঁচটি কোল ব্লক নিয়ে বড় খাদান তৈরির মাধ্যমে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান, মেছোগ্রাম থেকে বর্ধমান হয়ে মোরগ্রাম পর্যন্ত বড় রাস্তা তৈরি করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা আরও ঘোষণা করেন, আসানসোলে একটি শ্রম ভবন গড়া হবে। এ দিন ভবনের শিলান্যাস করে তিনি জানান, এই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তা দূর করার জন্য শ্রমিক-কর্মীদের কলকাতায় ছুটতে হয়। মমতা বলেন, “তাঁদের আর কলকাতায় ছুটে যেতে হবে না। নানা রকম প্রকল্প ঘোষণার ফাঁকে মমতা বলেন, “আসানসোলকে কী না দিয়েছি!”
তিনি আত্মতৃপ্তির সঙ্গে এ কথা বললেও সভার পরে স্থানীয় শিল্পোদ্যগী ও ব্যবসায়ীদের খানিকটা অখুশিই দেখায়। গত কয়েক মাসে এই খনি-শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন সংস্থায় নানা জুলুমের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও ঠিকাদার খুন, কোথাও আবার তোলাবাজির অভিযোগে কারখানা গোটানোর ভাবনা কর্তৃপক্ষেরএকের পর এক এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এমন কোনও বার্তা দেননি যা শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করবে। ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এখানকার শিল্প পরিকাঠামোর উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার ঘোষণা আশা করেছিলাম। নিদেনপক্ষে এখানকার শিল্পতালুকগুলির উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলবেন বলে ভেবেছিলাম। আমরা হতাশ।”
রাজেন্দ্রপ্রসাদবাবু আরও জানান, তাঁরা ভেবেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর এই সরকারি কর্মসূচিতে হয়তো আসানসোলকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু, সেই আশাও পূরণ হয়নি। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আসানসোলকে অবিলম্বে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত বলে দাবি করেছেন আসানসোল বণিকসভার সদস্যেরাও। এ দিন এই বণিকসভার পক্ষ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি দাবি জানানো হয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি সুব্রত দত্ত। তিনি বলেন, “সব ক’টিই আসানসোলের উন্নয়ন সংক্রান্ত।” তাঁর দাবি, আসানসোল শিল্পাঞ্চল হলেও এখানে উন্নত শিল্পতালুক নেই। যেটি আছে সেখানে পরিকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে না। তাঁরা একটি উন্নত শিল্পতালুক গড়ার দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy