Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

ঘরে ঘরে শ্যামাপ্রসাদ, গ্রামে গ্রামে কাটমানি বিক্ষোভ, জোড়া ফলা নিয়ে মাঠে নামছে বিজেপি

১০ ও ১১ অগস্ট দুর্গাপুরে চিন্তন বৈঠক করেছে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। শীর্ষ পদাধিকারীরা, কয়েক জন সাংসদ, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ জনা চল্লিশেক ডাক পেয়েছিলেন সে চিন্তন শিবিরে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ১৮:২৮
Share: Save:

তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৬৬ বছর আগে, জম্মু-কাশ্মীরের কারাগারে। বিজেপির ইস্তেহার বা সঙ্ঘের নানা এজেন্ডার মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতির তাত্ত্বিক স্তরে তিনি কিছুটা প্রাসঙ্গিক থেকে গিয়েছিলেন বটে। কিন্তু, নিজের রাজ্যে তাঁকে নিয়ে হইচই কমই ছিল। আড়াই মাস আগে লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হতেই শ্যামাপ্রসাদের নিজের রাজ্যে বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থান স্পষ্ট হয়। আর সদ্য জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহৃত হতেই শ্যামাপ্রসাদের ‘বলিদান’ ফের দেশজোড়া চর্চায়। সেই চর্চাই আপাতত বঙ্গ বিজেপির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে যাচ্ছে— দলের রাজ্য নেতৃত্বের দু’দিনের চিন্তন বৈঠকে সিলমোহর পড়ল এই সিদ্ধান্তেই।

১০ ও ১১ অগস্ট দুর্গাপুরে চিন্তন বৈঠক করেছে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। শীর্ষ পদাধিকারীরা, কয়েক জন সাংসদ, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ জনা চল্লিশেক ডাক পেয়েছিলেন সে চিন্তন শিবিরে। আগামী কয়েক মাসে বা বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে কোন কোন বিষয়কে সবচেয়ে বেশি করে তুলে ধরা হবে— সে বিষয় নিয়ে বিশদে মত বিনিময় হয়েছে। শিবিরের দ্বিতীয় দিনে সিদ্ধান্ত হয়েছে— আপাতত দু’টি বিষয় নিয়ে প্রচার ও অন্দোলন সবচেয়ে তীব্র করা হবে।

প্রথম বিষয় হল— জম্মু-কাশ্মীর, ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বলবৎ রাখার কতটা বিরোধী ছিলেন বঙ্গসন্তান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়; তার জন্য তিনি কী ভাবে জম্মু-কাশ্মীরে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং সেখানকার কারাগারেই কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল; এক বঙ্গসন্তানের দেখিয়ে যাওয়া সেই পথে অটল থেকে কী ভাবে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ এত দিনে ৩৭০ ধারা তুলে নিলেন— ব্যাপক ভাবে তা প্রচারে আনা হবে গোটা বাংলায়।

আরও পড়ুন: ইদের নামাজ মিটতেই থমথমে কাশ্মীর, বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের কথা মানল কেন্দ্র​

দ্বিতীয় বিষয় হল ‘কাটমানি’ বিক্ষোভ। তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের মধ্যে কাটমানি খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একটি মন্তব্য করেছিলেন এক দলীয় কর্মসূচিতে। তাকে হাতিয়ার করে জেলায় জেলায় তৃণমূল নেতাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। এখনও সে বিক্ষোভ চলছে। ইতিমধ্যে অনেক অভিযুক্ত নেতা কাটমানি ফেরতও দিয়েছেন। বিজেপির চিন্তন শিবিরের সিদ্ধান্ত— এই আন্দোলনকে আরও বড় আকার দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে— বিচ্ছিন্ন বা বিক্ষিপ্ত ভাবে নয়, কাটমানি কাণ্ডের প্রতিবাদে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন তুঙ্গে তোলা হবে রাজ্য জুড়ে।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে বড়সড় ধাক্কা খেয়েই পাল্টা ময়দানে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশকে কাঠগড়ায় তুলেই, সুকৌশলে উস্কে দিয়েছিলেন কাটমানি বিতর্ক। উদ্দেশ্য ছিল, সার্বিক ভাবে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখা। আর ঠিক এই জায়গাতেই পাল্টা কামড় দিতে চাইছে বিজেপি। কাটমানি নিয়ে জনসাধারণের বিক্ষোভের আঁচ এখন খানিকটা স্তিমিত হয়েছে। রাজ্যে বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে কাটমানি-বিক্ষোভের সেই ‘মরা গাঙে’ই এ বার ‘বান’ আনতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির দু’দিনের চিন্তন শিবিরে বক্তা শমীক ভট্টাচার্য, ভারতী ঘোষ বা সায়ন্তন বসু প্রত্যেকের কথাতেই উঠে আসে কাটমানি প্রসঙ্গ।

আরও পড়ুন: আসছে গিগা ফাইবার, ১০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট স্পিড, আজীবন ফ্রি কল... ফের চমক মুকেশ অম্বানীর​

বাম আমলের শেষ লগ্নে, তৃণমূলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও নেতাইয়ের মতো ঘটনা। এই ইস্যুগুলির পাশাপাশি, সে দিন রেশন দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে রেখে জন সাধারণের ক্ষোভকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, সে সময় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল রেশন দুর্নীতি নিয়ে বিক্ষোভ। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আট বছর পর, সেই কৌশলই এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে চায় বিজেপি। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ বিজেপির নেতাদের গলায় ছিলই। সেই সঙ্গে, এ বার পদ্ম শিবিরের ‘পুঁজি’ হচ্ছে তৃণমূল নেতা ও জন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগও।

বাংলার মাটি থেকে এক সময় ৩৭০ প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। প্রায় ছ’দশক ধরে চাপা পড়ে থাকা সেই ইতিহাসকে এ বার ব্যাপক প্রচারের আলোয় আনতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির কৌশল, এক দিকে তৃণমূলের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে আন্দোলনের পারদ চড়ানো। আর এক দিকে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারকে বিজেপির ‘ইতিবাচক’ কাজ হিসেবে তুলে ধরা।

আরও পড়ুন: জলের তোড়ে ভেসে গেল বাড়ি, মৃত ৬, দেখুন সেই ভয়ঙ্কর ভিডিয়ো​

চিন্তন শিবিরের আলোচনায় যে এই দুটি বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তিনি বলেন, ‘‘ভারত বিভাজনের সময় পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের মধ্যে রাখা নিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিরাট ভূমিকা ছিল। জম্মু-কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছদ্য অঙ্গ তা প্রতিষ্ঠার জন্য আত্ম বলিদান দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, সে সব ইতিহাস কখনও দেশের মানুষকে পড়তে দেওয়া হয়নি। আর এ রাজ্যের মানুষকেও তা জানতে দেওয়া হয়নি। আজ জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর, এগুলি আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। সুতরাং, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে বঙ্গসন্তান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদান কতটা, তা তুলে ধরতে আমরা ঘরে ঘরে যাব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy