Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Murder

স্কুল ছুটির পর তুলে নেন ‘সত্যেনকাকু’! সেই গাড়িতেই রাতে শ্বাসরোধ করে খুন বাগুইআটির দুই ছাত্রকে

সত্যেন্দ্র গাড়ি করে দুই কিশোরকে নিয়ে রাজারহাটে একটি বাইক শোরুমে যান। কিন্তু বাইক নাকি পছন্দ হয়নি তাঁর। তাই শোরুম থেকে দু’জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ছোটে গাড়ি।

কী ভাবে খুন হলেন বাগুইআটির দুই ছাত্র।

কী ভাবে খুন হলেন বাগুইআটির দুই ছাত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৫৬
Share: Save:

দু’জনের বয়স মেরেকেটে ১৬ বছর। তারাই অপহৃত এবং খুন হল পরিচিতের হাতে। এই বয়সে কী এমন শত্রুতায় খুন হল বাগুআটির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুই অতনু দে এবং অভিষেক নস্কর? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। চলছে পুলিশি তদন্ত। তবে তারা কী ভাবে খুন হয়েছে, সে বিষয়ে যে খণ্ড খণ্ড তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর।

বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের ছাত্র ছিল অতনু এবং অভিষেক। দু’জনেই দশম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই স্কুল পড়ুয়া নিখোঁজ হয় গত ২২ অগস্ট। দু’দিন তাদের কোনও খোঁজ না পেয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ করে পরিবার। তাঁরা দাবি করেন, দু’জনকে অপহরণ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে অতনুর বাবা অভিযোগ করেন, তিনি বেশ কয়েক বার উড়ো ফোন পেয়েছেন। মেসেজও পেয়েছেন। দাবি একটাই— মুক্তিপণ। মুক্তিপণের অঙ্ক বিশাল না হলেও ‘অপহরণকারীরা’ নির্দিষ্ট কোনও জায়গা বলেনি। বরং বার বার বদলেছে মুক্তিপণের অঙ্ক।

এর মধ্যে গত ২৪ অগস্ট থেকে দুই কিশোরের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে বেশ কিছু তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, দুই কিশোরকে অচেনা কেউ নয়, ‘অপহরণ’ করেছে তাদের পরিচিতই।

সত্যেন্দ্র চৌধুরী। অতনুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর পুরনো সম্পর্ক। দুই বাড়ির প্রত্যেকে প্রত্যেকের পরিচিত। বেশ ঘনিষ্ঠ তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২২ অগস্ট স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে অতনু। ঠিক তখনই সত্যেন্দ্রর ফোন। তা কী কারণে অতনুকে ফোন করেছিলেন সত্যেন্দ্র? অতনুর পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, একটি বাইক কেনার জন্য সত্যেন্দ্রকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল দশম শ্রেণির পড়ুয়া অতনু। টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। অথচ বাইক আর কেনা হচ্ছে না। কিন্তু ওই দিন নাকি অতনুকে নিজেই ফোন করে বাইক কেনার জন্য ডাকেন সত্যেন্দ্র। বেশ খুশি মনেই বাড়ি থেকে বের হয় অতনু। সঙ্গে নেয় সমবয়সি তুতো ভাই অভিষেককে।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সত্যেন্দ্র গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। সেই গাড়িতেই দুই কিশোরকে নিয়ে রাজারহাটে একটি বাইক শোরুমে যান তিনি। কিন্তু বাইক নাকি পছন্দ হয়নি সত্যেন্দ্রের। তাই শোরুম থেকে দু’জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ছোটে গাড়ি।

বিধাননগর পুলিশের দাবি, ওই দিন রাতেই খুন করা হয় দুই তুতো ভাইকে। এ জন্য তারা ধৃত জনৈক অভিজিৎ বসুর বয়ান তুলে ধরেছে। তাঁকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, শুধু সত্যেন্দ্র, অতনু এবং অভিষেক নয়, ওই গাড়িতে ছিলেন আরও কয়েক জন। বাসন্তী হাইওয়ের উপর চলন্ত গাড়ির মধ্যে হঠাৎ দুই কিশোরের গলায় ফাঁস লাগানো হয়। খুন করা হয় দুই ছাত্রকে। তার পর, কিছু দূর এগিয়ে রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে ছুড়ে ফেলা হয় একটি দেহ। কিছু দূর এগিয়ে আরও একটি দেহ।

সোমবার অভিজিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সব থানা এলাকায় খোঁজ শুরু করে পুলিশ। বসিরহাট মর্গে তিনটি অশনাক্ত দেহের খোঁজ পায় তারা। যার মধ্যে দু’টিকে ওই দুই কিশোরের দেহ বলে অনুমান করে পুলিশ। এক জনকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি দেহ ন্যাজাট থানা এলাকায় পাওয়া যায় ২৩ অগস্ট। দু’দিন পর ২৫ অগস্ট হাড়োয়া থানা এলাকায় আরও একটি দেহ মেলে। কিন্তু অপহরণ? পুলিশ মনে করছে, খুনের পর স্রেফ কিশোরের পরিবারকে বিভ্রান্ত করতেই এই পথ নেন খুনিরা। দুই পড়ুয়াকে খুনের কারণ অবশ্য এখনও পরিষ্কার হয়নি। তার তদন্ত চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Baguiati Students Murder Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy