Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Himalaya

দেশের রক্ষী হিমালয় রক্ষায় ঐক্যের আহ্বান

Atul Sati

অতুল সতি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৩ ০৯:১২
Share: Save:

শুধু পরিবেশ নয়, কেদার-বদ্রীতে আবহমান লোকবিশ্বাস, তীর্থের প্রকৃত মহিমাও ধ্বস্ত হচ্ছে বলে আক্ষেপ করলেন ‘জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি’র সভাপতি অতুল সতি। রবিবার কলকাতার এক সভায় তিনি বলেন, “তীর্থযাত্রা বলতে কখনওই স্রেফ একটি মূর্তির প্রতি ভক্তির প্রকাশ বোঝায় না। তা-ও ভিড়ের চাপে কেদার, বদ্রীতে সেই মূর্তিও ভাল ভাবে দেখাই আজকাল মাথায় ওঠে। তীর্থযাত্রা মানে স্থানীয় নদী, প্রকৃতি, পাহাড়, জড়িবুটি— সব কিছুর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ। আজকের ভারতে এর মানেটাই ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ব্যবহার করে দেশে পুঁজির দাপট চলছে এবং তাতে প্রকৃতি-পরিবেশ তছনছ করে জনজীবনে বিপদ নেমে আসছে কী ভাবে, সেটাই এ দিন বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করেন অতুল। হেলিকপ্টারে বসে তীর্থযাত্রার কড়া সমালোচনা করে অতুল বলছিলেন, ‘‘নিমেষে কপ্টারে কেদার, বদ্রীর উচ্চতায় পৌঁছে অনেকেই হৃদ্‌রোগে মারা গিয়েছেন। কারণ, সমতল থেকে পাহাড়ে ধাতস্থ হওয়ার সময়টুকুও পাননি তাঁরা।” এ-হেন ‘হাইটেক তীর্থ সফরে’ স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়টুকুও ঘটছে না অনেকের। অতুল বলছিলেন, ‘‘উত্তরখণ্ডের পাহাড়ি বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁদের ঘরের লোক মা নন্দা তথা নন্দাদেবীর সম্পর্কটাও অনেকের অজানা। এ এক ধরনের ভালবাসার, ঝগড়ার সম্পর্ক। আবার কেদার, বদ্রীর ঐতিহ্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতিও মিশে। পুঁজির হাত ধরে এখন ওই পরিবেশে ভারতের মূল স্রোতের দেবতা রাম, হনুমানদেরও চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

জোশীমঠের বাসিন্দা অতুলের নিজের বাড়িও সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তবু তিনি নিজের বাড়িতেই থাকছেন। পুনর্বাসনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অস্থায়ী শিবিরের বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে। তাঁর অভিযোগ, এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির ভোটমুখী রাজনীতিতে পরিবেশের বিষয়টি প্রাধান্য পায় না। তবে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে ২০২১ সালের দুর্যোগের পরে বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। অতুলের বিশ্বাস, “২০২৪-এর ভোটে কয়েকটি জায়গায় পরিবেশের দিকটি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠবে।” জোশীমঠের আন্দোলনে হিমাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিমের পরিবেশকর্মীরাও যোগ দিয়েছিলেন। যেটাকে ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছেন অতুল। হিমালয় সারা দেশের রক্ষী। সেই হিমালয় রক্ষায় সর্বজনকে দায়বদ্ধ করার আহ্বান জানাল এ দিনের সভা। অতুলের কথায়, “ভুয়ো উন্নয়নের বুলডোজ়ারে দেশের ধারক হিমালয় সর্বত্র বিপর্যস্ত। এর বিরুদ্ধে সক্রিয় পরিবেশকর্মীরা মিলে ‘প্রেশার গ্রুপ’ গড়ে তুলছি। পারস্পরিক যোগাযোগের জায়গাও তৈরি হচ্ছে।”

‘পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ’ নামে একটি মঞ্চের উদ্যোগে উত্তরাখণ্ডের পটভূমিতে প্রকৃতির প্রতি অনাদর নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয় এ দিনের সভায়। নির্মল চন্দরের পরিচালনায় ‘মোতি বাগ’ নামে তথ্যচিত্রটি অস্কারেও গিয়েছিল। তার আগে কস্তুরী বসুর সঙ্গে আলাপচারিতায় পাহাড় ঘিরে বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প কাটাছেঁড়া করেন অতুল। জোশীমঠের কাছেই চিন সংলগ্ন মানা গ্রামকে হঠাৎ ‘ভারতের প্রথম গাঁ’ আখ্যা দিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চার ধাম প্রকল্প, ঋষিকেশ থেকে কর্ণপ্রয়াগে রেললাইন বা বদ্রীনাথের নদীতট সাজানোর নামে ঘোর বিপদ ডেকে আনার কথা সভায় বলেন অতুল। এর আগে ২০০৩-০৪ সালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও জলস্তর নামতে শুরু করেছিল। অতুল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নিষেধ সত্ত্বেও রাস্তা চওড়া করার জন্য হিমালয়কে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে। রেল বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ধাক্কায় নদীর গতিপথ পাল্টাচ্ছে। টানেল গড়তে বিস্ফোরণের ফলে ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে। জোশীমঠের লোকজন সাবধান করে দেওয়া সত্ত্বেও শোনেনি সরকার।”

অন্য বিষয়গুলি:

Himalaya Joshimath Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy