বৃষ্টির জলে চার দিক ভেসে গিয়েছে। বাঁকুড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
নিম্নচাপের জেরে প্রবল বর্ষণে হাবুডুবু অবস্থা কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির। আবহাওয়া দফতর আগেই লাল, কমলা এবং হলুদ সতর্কবার্তা জারি করেছিল দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। প্রবল বর্ষণের জেরে দুই পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরের বহু জায়গা জলের তলায় চলে গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় পিন্ডরুই এলাকায় জলে ডুবে কার্তিক মাইতি (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাকসি, চন্ডিয়া নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। অন্য দিকে, ডেবরায় জল তেমন না বাড়লেও বেশ কিছু গ্রাম এখনও জলমগ্ন। ঝুমি এবং শিলাবতী নদীর জল বাড়তে থাকায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ঘাটালে। ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “নদীর জল বাড়ছে, তার উপর বৃষ্টির জলও রয়েছে। ফলে নতুন করে বেশ কিছু গ্রাম জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।” জেলার কয়েকটি নদীর জল ফুলেফেঁপে উঠেছে। ঝুমি নদীতে জারি হয়েছে বিপদসঙ্কেত। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘাটাল মহকুমার মনসুখা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মাইকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়। টানা বৃষ্টিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু কাঁচা এবং পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া পুরসভার একাধিক এলাকায় জমে থাকা জল কিছুটা কমলেও গ্রামের দিকে জল জমে রয়েছে এখনও। পুরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় এখনও জমা জলে ভোগান্তির শিকার বাসিন্দারা। একই অবস্থা ভগবানপুর, এগরা, পটাশপুরেও। কেলেঘাই নদীর জল উপচে গ্রামে ঢুকছে। ফলে আতঙ্কিত স্থানীয়েরা।
তবে নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যাওয়ায় গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলাগুলিতে আপাত স্বস্তি মিললেও আশঙ্কা বাড়ছে পশ্চিমের জেলাগুলিতে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানে বৃহস্পতিবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দু’দিনের বৃষ্টিতে এমনিতেই চার দিকে জল থইথই। বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদীগুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তার মধ্যে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে বৃহস্পতিবার আরও জল ছাড়ায় আতঙ্কে সিঁটিয়ে বর্ধমান, হাওড়া, হুগলির নিচু এলাকাগুলি। এখনও আগের জল শুকোয়নি অধিকাংশ জায়গায়, তার মধ্যে গত দু’দিনের টানা বর্ষণ এবং তার জেরে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ায় দুইয়ের চাপে দিশাহারা ওই জেলাগুলির মানুষ। ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। তা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর।
রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া জেলায়। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আসানসোলে ৪৩৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে বাঁকুড়ায় ওই সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৩৫৪.৩ মিমি। ২০১৮-তে আসানসোলে সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৯২ মিমি। যা বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বাঁকুড়াতে ১৯২২ সালে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ২৯২ মিমি। সেই রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে বুধ-বৃহস্পতিবারের বৃষ্টি। ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের নিরিখে আসানসোল এবং বাঁকুড়ায় এটাই সবচেয়ে বেশি।
আসানসোলের রেলপাড়, দিলদারনগর, চেলিডাঙা, নিয়ামতপুর, রানিগঞ্জ, বার্নপুর-সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। শিল্পাঞ্চলের মাঝ বরাবর যে দু’টি নদী রয়েছে গাড়ুই এবং নুনিয়া, সেগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। উদ্ধারকাজে সেনা নামানো হয়েছে আসানসোলে। কয়েকটিজায়গায় বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। পানীয় জলের সমস্যাও দেখা দিয়েছে কিছু এলাকায়।
অন্য দিকে, দুর্গাপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২২০ মিলিমিটার, পুরুলিয়াতে ১৭৫ মিলিমিটার, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে ৩৭১ মিলিমিটার, কাঁটাবাঁধে বৃষ্টি হয়েছে ২৬৫ মিলিমিটার। রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া জেলাতেও। এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী-সহ সব নদীর জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। গন্ধেশ্বরী নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে বাঁকুড়া শহরের একাংশ। দ্বারকেশ্বর এবং শিলাবতী নদীর জলে ডুবেছে জেলার বিভিন্ন সেতু। জেলা জুড়ে বিপর্যস্ত যান চলাচল।
নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয় বাঁকুড়া জেলা জুড়ে। বুধবার সকাল থেকে সেই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে। একটানা প্রবল এই বৃষ্টিতে বুধবার সন্ধ্যার পরেই বিপদ সীমা ছুঁয়ে যায় অধিকাংশ নদীর জলস্তর। সিমলাপালের কাছে শিলাবতী সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে। শিলাবতী নদীর জলের তলায় ডুবে যায় ভেলাইডিহা সেতু। বাঁকুড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীর জল পাড় ছাপিয়ে প্লাবিত করে বাঁকুড়া বাইপাস ও সংলগ্ন লক্ষ্যাতড়া ও সতীঘাট এলাকা। জল ঢুকেছে পলাশতলা, রামকৃষ্ণপল্লি, অরবিন্দপল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকায়।
সকাল থেকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নামেন জেলা প্রশাসন ও বাঁকুড়া পুরসভার আধিকারিকরা। বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক সুশান্তকুমার ভক্ত বলেন, “যে এলাকাগুলিতে জল ঢুকেছে সেই এলাকাগুলি আমাদের নজরে রয়েছে। প্রশাসন সব দিক থেকে তৈরি রয়েছে।” বাঁকুড়া পুরসভার প্রশাসক অলকা সেন মজুমদার বলেন, “আমরা সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
আবারও বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হল হুগলির আরামবাগ মহুকুমায়। ঝাড়খণ্ড ও বাঁকুড়ায় ভারী বৃষ্টির কারণে দ্বারকেশ্বরের জল বেড়ে তৈরি হয়েছে এই বন্যা পরিস্থিতি। আরামবাগের দৌলতপুরে নদী বাঁধ ভেঙে রাস্তা ছাপিয়ে জল ঢুকেছে শহরে। এর ফলে আরামবাগ থেকে গোঘাট, কামারপুকুর হয়ে বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। জেলা প্রশাসনের আধিকারীকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। অন্য দিকে নিম্নচাপের বৃষ্টির কারণে দ্বারকেশ্বর নদীতে জল ছাড়া হয়েছে, তাই মাইক নিয়ে সর্তক করা হয়েছে আরামবাগ পুরসভার পক্ষ থেকে। নদীর চর এলাকায় যে সমস্ত মানুষেরা আছেন তাঁদেরকে বাড়ি থেকে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy