কালনার গোপালদাসপুরে চলছে সভা।—নিজস্ব চিত্র।
তিন গ্রামে রাতের আঁধারে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একের পর প্রতিনিধি দল আসছিল কালনায়। তবে শুরু থেকেই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা মারধরের নালিশ করছিল তৃণমূল। রবিবার একটি সভারও আয়োজন করে তাঁরা। কিন্তু সেখানেই দলের একাধিক নেতার কুকথা বলার ইতিহাসে জুড়ে গেল কালনা ২ ব্লক সভাপতি প্রণব রায়ের নাম।
হামলার নামে সিপিএম নাটক করছে, এই অভিযোগে সভা করতে গিয়ে প্রণববাবু গোপালদাসপুর গ্রামে বলেন, “আমাদের এখানে মারা হলে আমরা বৈদ্যপুরে মারব।” সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য মঞ্চে তাঁর পাশে থাকা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ মাইক কেড়ে নিয়ে প্রণববাবু আসলে হামলার কথা বলতে চাননি দাবি করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও নেতার মারমুখী মন্তব্য শুনে ততক্ষণে দলের কর্মী-সমর্থকদের হাততালি পড়তে শুরু করেছে।
কিছুদিন ধরেই ওই ঘটনা নিয়ে দু’দলের আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ চলছিল। সিপিএমের তরফে থানা ঘেরাও করা হয়, পথ অবরোধ করা হয়। দলের তিন বিধায়ককে নিয়ে একটি প্রতিনিধি দলও আসে। তার আগে মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ার ভারতী মুত্সুদ্দি নেতৃত্বে নাট্য এবং সাহিত্য জগতের পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধি দল ওই তিন গ্রামে যায়। তাঁরা ঘটনার রাতে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করে এসডিপিও এবং মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। এ দিন কালনার গোপালদাসপুর গ্রামের ওই সভায় শুরু থেকেই তিন গ্রামে সিপিএম কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাকে নাটক আখ্যা দেয় তৃণমূল। তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, সিপিএমই তাদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং দোষিদের যাতে গ্রেফতার না করা হয় তাই লোকজন এনে মিথ্যা নাটক করছে। যদিও সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। ওই তিন গ্রামে কি হয়েছে মানুষ জানেন। কারা নাটক করছে মানুষই তার জবাব দেবেন।”
তৃণমূল সূত্রে খবর একের পর এক প্রতিনিধি দল গ্রামে আসার ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ওই ঘটনার উপর ভর করে ব্লকে লড়াই আন্দোলনের জমি তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে সিপিএম। তারপরেই পাল্টা সভা করার প্রস্তুতি শুরু করে তৃণমূল। সভাস্থল হিসাবে বেছে নেওয়া গোপালদাসপুর গ্রামের সেই স্থান, যেখানে ১লা জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠান করা হয়। সভায় স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ এবং জেলা পরিষদের সভাপতি দেবু টুডুকে ডাকা হয়। শুরুতেই বক্তব্য রাখেন কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আলমগীর সাত্তার। তিনি বলেন, “১লা জানুয়ারি আমাদের অনুষ্ঠানের কাছাকাছি তারস্বরে মাইক বাজিয়ে একটি পিকনিক চলছিল। আমরা ওদের কাছে আধ ঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম, যাতে শান্তিতে বস্ত্র বিতরণ করা যায়। কিন্তু তারা কোনও কথা না শুনে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর চড়াও হয়। দলের প্রতিষ্ঠা দিবস হওয়ায় আমরা ঝুটঝামেলায় যাইনি।” এরপরেই বলতে ওঠেন কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়। তাঁর অভিযোগ, “যারা মারল তারাই অভিযোগ করছে মারধরের।” তিনি বলেন, “‘কয়েকজনকে আগের রাতে শিখিয়ে বাইরে থেকে লোক এনে নাটক করা হচ্ছে। আমাদের এখানে মারা হলে আমরা বৈদ্যপুরে মারব।” দলের কর্মী-সমর্থকেরা হাততালি দিলেও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন তাঁর পাশে বসা মন্ত্রী স্বপনবাবু। মাইক্রোফোন দ্রুত হাতে নিয়ে বলেন, “প্রণব কাউকে হুমকি দিচ্ছে এটা মনে করবেন না, বরং এই সভায় এত লোকজনের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিচ্ছে মানুষ সিপিএমের নাটকের কৌশল ভাল ভাবে নেয় নি।” পরে প্রণববাবুও বলেন, “আমাদের যদি অন্যায় ভাবে কেউ মারতে আসে তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এতে কোনও অন্যায় নেই।”
তৃণমূল নেতার কথা শুনে সিপিএমের স্বপনবাবুর কটাক্ষ, “তৃণমূলের সংস্কৃতির কথা জানতে বাকি নেই কারও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy