অরুন্ধতী রায়। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিরোধের সিনেমা। সাহিত্য থেকে যার গতায়াত খুব বেশি দূরে নয়। সিনেমা, সাহিত্য, কবিতা, গান— সবই তো আসলে একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ তেমনই ফিল্মের এক উৎসবে, কী ভাবে রাষ্ট্রের ফ্যাসিজ়মের বিরুদ্ধে গণশক্তিকে একজোট করা যায়, তার দিগ্নির্দেশ করলেন সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়।
পিপল্স ফিল্ম কালেকটিভের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কলকাতা পিপল্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর দ্বিতীয় দিনে, বৃহস্পতিবার এক আলোচনায় যোগ দিলেন অরুন্ধতী। উত্তম মঞ্চে বুকার প্রাইজ় বিজেতা সাহিত্যিক আলোচনা করলেন এই সময়ের লেখকের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। অরুন্ধতীর দাবি, এই সময়ে শব্দের মানে ইচ্ছাকৃত ভাবে বদলে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই জটিল যে, হয়তো কোনও সংখ্যালঘুর মৃত্যু ঘটলে তাঁকেই নিজের হত্যার দায়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হল।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কস্তুরী বসুর সঙ্গে লেখকের কথোপকথনের সময়ে গাজ়া-প্যালেস্টাইন সমস্যা, মণিপুর হিংসা, এক দেশ এক ভাষার মতো নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। উঠে
আসে ২২ জানুয়ারির রামলালার মন্দির উদ্বোধনের প্রসঙ্গটিও। তাকে ঘিরে দেশের উন্মাদনা এক গভীর বিপদের দিকে ইঙ্গিত করছে বলে জানান অরুন্ধতী।
অরুন্ধতী এ দিন মনে করিয়ে দেন, সংবাদমাধ্যমের কাজ সত্যকে সামনে আনা। কোনও মিথ্যা ভাষ্য তুলে ধরা নয়। তাঁর কথায়, ‘‘সাহিত্যিক, চিত্রনির্মাতা, শিল্পী— সকলেরই ভয় না পেয়ে নিজের কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন। ফাসিস্ত শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের কাজের মাধ্যমেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’’ তথ্যচিত্র নির্মাতাদের গুরুত্ব নিয়ে প্রথমেই আলোচনা করেন তিনি।
অরুন্ধতীর মতে, এক দেশ, এক ঈশ্বর, এক ভাষা, এক ধর্মের মতো ভয়াবহ একরৈখিক ভাবনায় দেশকে বেঁধে ফেলার বিপদ দেশবাসী এই মুহূর্তে অনুধাবন করতে পারছে না। কিন্তু তা ভারতের বহুমুখী সংস্কৃতির পরিসরকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সেই বিপদ থেকে বাঁচতে লেখক সাহসী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অরুন্ধতী বলছেন, ‘‘যখনই সাংবাদিকেরা ভাল কাজ করবেন, তখনই তাঁদের বিপদ বাড়বে। এটা জেনেই সত্যের জন্য কাজ করতে হবে।’’
লেখকের আলোচনায় চলে আসে কাশ্মীরের পেলেট গান আক্রান্ত সাধারণ মানুষের যন্ত্রণার কথা। অরুন্ধতী মনে করাচ্ছেন, কাশ্মীরে প্রেস ক্লাবের অস্তিত্ব নেই, বর্তমানে কাশ্মীরের কোনও খবর পাওয়া যায় না। তার পরেই তাঁর প্রশ্ন— ‘‘এই ভাবে কত দিন মানুষকে দমিয়ে
রাখা যাবে?’’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজ়ায় ক্রমাগত শিশুমৃত্যু, তা নিয়ে রাষ্ট্রের নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে কথা তোলেন লেখক। তাঁর মতে, এখনও পর্যন্ত এই দেশের কোনও বিশিষ্টজন এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কারণ, হয়তো তিনি ভয় পাচ্ছেন আমেরিকায় তাঁর সাহিত্যসভা বাতিল হয়ে যাবে। কিংবা হয়তো তাঁর সন্তানের বিদেশের উচ্চশিক্ষায় ফান্ডিং মিলবে না।
প্রশ্নোত্তর পর্বে লেখক টেনে আনেন ঠিক তার আগেই প্রদর্শিত দীপা ধনরাজের ‘ক্যয়া হুয়া ইস শহর কো’ তথ্যচিত্রটির। যেখানে প্রশ্ন করা হয়— যদি কোনও বাড়ির ঘরে আগুন লাগে, পাশের ঘরের মানুষটি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন কি? যদি এক ঘরে কারও মৃতদেহ পড়ে থাকে, পাশের ঘরে কেউ গান গাইতে পারেন কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy