Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Witch Hunting

Bankura: মনসা পুজো করায় সামাজিক বয়কটের শিকার বাঁকুড়ার সোরেন পরিবার

বিজ্ঞান মঞ্চের বাঁকুড়ার সম্পাদক বলেন, “একুশ শতকে এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার। ডাইনি অপবাদ যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’’

মধ্যযুগীয় বর্বরতা!

মধ্যযুগীয় বর্বরতা! নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৪১
Share: Save:

অপরাধ বলতে, গ্রামের মোড়লদের নির্দেশ অমান্য করে বা়ড়িতে মনসা পুজো করা। সেই ‘অপরাধে’ ডাইনি তকমা দিয়ে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের কেন্দবনি গ্রামের কালীপদ সোরেনের পরিবারকে। ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় জরিমানা করা হয়েছে কালীপদর বোনেদের পরিবারকেও। টাকা দিতে না পারায় বোনেদের বাড়ি থেকে গবাদি পশু, আসবাব ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানোর অভিযোগ।

বাঁকুড়ার ২ নম্বর ব্লকের কেন্দবনি গ্রামের বাসিন্দা কালীপদ সোরেন। কিছুদিন আগে বাড়িতে মনসা পুজোর আয়োজন করেছিলেন কালীপদর স্ত্রী বালিকা সোরেন। তাতেই মোড়লদের গোসা হয়। ওই পরিবার, বিশেষ করে বালিকাকে ডাইনি তকমা দিয়ে একঘরে করার নিদান দেন তাঁরা। কয়েকদিন পর মোড়লরা ফিরে আসেন। এ বার অভিযোগ, একঘরে করার ফতোয়া দেওয়া সত্ত্বেও কালীপদর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে তাঁর বোনেদের পরিবার। এই অভিযোগে তাঁদেরও একঘরে করার নির্দেশ দেন মোড়লরা। সেই সঙ্গে বোনেদের পরিবারের উপর ৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। টাকা দিতে না পারায় চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে জরিমানার পরিমাণ। শেষ পর্যন্ত তা গিয়ে ঠেকে ২৫ হাজার টাকায়। ৫ হাজার টাকা দিতে যে পরিবার অপারগ, তারা ২৫ হাজার দেবেন কোথা থেকে! অভিযোগ, এর পরই বাড়িতে হামলা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় আসবাবপত্র, লুঠ করা হয় ছাগল, মুরগি। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের দ্বারস্থ হন কালীপদর খুড়তুতো দুই বোন সরস্বতী সোরেন ও শুকুরমনি সোরেন।

কালীপদ সোরেনের দাবি, “আমার স্ত্রী ডাইনি, এই অপবাদে পরিবারকে সামাজিক বয়কট করা হয়। আমার বাড়ি ভাঙচুরও হয়েছিল। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় আমার বোনেদের বাড়িতেও অত্যাচার করেছে গ্রামের মোড়লরা। সুবিচার চেয়ে আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।” কালীপদ সোরেনের খুড়তুতো বোন সরস্বতী সোরেন বলেন, “দাদার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে জানতে পেরে প্রথমে আমাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। না দেওয়ায় সে অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় পঁচিশ হাজারে। এর পর বহু কষ্টে বাড়িতে পালন করা মুরগী, ছাগল লুঠ হয়েছে। চূড়ান্ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”

অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন গ্রামের মোড়লরা। মোড়লদের অন্যতম নিমাই হাঁসদা বলেন, “একঘরে করা, জরিমানা করা বা মুরগি-ছাগল লুঠপাটের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ডাইনি অপবাদ দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা। আমরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন নই, যে কাউকে ডাইনি অপবাদ দেব। সমাজের কোনও কথাই ওই পরিবার শোনে না, তাই আমরা ওই পরিবারটির সঙ্গে কথা বলি না। এর বেশি কিছু না।’’

মানকানালি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চায়না ঘোষ বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। এই ভাবে কোনও পরিবারকে সামাজিক ভাবে বয়কট করে রাখা বরদাস্ত করা হবে না। দ্রুত দু’পক্ষকে ডেকে বিরোধ মেটানো হবে।’’

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক জয়দেব চন্দ্র বলেন, “একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার। ডাইনি অপবাদ যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। পাশাপাশি নির্যাতিতারা যাতে দ্রুত সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Witch Hunting bankura police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy