Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

মহকুমায় দমকল কেন্দ্র একটিই, মুশকিলে দূর ব্লকের বাসিন্দারা

কখনও বাড়িতে, কখনও দোকান-বাজারে আবার কখনও খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অথচ কাছাকাছি দমকল কেন্দ্র না থাকায় অল্প আগুনেই অনেক ক্ষতি হয়ে যায়, এমনই অভিযোগ কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের বাসিন্দাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

কখনও বাড়িতে, কখনও দোকান-বাজারে আবার কখনও খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অথচ কাছাকাছি দমকল কেন্দ্র না থাকায় অল্প আগুনেই অনেক ক্ষতি হয়ে যায়, এমনই অভিযোগ কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের বাসিন্দাদের।

মহকুমার পাঁচটি ব্লক মিলিয়ে লোকসংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি। অথচ দমকল কেন্দ্র মাত্র একটি। কালনা শহর ঘেঁষা জিউধরা এলাকায় ওই কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। অথচ ওই কেন্দ্র থেকে ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে অসংখ্য গ্রাম রয়েছে, যেগুলি দমকল পরিষেবা পায় না বললেই চলে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, গত মাস ছয়েকের মধ্যে হৃষি, মুরাগাছা, মহাদেবপুর, কাদাপাড়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বহু বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে নগদ টাকা, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিবারই আগুন নেভানোর কাজে এগিয়ে আসতে হয় তাঁদের। আর দমকলের গাড়ি যখন এসে পৌঁছয় ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে। আবার কখনও কখনও আগুন নেভানোর পরেও দমকলের গাড়ি এসে পৌঁছয়। কিন্তু দমকলের গাড়ি পৌঁছতে এত দেরি হয় কেন? বাসিন্দারা জানান, পনেরো কিলোমিটারের মধ্যে দমকল কেন্দ্র বলতে নদিয়ার নবদ্বীপে। ভিন জেলা হওয়ায় কর্মীরা অনেকসময়েই আসতে অনীহা দেখান বলে বাসিন্দাদের দাবি। তাছাড়া অনেকসময়েই ওই জেলাতেই কোথাও আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন কর্মীরা। এছাড়া রয়েছে কাটোয়া ও কালনা কেন্দ্র। ফোন করার পরে ওই দুই কেন্দ্র থেকেই ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কমবেশি দেড় ঘণ্টা লেগে যায় বলে জানান বাসিন্দারা। ততক্ষণে আগুন ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলার বাসিন্দা সহিদূল শেখ জানান, এলাকায় পাইকারি বাজার, রাইস মিল, কলেজ-সহ নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাস সাতেক আগে পারুলিয়া বাজারে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে যায়। কয়েক লক্ষ টাকার সব্জি ও অন্যান্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় দমকল কেন্দ্র থাকলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যেত। ক্ষতিও কম হত। সহিদূল শেখ আরও জানান, মেড়তলা, ঝাউডাঙা এলাকায় বেশ কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে ভাগীরথী পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। একে তো ব্লকে দমকল নেই, চার উপর ভিন জেলা থেকে আসা দমকল বাহিনীকে যদি নদী পেরিয়ে যেতে হয় তাহলে আরও বেশি সময় লেগে যাবে বলেও তাঁর দাবি। পাটুলির এক চাষি হরিপদ শেখ বলেন, “বহু বছর ধরে দমকল কেন্দ্র গড়ার আবেদন জানাচ্ছি। কোনও লাভ হয়নি।”

পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিধানসভা-সহ সরকারি নানা জায়গায় জানিয়েছেন। তার ফলে সম্প্রতি দমকল কেন্দ্র গড়ার জন্য ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে পলাশফুলি মৌজায় একটি জমিও কেনা হয়েছে বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যে বিঘে খানেকের ওই জমির কাগজপত্র দমকলের ডিজি-র হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে। তপনবাবুর দাবি, যেখানে দমকল কেন্দ্র গড়া হচ্ছে সেখান থেকে কালনা ও কাটোয়া দমকল কেন্দ্রের দূরত্ব ৩১ কিলোমিটারেরও বেশি। এছাড়া ওই কেন্দ্র থেকে মন্তেশ্বরের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও পরিষেবা দেওয়া যাবে বলে তাঁর দাবি।

পূর্বস্থলীতে দমকল কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। তিনি বলেন, “পূর্বস্থলী ১ ব্লকে দমকল কেন্দ্র গড়ার জন্য জমির খোঁজ চলছে। ওই কেন্দ্র চালু হলে মানুষের অনেকদিনের দাবি পূরণ হবে।”

কালনা মহকুমা দমকল কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, “মহকুমায় একটিই দমকল কেন্দ্র। ফলে আমরা সবসময় ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারি না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্লকের কাছাকাছি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। একাধিক কেন্দ্র হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” কালনা দমকল কেন্দ্রের ওসি অরিন্দম দেবনাথ বলেন, “পূর্বস্থলীতে একটি দমকল কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। জমি হস্তান্তরও হয়ে গিয়েছে। টাকা অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।” এছাড়া মেমারি পুরসভার জায়গাতেও একটি দমকল কেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। অরিন্দমবাবুর দাবি, ওই কেন্দ্র থেকে কালনা ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা উপকার পাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

fire brigade kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy