প্রতীকী ছবি।
শিশুর জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বোঝান তাঁরাই। অথচ, সেই আশা কর্মীরা-রা মা হলে তাঁদের সন্তানেরা টানা ৬ মাস শুধু মাতৃদুগ্ধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়!
কারণ, সরকারি নিয়মে আশা কর্মীরা সন্তানের জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি পান মাত্র ৪৫ দিন। তার পরেই তাঁদের কাজে যোগ দিতে হয়। দেড় মাসের বেশি ছুটি নিলে তাঁরা ভাতা পাবেন না। রাজ্যে প্রায় ৫৩ হাজার আশা কর্মী অন্তঃসত্ত্বা, সদ্য প্রসূতি ও সদ্যোজাতের স্বাস্থ্যে নজরদারি ও সহায়তার গুরুদায়িত্ব পালন করেন আশা কর্মীরা। নিয়ম অনুয়ায়ী, মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের ছুটি পান সরকারি স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীরা।
গত ২৬ অগস্ট কলকাতায় বিক্ষোভ সমাবেশে আশা কর্মীরা মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের ছুটির প্রসঙ্গ তুলে সরব হন। পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) অধিকর্তা গুলাম আনসারির কাছে স্মারকলিপিও দেন। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, আশা কর্মীরা সরকারি স্থায়ী বা অস্থায়ী কর্মী নন, তাঁরা সরকারের খাতায় ‘ভলান্টিয়ার’ বা স্বেচ্ছাসেবক। তাই ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার অধিকারী নন।
শিশুর জন্মের পর ৬ মাস ‘এক্সটেনসিভ ব্রেস্টফিডিং’ এর নির্দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তখন সে অন্য কিছু খাবে না। এতে শিশুর যথাযথ পুষ্টি, বৃদ্ধি হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আশাকর্মীদের বক্তব্য, ‘‘আমরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে অন্য মায়েদের টানা ৬ মাস শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপযোগিতা বোঝাচ্ছি, না খাওয়ালে বকাবকি করছি। অথচ, আমরা দেড় মাস পর থেকে কাজে বেরিয়ে যাচ্ছি আর আমাদের বাচ্চা বাধ্য হয়ে কৌটোর দুধ খাচ্ছে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী দাবি করেছেন, যেহেতু আশা কর্মীদের কাজের সময় নির্দিষ্ট নয়, তাঁদের হাজিরা খাতা নেই এবং তাঁরা ‘কমিউনিটি ওয়ার্কার’ অর্থাৎ এলাকার মধ্যেই তাঁদের কাজ, তাই কাজের ফাঁকে বাড়ি এসে শিশুকে দুধ খাইয়ে যেতেই পারেন।
পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন পাল্টা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের কাজ, বয়স্কদের দেখাশোনা, জনগণনা, সমীক্ষা, মেলা-উৎসবের ডিউটি, গাছ পোঁতার মতো বিভিন্ন কাজ আশা কর্মীদের দিয়ে করানো হয়। তাঁর কথায়, ‘‘রুটিন ডিউটি ছাড়াও আশা কর্মীদের রাতবিরেতে
আসন্ন প্রসবাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়, তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে থাকতে হয়। কোনও প্রসূতির হঠাৎ রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কারও গর্ভপাত হয়েছে, কোনও সদ্যোজাত আচমকা অসুস্থ হয়েছে—আশা কর্মী সেখানে দৌড়ন। হামেশাই ১০-১২ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। তার উপর পালা করে আশা কর্মীদের ‘দিশা’ ডিউটি থাকে। তাতে বাড়ি থেকে প্রায় এক-দেড় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে সাব সেন্টারে যেতে হয়, নাইট ডিউটি করতে হয়। এর মাঝে তাঁরা বাড়ি ফিরে শিশুকে দুধ খাইয়ে যাবেন! এটা কি বাস্তবসম্মত?’’
আশা কর্মীরা আরও জানিয়েছেন, তাঁরা শিশুর জন্মের পর ৬ মাস মা-কে ভারী কাজ করতে বারণ করেন অথচ, তাঁদের নিজেদের শিশুর জন্ম দেওয়ার দেড় মাসের মধ্যে কাজে বেরিয়ে রোদ-জলে সারা দিন ঘুরতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy