নিরাপত্তায় কেবল রাজ্য পুলিশ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
দাবি মতো বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হচ্ছে না বলে মঙ্গলবারই অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। বুধবার ভোটের দিনও হাতে গোনা কিছু বুথে দেখা মিলল বাহিনীর। বেশির ভাগ বুথেই নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলালেন রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে বুথ দখল, রিগিং থেকে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
এ দিন বিকেলে কুলটির যশাইডিতে গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূল কর্মী। কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, যশাইডি গ্রামে দু’টি বুথে দুপুরে এক দল ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থক বুথ দখলের চেষ্টা করে। তাঁদের কর্মীরা বাধা দিলে বচসা হয়। পুলিশ গিয়ে তখনকার মতো দু’পক্ষকে সরিয়ে দিলেও কিছু ক্ষণ পরে গ্রামের শেষ প্রান্তে ফের দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী রামু চক্রবর্তীকে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীরা বেধড়ক মারধরের পরে ডান পায়ে গুলি করে পালায়। জখম রামুবাবু বরাকরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি।
বার্নপুর, বারাবনি এলাকা থেকে এ দিন মাঝে-মাঝেই বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সকাল থেকে বার্নপুরের সাতাডাঙাল প্রাথমিক স্কুলের ১২, ১৩ নম্বর বুথে এক দল বহিরাগত ঢুকে ছাপ্পা দিচ্ছিল। ঘণ্টাখানেক পরে বুথ থেকে বেরিয়ে চিৎকার জোড়েন বিরোধীরা। কিছুক্ষণ পরে সেক্টর অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে বহিরাগতদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়।
বার্নপুরের ছোট-দিঘারি প্রাথমিক স্কুলের চারটি বুথে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। সেখানে নীল টি-শার্ট পরিহিত এক যুবকের হাতের তর্জনীতে দগদগে কালির ছাপ। প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে বলেন, “অনেক বার ভোট দিয়েছি।” তার পরেও তাঁকে বেশ কিছু বুথে দেখা গিয়েছে। এক বার একটি বুথে পুলিশ তাঁকে শাসাচ্ছে, এ দৃশ্যও দেখা যায়।
বার্নপুরের বয়েজ ও প্রাইমারি স্কুলের আটটি বুথেও সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ, বয়েজ হাইস্কুলের ৬৭ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেল প্রায় ২০ জনের একটি দল বুথের মধ্যে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা সকলেই বহিরাগত। বিরোধী এজেন্টদের অভিযোগ, তারা অবাধে ছাপ্পা দিচ্ছে। বহিরাগতদের ছবি তুলতে গেলে বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল নেত্রী রাখী মুখোপাধ্যায় তেড়ে আসেন। তিনি বলেন, “অবস্থা ঠান্ডা আছে, গরম করার চেষ্টা করবেন না।” গোটা বিষয়টি নিয়ে বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অঞ্জন গুঁই কিছু বলতে চাননি। সেখানকার মাইক্রো অবর্জাভার সুনীলকুমার মণ্ডল বলেন, “আমি সে রকম কিছু দেখিনি, জানি না।” প্রায় আধ ঘণ্টা এই অবস্থা চলার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি দল এসে বহিরাগতদের হঠিয়ে দেয়।
দুপুর দেড়টা নাগাদ আবার প্রায় ৫০ জনের একটি দল সেখানে ঢোকে। ৬৪ নম্বর বুথটি প্রায় দখল হয়ে যায়। সিপিএমর এজেন্ট বাধা দিতে গেলে গোলমাল পাকে। সিপিএমের স্থানীয় পার্টি অফিস থেকে জনা ত্রিশের একটি দল পৌঁছলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে পৌঁছে প্রথমে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কাজ না হওয়ায় লাঠি চালায় পুলিশ। সুব্রতবাবু অবশ্য বলেন, “লাঠি চালানো হয়নি। পুলিশ তাড়া করে সরিয়ে দিয়েছে।” এই বুথে খানিকক্ষণ পরে ভোট দিতে আসেন অভিষেক ঝা নামে এক জন। দেখা যায়, তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে। বার্নপুর নর্থ রোডের বাসিন্দা অভিষেক উপস্থিত এক অফিসারকে বলেন, “আমি ভোট দিতে চাই।” তাঁকে টেন্ডার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বহিরাগতেরা অবাধে ঢোকায় সেখানকার প্রিসাইডিং অফিসার অনুপকুমার ঘোষের ক্ষমতা ছাঁটাই হয়। আরও এক জন প্রিসাইডিং অফিসারকে বসানো হয়।
বার্নপুর ওয়াগন কলোনির বারি বিদ্যালয়েও এ দিন প্রচুর ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। সেখানে চারটি বুথে শুধু রাজ্য পুলিশ ছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার আবেদন জানালেও পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বারাবনির হোসেনপুরের ১৫০ নম্বর, পুটুলিয়ার ১৫১ নম্বর,কাটাপাহাড়ির ১৭১, ১৭২ নম্বর, ইটাপাড়ার ২৪২ নম্বর বুথে সিপিএমর এজেন্টদের মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বারাবনির গৌরবাজার গ্রামের আদিবাসী ভোটারদের বুথে আসতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
ভোট শেষ হওয়ার পরে নানা এলাকা থেকে অশান্তির খবর মিলেছে। রাতে বার্নপুরের ব্যাঙ্ক রোডেও সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। সালানপুরের কল্যা গ্রামে কংগ্রেসের এজেন্টের বাড়িতে ভাঙচুর ও তাণ্ডবের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত জেলাশাসক অমিত দত্ত জানান, এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy