Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

রোজ লুঠপাট কারখানার জিনিস, হিমসিম কর্তারা

বারো বছর উৎপাদন বন্ধ হিন্দুস্তান কেবলসে। ভোট এলেই আশ্বাস মেলে, এ বার একটা ব্যবস্থা হবে। অধিগ্রহণের কথাবার্তা শুরু হলেও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি এখনও। কী পরিস্থিতি কারখানার। কী বলছেন শ্রমিক-কর্মীরা। আজ শেষ পর্ব।কেবলস কারখানা অধিগ্রহণের প্রশ্নে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড শর্ত দিয়েছিল, কারখানার যাবতীয় সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। সে জন্য যা করণীয়, তা করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এই কাজটিই এখন কার্যত সব চেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। কারণ, প্রতি দিন কারখানার ভিতরে-বাইরে জিনিসপত্র লুঠ করছে দুষ্কৃতিরা। এই লুঠপাট ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছেন আধিকারিকেরা।

ঝোপঝাড়ে ভরা আবাসন এলাকা।—নিজস্ব চিত্র।

ঝোপঝাড়ে ভরা আবাসন এলাকা।—নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

কেবলস কারখানা অধিগ্রহণের প্রশ্নে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড শর্ত দিয়েছিল, কারখানার যাবতীয় সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। সে জন্য যা করণীয়, তা করতে হবে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এই কাজটিই এখন কার্যত সব চেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। কারণ, প্রতি দিন কারখানার ভিতরে-বাইরে জিনিসপত্র লুঠ করছে দুষ্কৃতিরা। এই লুঠপাট ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছেন আধিকারিকেরা।

কেবলস কারখানার রূপনারায়ণপুর ইউনিটের আধিকারিকেরা জানান, এক সময়ে এখানে ১৭৭ জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। গত কয়েক বছরে সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭ জনে। জনা ১২ বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীও আছেন। কিন্তু এত কম সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী বস্তুত কাখানার ছাউনি, যন্ত্রাংশ, আবাসন এলাকার দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট নন। আধিকারিকেরা জানান, প্রতি রাতে দুষ্কৃতীরা দল বেঁধে কারখানার পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকছে। কারখানার ছাউনি, লোহার পাত কেটে নিচ্ছে যথেচ্ছ। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও মোটর কেটে নিচ্ছে। এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, ইদানীং দুষ্কৃতীরা কারখানার পাঁচিলের একাধিক জায়গা ভেঙে ফেলেছে। সেখান দিয়েই অবাধে তারা ভিতরে ঢুকে পড়ছে।

কারখানায় কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা জানালেন, এই দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় এত বেশি থাকে যে জনাকয়েক নিরাপত্তাকর্মীর পক্ষে তাদের মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। দুষ্কৃতীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। অভিযোগ, তারা নিরাপত্তাকর্মীদের দিকে নির্দ্বিধায় গুলিও চালিয়ে দেয়। কারখানার এস্টেট অফিসার হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, সম্প্রতি সাড়ে তিন কিলোমিটারের একটি জলের পাইপ চুরি করে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ফলে, ব্যাহত হয়েছে জল সরবরাহ। লোয়ার কেশিয়া এলাকায় অজয় নদে পাম্প বসিয়ে জল তুলে এই পাইপের মাধ্যমেই কারখানা ও আবাসন এলাকায় সরবরাহ করা হত। কারখানা কর্তৃপক্ষ আরও জানান, এখানকার পাম্প হাউসে জল তোলার জন্য পাঁচটি উচ্চক্ষমতার মোটর ও একটি জেনারেটর আছে। চোরেরা সেগুলিও একাধিক বার চুরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীদের বাধায় সফল হয়নি। তবে চুরির বহর যে ভাবে বাড়ছে তাতে কত দিন সেগুলি রক্ষা করা সম্ভব তা নিয়ে সন্ধিহান আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, কারখানার এই সব জিনিসপত্র চুরির বিষয়টি অর্ডন্যান্স বোর্ডের কর্তারা ইতিমধ্যে জেনেছেন। তাঁরা কেব্লস কর্তৃপক্ষকে চুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন।

শুধু কারখানার ভিতরে নয়, আবাসন এলাকাতেও দুষ্কৃতীরা যথেচ্ছ লুঠপাট করছে বলে অভিযোগ। ফাঁকা আবাসনগুলির লোহার গ্রিল, দরজা, জানালা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আবাসিকেরা সে সব জানলেও প্রাণের ভয়ে কিছু বলতে পারেন না। এস্টেট অফিসার হরিশঙ্করবাবু বলেন, “গত আট মাসে এ রকম আটটি চুরির অভিযোগ আমরা দায়ের করেছি।” আধিকারিকেরা জানান, বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতীর নামও অভিযোগে জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক বার অভিযান চালানো হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে লোহার পাইপ-সহ বেশ কিছু সরঞ্জাম।

কারখানার অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কী ভাবে জিনিসপত্র রক্ষা করা যায়, সে নিয়েই এখন চিন্তায় কর্তৃপক্ষ। কবে সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়, কর্মী থেকে আধিকারিক, সকলেই তাই এখন সে দিকেই তাকিয়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

hindusthan cables asansol sushanta banik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy