Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জলহীন এলাকায় বয়ে যাচ্ছে আর্সেনিক-মুক্ত জল

যে এলাকায় এ ভাবে জল নষ্ট হচ্ছে, তার সংলগ্ন বিড়াল গ্রাম। অভিযোগ, ওই গ্রামের একটা বড় এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে।

সমীরণ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৯
Share: Save:

সরবরাহের মোটা পাইপের এয়ার ভালভ থেকে ২৪ ঘণ্টা স্রোতের মতো বেরিয়ে যাচ্ছে জল। তা বন্ধ করার কোনও ব্যবস্থা বা আগ্রহ কোনওটিই নেই। অথচ ওই এলাকার সংলগ্ন গ্রাম কার্যত জল শূন্য। পানীয় জল কিনে ব্যবহার করছেন সেই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। অন্য অংশ পুকুর বা দূরের নলকূপের জলের উপরে নির্ভরশীল। এই ছবি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর-আমতলা রোডের কেয়াতলার। অথচ ডোঙারিয়ার আর্সেনিক-মুক্ত জল প্রকল্প থেকে আসা ওই পরিস্রুত জল অপচয় বন্ধের কথা ভাবেইনি স্থানীয় হরিহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রধানের বক্তব্য, ওটা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অধীন। জল অপচয় কী ভাবে বন্ধ করবে, তা ওই দফতরে ভাবনা।

যে এলাকায় এ ভাবে জল নষ্ট হচ্ছে, তার সংলগ্ন বিড়াল গ্রাম। অভিযোগ, ওই গ্রামের একটা বড় এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। প্রায় সব বাড়িতে সরবরাহের পাইপলাইন পৌঁছে গেলেও, জল যায় না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় অংশ আর্সেনিক প্রবণ হওয়ায়, এক সময়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এলাকায় কোনও নলকূপ থাকবে না। ফলে সে ব্যবস্থাও নেই। স্থানীয় বাসিন্দা পবিত্র মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘বছর ১০-১২ আগে পাইপলাইন পাতা হয়েছিল। কিছু দিন জল এসেওছিল। তার পরে যে সেই বন্ধ হল, আর এল না। আমরা জল কিনে খাই বটে, তবে তার মান মোটেও ভাল নয়। সেখানে এত ভাল জল নষ্ট হয়ে যায়, কেউ ভাবেও না!’’

অন্য এক বাসিন্দা অনির্বাণ দাসের প্রশ্ন, ‘‘সরকারি দফতরগুলো কী ভাবে বছরের পর বছর ধরে এত জল নষ্ট হতে দেখেও চোখ বন্ধ করে থাকে? অথচ জল সঙ্কট সচেতনতার প্রচারে সরকার যেখানে এত খরচ করছে!” অন্তত ওই জলই যদি কোনও ভাবে গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেত, তাহলে অনেকেই উপকৃত হতেন বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, প্রায় এক দশক আগে রায়পুরের ডোঙারিয়া প্রকল্প থেকে পাইপের মাধ্যমে আর্সেনিক-মুক্ত পরিস্রুত জল এসেছিল বারুইপুর ও সংলগ্ন এলাকায়। বারুইপুর কলেজের কাছে কেয়তলার মোড়ে সেই পাইপলাইনের এয়ার ভালভ থেকেই বিপুল জল পড়ে নষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। বেশ কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় কিছু মানুষ সেই জল ব্যবহার করেন, তবে অপচয়ের পরিমাণের কাছে সেটা নগণ্য। রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, জলপ্রবাহের ভারসাম্য ঠিক রাখতে প্রযুক্তিগত কারণেই কিছু জায়গায় পাইপলাইন থেকে এ ভাবে জল বার করতে হয়। ওখানেও সেটিই হয়েছে। তিনি বলেন, “ডোঙারিয়া প্রকল্পে যে পরিমাণ জল উৎপাদন হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। তাই পুর এলাকাগুলিতে জল পরিষেবা দেওয়ার পরে পঞ্চায়েত এলাকায় বড় অভাব থেকে যাচ্ছে।”

হরিহরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান কমল মিত্র বলেন, ‘‘ওই লাইনটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অধীন। ফলে ওই জল কী ভাবে ব্যবহার হবে, তা সেই দফতরই ঠিক করবে। পঞ্চায়েতের তরফে গভীর নলকূপ বসিয়ে সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “প্রকল্পের বাইরে মানুষের কাছে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ আমাদের নয়।” দফতরের মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে এ দিন ফোন করে ও মেসেজে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking Water Water Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy