ছবি পিটিআই।
করোনাকালে প্রথম বড়দিনের শিকড়ের টানেই শক্তি খুঁজল কলকাতার গির্জার সমাবেশ। শুক্রবার রাজ্য জুড়ে বড়দিনের আমুদে মেজাজ আগের বারের থেকে কম হলেও একেবারে ঠান্ডা হয়নি। কিন্তু সেন্ট পলের ক্যাথিড্রালে চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া-র কলকাতা ডায়োসিসের বড়দিনের জমায়েত দুর্যোগ পর্বে সংযত জীবন যাপনের পক্ষেই সওয়াল করেছে।
শতাব্দীপ্রাচীন বিশপস কলেজের অধ্যাপক স্বরূপ বর বলছিলেন, ‘‘প্রথম ক্রিসমাসের কথা একবার মনে করুন। তখন সেখানে নবজাতক শিশু, মা মেরি, জোসেফ ছাড়া শুধু রাখালেরা উপস্থিত ছিলেন। তাই বড়দিনের উৎসব, হুল্লোড়টাই ক্রিসমাস নয়। বাইবেল বলছে, জিশু দৃঢ়চেতা হলেও সাদাসিধে অনাড়ম্বর স্বভাবের মানুষ ছিলেন। সেই জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই এই দুঃসময়ে উদ্যাপন নিচু তারে বাঁধা থাকুক।’’ এ বছর অনেক গির্জাই বচ্ছরকার পিকনিক, উৎসব, অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এই নমুনা মেলে ধরে বর্ষবরণের উৎসবেও মাতামাতি কমাতে বলেছেন তাঁরা।
গির্জায় বড়দিনের বার্তা প্রতি বছরই দেশকালের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক বোধের জন্ম দেয়। এ বছরও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। গত বছর কলকাতা ডায়োসিসের বিশপ পরিতোষ ক্যানিং বলেছিলেন, সুখবরের উৎসব বড়দিনে নানা ক্ষেত্রের সুখবরের অভাবের কথা। এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ঘিরে মানুষের অনিশ্চয়তাবোধ বা উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা উঠে এসেছিল বড়দিনের আবহে। জিশুও উদ্বাস্তু ঘরের সন্তান, সেটা বিশপেরা মনে করিয়ে দেন। বিশপ ক্যানিং এ বারও ক্রিসমাস ইভে মধ্যরাতের প্রার্থনা-সভায় জিশুকে ‘শান্তিরাজ’ বলে অভিহিত করেন। বড়দিনে ঈশ্বরপুত্রের জন্মের মধ্যে নাছোড় আশাবাদ ষে আমাদের দেশে এখনও সুবিচারের জন্য লড়তে শক্তি জোগায়— এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ক্রিসমাস ইভে ব্রেবোর্ন রোড ‘ক্যাথিড্রাল অব মোস্ট হোলি রোজ়ারি’র সান্ধ্য জমায়েতে রোম্যান ক্যাথলিকদের আর্চ বিশপ টমাস ডি’সুজ়াও বলেন, ‘‘বড়দিন মানে ভালবাসা আর আশার ডাক।’’ ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে মানুষকে ভালবেসে জীবন উৎসর্গের জন্য পাঠিয়েছিলেন, এই প্রতীকের ছাপ সমসময়ের পৃথিবীতে খোঁজার কথা বলেন আর্চবিশপ। কোভিড-ষোদ্ধা বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের ডাক্তার, নার্সরাও ঈশ্বরের কাজ করছেন বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।
সেন্ট পলের ক্যাথিড্রালে বড়দিনের বার্তায় স্বরূপ বর বলেছেন, ‘‘ভ্যাকসিনের আশায় তাকিয়ে থাকা মানুষের জন্য বড়দিনের আশাবাদ খুব জরুরি। কিন্তু ভ্যাকসিনই সব নয়। বরং অতিমারির সঙ্কটে ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে পরস্পরকে সাঙাষ্য করতে এগিয়ে আসা মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধটাই আসল শক্তি। করোনাকালের এই অর্জনটুকু আগামী দিনেও আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy