বৃহস্পতিবার রাতে জয়নগরে হামলার পরে বিধায়কের গাড়ি ।
প্রায়ই তিনি এলাকার একটি পেট্রল পাম্পের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দোকান থেকে চা খেতেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে যাননি। ছিলেন কাছের দলীয় কার্যালয়ে। তাঁর কালো স্করপিও গাড়িটি ওই পাম্পে ঢুকছিল তেল ভরতে। তখনই গাড়ি ঘিরে ফেলে মোটরবাইকে চড়ে আসা এক দল দুষ্কৃতী। এলোপাথাড়ি ছোড়া হয় বোমা, গুলি। ঘটনাস্থলেই মারা যান গাড়ির চালক-সহ তিন জন।
এ দিন রাত পৌনে ৭টা নাগাদ জয়নগরের দুর্গাপুর পেট্রল পাম্পে ওই হামলায় বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস। তাঁর দাবি, ‘‘রোজ ওখানে গিয়ে চা খাই। দুষ্কৃতীরা আমাকেই মারতে এসেছিল। কপালজোরে বেঁচে গিয়েছি।’’ তবে ওই দুষ্কৃতীরা কারা, তা খোলসা করেননি বিধায়ক। রাত পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগও জানাননি। তবে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, বিজেপি-সিপিএম মিলে বাইরে থেকে লোক এনে এই খুন করিয়েছে। বিরোধীরা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছে।
পুলিশ জানায়, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বিধায়কের গাড়ির চালক মনিরুদ্দিন হক মোল্লা ওরফে সেলিম খান ওরফে বাবু (৩৫) এবং পাম্পে থাকা তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর জয়নগর টাউন শাখার সভাপতি সারফুদ্দিন খান (৩০)। নিহত তৃতীয় জনের নাম আমিন আলি সর্দার। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তিনি কোনও কাজের জন্য সারফুদ্দিনের কাছে এসেছিলেন।
নিহত তৃণমূল নেতা সারফুদ্দিন খান (নীচে বাঁ দিকে) এবং চালক মনিরুদ্দিন ওরফে সেলিম খান ওরফে বাবু। ছবি: সুমন সাহা
ঘটনার কথা জানা মাত্র বারুইপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই পেট্রল পাম্পে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে। ওই ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে, নবান্ন সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলার মোকাবিলায় যে ধরনের তৎপরতা প্রত্যাশিত, ওই এলাকায় তাতে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে তিনটি পুলিশ জেলায় ভাগ করা হয়েছে। তার পরেও এই ঘটনা ঘটায় চিন্তিত রাজ্য প্রশাসন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা বা দূরে কোথাও যাওয়ার না-থাকলে প্রতি দিন সকালে গাড়িতে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যান বিশ্বনাথবাবু। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ বারাসতে। এ দিনও সকালে তিনি গাড়িতে বের হন। সঙ্গে ছিলেন সহকারী পাঁচু প্রামাণিক এবং এক নিরাপত্তা কর্মী। প্রথমে জয়নগর-১ ব্লক অফিসে যান। দুপুরে কুলতলিতে তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। বিকেলের পরে যান জয়নগর-২ ব্লক অফিসে। সেখানে বিডিও-র সঙ্গে তাঁর আলোচনা ছিল। সে সব শেষ করে বিধায়ক যান বহড়ু এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে। বিশ্বনাথবাবু গাড়ি থেকে নামতে নিরাপত্তা কর্মীও তাঁর সঙ্গে যান। সহকারীকে তিনি পাঠান কাছেই বাড়ি থেকে মাফলার আনতে। আর গাড়ি নিয়ে চালক চলে যান তেল ভরতে। তখনই ওই ঘটনা।
ঘটনার পিছনের কারণ নিয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে না-পারলেও বিরোধীরা মনে করছে, এটা স্রেফ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম সম্পাদক শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লেগে রয়েছে। ওদের সাংসদ-বিধায়ককে তাই নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে ঘুরতে হয়। এখানে বিরোধীদের কোনও ভূমিকা নেই।’’ জেলা (পূর্ব) বিজেপি সভাপতি সুনীপ দাসও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই ঘটনার পিছনে দায়ী করেছেন। এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরুণ নস্করও বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দলকে যে ভাবে রাস্তায় একের পর এক খুনের রাজনীতিতে নামিয়ে এনেছে, তাতে জয়নগরের সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এর আগেও খুনের ঘটনা ঘটেছে।’’ জেলা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক সুজিত পাটোয়ারি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এই খুনের ঘটনা ঘটল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy