Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
TMC

জয়নগরে তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি-বোমা, নিহত তিন

আততায়ীদের ছোড়া এলোপাথাড়ি গুলি এবং বোমার আঘাতে খুন হন বিধায়কের গাড়ির চালক, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা এবং এক পথচারী। বিধায়ককে পার্টি অফিসে নামিয়ে পাশেই একটি পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে গিয়েছিলেন গাড়ির চালক।

বোমা ও গুলিতে ক্ষতিগ্রস্থ বিধায়কের গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

বোমা ও গুলিতে ক্ষতিগ্রস্থ বিধায়কের গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:০৮
Share: Save:

অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন তৃণমূল বিধায়ক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জয়নগরের বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি-বোমা চালায় দুষ্কৃতীরা। বিধায়ক ঘটনার কয়েক মিনিট আগেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন পাশের পার্টি অফিসে।

আততায়ীদের ছোড়া এলোপাথাড়ি গুলি এবং বোমার আঘাতে খুন হন বিধায়কের গাড়ির চালক, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা এবং এক পথচারী। বিধায়ককে পার্টি অফিসে নামিয়ে পাশেই একটি পেট্রোল পাম্পে তেল ভরতে গিয়েছিলেন গাড়ির চালক। তখনই সেই গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিন জন।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ নিশ্চিত যে বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসই মূল টার্গেট ছিলেন। বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস কয়েক মাস ধরেই একটি ভাড়ার গাড়ি ব্যবহার করছিলেন। এ দিন সকালে অন্য দিনের মতোই ওই ভাড়ার গাড়ি চেপে বেরিয়েছিলেন বিধায়ক। নিজের বিধানসভা ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক এবং দলীয় অনুষ্ঠান করে তিনি সন্ধ্যায় বহরুতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছন।

হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে মৃতদেহ।—নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বনাথবাবু নিজেই বলেন যে, প্রতি দিনই তিনি ওই দলীয় কার্যালয়ে যেতেন। সেখানে পৌঁছে ওই পেট্রোল পাম্পের উল্টো দিকেই একটি চায়ের দোকানে চা খান। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।

আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সভা বাতিল, কবে আসতে পারেন মোদী? অন্ধকারে বিজেপি

এ দিন সন্ধ্যায় বহরুতে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছনোর পর তিনি সোজা কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে যান। অন্য দিনের মতো চায়ের দোকানে যাননি। তত ক্ষণে দলীয় কার্যালয় থেকে কয়েকশো মিটার দূরে পেট্রোল পাম্পে বিধায়কের গাড়ি নিয়ে তেল ভরতে যান গাড়ির চালক সেলিম খান ওরফে বাবু।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাড়ি পেট্রোল পাম্পে ঢোকার আগেই পাশের গলি থেকে কয়েক জন যুবক ছুটে আসে। তারা এলোপাথাড়ি বোমা মারতে শুরু করে। তার পরই গাড়ি থামিয়ে ঘিরে ধরে দুষ্কৃতীরা। গাড়ির চালক কিছু বোঝার আগেই শুরু হয়ে যায় গাড়ি লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান গাড়ির চালক বাবু।

এই সেই পেট্রল পাম্প।—নিজস্ব চিত্র।

ইতিমধ্যে গাড়ির দিকে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং দলের জয়হিন্দ বাহিনীর ব্লক সভাপতি সরফুদ্দিন। দুষ্কৃতীরা তাঁকে দেখেই গুলি ও বোমা মারতে শুরু করে। ওখানেই লুটিয়ে পড়েন সরফুদ্দিন। তত ক্ষণে গুলি-বোমার আওয়াজ শুনে বহরু পার্টি অফিস থেকে ছুটে আসেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। বিশ্বনাথ বলেন, ওই সময় এক পথচারী ভয় পেয়ে পালাচ্ছিলেন। অন্য দিকে আততায়ীরাও বোমা মারতে মারতে পালাতে থাকে। তার মধ্যেই গুলি এবং বোমার আঘাতে প্রাণ হারান ওই পথচারী। নিহত পথচারীর নাম আমিন সর্দার। বিধায়ক নিজেও স্বীকার করেছেন যে তিনিই আততায়ীদের টার্গেট ছিলেন। কিন্তু অন্য দিনের মতো তিনি চা খেতে না যাওয়ায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি, কারা এর পেছনে রয়েছে। তবে বিরোধীরা দাবি করেছে, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে। এসএউসি নেতা তরুণ নস্কর বলেন, “দলের নিজেদের মধ্যে লড়াইতেই এই শুটআউট, খুন।” একই কথা বলেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। তিনি বলেন, “বিধায়ক ঘনিষ্ঠ যে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সরফুদ্দিন খুন হয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ রয়েছে। পুরোটাই তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলাফল।”

আরও পড়ুন: তারিখ পিছলেও রথযাত্রা হবেই, লালবাজারে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বললেন দিলীপ ঘোষ

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশ সুপার-সহ শীর্ষ পুলিশকর্তারা। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পেট্রোল পাম্প থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই ফুটেজে গোটা ঘটনা ধরা পড়েছে। ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

গোষ্ঠীকোন্দলের কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সিপিএমের আমল থেকে দুর্বৃত্তদের অত্যাচার শুরু হয়েছিল। সেই দুর্বৃত্তদের অত্যাচারের শিকার আমাদের কর্মীরা। যারাই করুক তারা দুষ্কৃতী। আমরা অবিলম্বে আততায়ীদের গ্রেফতারের দাবি করছি।”

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Leader Jaynagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy