নিহতের ছেলেকে সান্ত্বনা শুভেন্দু অধিকারীর। বৃহস্পতিবার রানাঘাটে বিজেপির দফতরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
সকালে নিহতের ছেলে বলেছিলেন, এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যাওয়ার পরে বিকেলে তিনিই দাবি করলেন, তৃণমূলের লোকেরা তাঁর বাবাকে খুন করেছে।
তিনি, বাবলু সরকার, নদিয়ার শান্তিপুর থানার আড়বান্দি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির ১৭ নম্বর বুথের সহ-সভাপতি। রানাঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারের পাড়ার লোক। শুভেন্দু অবশ্য বৃহস্পতিবার রানাঘাটে সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, বাবলুর বাবা, নিহত অধীর সরকারই ওই বুথের সহ-সভাপতি।
বুধবার সন্ধ্যায় বাজারে আড্ডা দিতে গিয়ে দুই ভাইয়ের মারধরে বছর পঁয়ষট্টির অধীর মারা যান বলে অভিযোগ। তার পরেই শুভেন্দু এক্স-হ্যান্ডেলে দাবি করেন, তৃণমূলের হাতে তাঁদের দলীয় কর্মী খুন হয়েছেন। অন্যতম অভিযুক্ত গোকুল সরকারকে ধরে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দিয়ে বৃহস্পতিবার রানাঘাট আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পরে পুলিশই সরাসরি খুনের মামলা
রুজু করে। তবে রাত পর্যন্ত আর এক অভিযুক্ত, গোকুলের ভাই আনন্দ সরকারের খোঁজ মেলেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোজকার মতোই বুধবার বাড়ির কাছে বাজারে মুদিখানার দোকানে আড্ডা দিতে গিয়েছিলেন অধীর। দুর্গাপুজোর ভাসান সেরে ফেরার পথে আনন্দ আর গোকুলও সেখানে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, তাঁদের সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে করতে বচসা বেধে যায় অধীরের। দুই ভাই তাঁকে চড়-ঘুষি মারতে থাকেন বলে অভিযোগ। পুরনো হৃদরোগী, এক বার স্ট্রোক হয়ে যাওয়া অধীর মার খেয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাঁকে তুলে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা
করা হয়।
এ দিন সকালে দীর্ঘক্ষণ ফুলিয়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। কিন্তু তখন বাবলু বলেন, ‘‘যারা মেরেছে, তারা তৃণমূল করে। তবে এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিছু দেখছি না। মনে হচ্ছে, পুরনো ঝামেলার জেরেই এই ঘটনা।’’ তিনি জানান, আগে এক বার গোকুলদের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের ঝামেলা হয়েছিল। পরে সব মিটে যায়। তবে গোকুলের স্ত্রী নূপুর সরকার দাবি করেন, ‘‘আমার স্বামী রাজনীতি করেন না। বেশির ভাগ সময়ে অন্য রাজ্যে থাকেন। ওদের পরিবারের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভাল।’’
সকালেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘মৃতের ছেলে দাবি করছেন, এটা রাজনৈতিক খুন নয়। হয়তো তাঁকে সিভিক পুলিশে চাকরির টোপ দেওয়া হয়েছে!’’ দুপুরে রানাঘাটে দলীয় দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতি আমরা দখল করেছি। এটাতে তৃণমূলের খুব রাগ। তৃণমূলের প্রলোভনের কাছে অধীর সরকার মাথা নত করেননি। তাই তাঁকে নিশানা করা হয়েছে।’’ মৃতের ছেলের বক্তব্যকে কার্যত ধর্তব্যে না এনে তিনি বলেন, “কে কী বলছে, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না।”
এর পরেই আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বাবলু দাবি করেন, “তৃণমূলের লোকেরা পরিকল্পনা করে আমার বাবাকে খুন করেছে।” তা হলে আগে যে বলেছিলেন ‘রাজনৈতিক খুন’ নয়? কেউ কি সে কথা বলতে চাপ দিয়েছিল বা চাকরির লোভ দেখিয়েছিল? বাবলু বলেন, “সে সব কিছু নয়। আসলে তখন আমার মাথার ঠিক ছিল না।”
সন্ধ্যায় তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। তবে দিকে দিকে আদি আর নব্য বিজেপির বিরোধে ওদের নেতা-মন্ত্রীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, ঘেরাও হচ্ছেন। সে সবও দেখা হোক।’’ রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে এটা রাজনৈতিক খুন বলে আমাদের মনে হয়নি।’’ তবে তদন্তের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা বদলে পরে সরাসরি খুনের ধারা দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে
জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy