হাই কোর্ট চত্বরে কাঁদছেন মৌসুমী-টুম্পারা। —নিজস্ব চিত্র।
চরম শাস্তি হল না বন্ধুর ধর্ষণকারীদের। উল্টে দোষী সাব্যস্তদের সাজা কমিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। কামদুনির ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্ট রায় ঘোষণা হতেই তাই হতাশায় ভেঙে পড়লেন কামদুনির ঘটনায় সুবিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী মৌসুমী কয়াল এবং টুম্পা কয়ালরা। বিচারপতিদের এজলাসে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই বসে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তাঁরা। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানও হয়ে যান মৌসুমী!
শুক্রবার দুপুরে রায় ঘোষণা হয় কামদুনি ধর্ষণ এবং খুনের মামলায়। ২০১৩ সালের ওই নৃশংস ঘটনায় এর আগে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সেই সাজা কমিয়ে হাই কোর্ট আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় দোষী সাব্যস্তদের দু’জনকে। বাকিদের সাজা মকুব হয়। এই রায়ের প্রতিবাদেই রাস্তায় বসে পড়েন মৌসুমী-টুম্পারা। ফলে কিছু ক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে যায় কলকাতা হাই কোর্ট চত্বর। টুম্পা-মৌসুমীরা জানান, তাঁরা হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। নির্ভয়ার আইনজীবীর সাহায্যে আবার লড়বেন তাঁর বন্ধুর সঙ্গে হওয়া অবিচারের মামলা।
২০১৩ সালের জুনে কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয় গোটা রাজ্য। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের মতোই তার ঢেউও পৌঁছয় দেশের অন্যান্য প্রান্তে। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। সেই আন্দোলনেরই নেতৃত্বে ছিলেন মৌসুমী-টুম্পারা। তার পর থেকে দশ বছর কেটে গিয়েছে সুবিচারের আশায়। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের রায় ঘোষণার পর যখন কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন মৌসুমী, তখন সেই দীর্ঘ আন্দোলনে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন টুম্পা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের বন্ধুর জন্য আমরা সেই ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করছি। আমাদের উপর কম অত্যাচার হয়নি। কিন্তু আমরা সব সহ্য করেছি। কিন্তু এত বছর অপেক্ষার পর এই হল! প্রমাণ হল এ রাজ্যে কোনও বিচার নেই। কিন্তু আমরাও থেমে থাকব না।’’
দুপুর ২টো নাগাদ রায় ঘোষণা হয় কামদুনি মামলার। সেই রায় শুনতে আদালতে এসেছিলেন টুম্পা-মৌসুমীরাও। নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজা পেয়েছিলেন কামদুনির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলি। তাঁদের সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। এ ছাড়াও আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলিকে বেকসুর খালাস করা হয়। নিম্ন আদালতে আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করেরও সাজা মকুব করে আদালত। কারণ তারা ইতিমধ্যেই ১০ বছর জেলে কাটিয়েছে। বিচারপতি এই রায় ঘোষণা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন টুম্পা-মৌসুমীরা।
হাই কোর্টের সামনের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। মধ্যাহ্ণভোজের বিরতিতে যে রাস্তা দিয়ে বিচারপতিরা যাতায়াত করেন সেই রাস্তাতেই বসে পড়ে সুবিচারের দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। একই সঙ্গে জানান, হাই কোর্টের এই নির্দেশে তাঁরা হতাশ। তাঁদের এত বছরের আন্দোলন বৃথা হয়ে গেল। মৌসুমী-টুম্পাদের পাশাপাশি ওই রাস্তায় বসে আদালত চত্বর অবরোধ করে কামদুনির ধর্ষিতার পরিবার-পরিজনেরাও। পরে অবশ্য পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে তুলে দেয়। তবে মৌসুমী-টুম্পারা জানিয়ে দেন, তাঁদের এই আন্দোলন থামবে না। তাঁরা সুবিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy