(বাঁ দিকে) অনুব্রত মণ্ডল, সুমিত মণ্ডল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কপালে চারটি সেলাই। আপাতত ১০ দিন বিশ্রামে থাকতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার বিসর্জনের সময় তাঁকে এলাকারই দুই যুবক মেরে রক্তাক্ত করেছিল। রক্তাক্ত অবস্থাতেই ছুটে গিয়েছিলেন বোলপুর থানায় অভিযোগ জানাতে। তিনি কোপাইয়ের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। নাম সুমিত মণ্ডল। তাঁর আরও একটা বড় পরিচয়, তিনি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর ভাই। এখনও যে অনুব্রত খাতায়-কলমে তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি। যিনি গরু পাচার মামলায় দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি।
যে অনুব্রত ছিলেন এক সময়ে বীরভূমের ‘শেষকথা’, তাঁর ভাইকে কারা পেটাল রাস্তায় ফেলে? আক্রান্ত সুমিতের কি কোনও রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে? দাদা কেষ্টর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঠিক কেমন? কপালে সেলাই নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের অনেক কথারই জবাব দিলেন সুমিত। অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেনও না। সুমিতকে গোটা বোলপুর চেনে ‘বুলেট’ নামে।
বৃহস্পতিবার কী ঘটেছিল? সুমিত বললেন, ‘‘প্রতিমা নিরঞ্জনের সময়ে এলাকারই দু’জন আমার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। কী কারণে আমার উপর আক্রমণ হল জানিও না।’’ অনুব্রতের ভাই হলেও তাঁর রাজনৈতিক জীবনে রং বদল চলেছে। একটা সময়ে তিনি ছিলেন জেলা তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সমন্বয়ের দায়িত্বে। তার পর ২০১৯ সালের প্রবল মোদী হাওয়ায় গেরুয়া শিবিরের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন বুলেট। হয়েছিলেন বীরভূম জেলা বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক। তার পর শিক্ষকতা আর রাজনীতি সমান তালেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আগ্রাসী বিজেপিকে পরাস্ত করে বাংলায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুমিতও ফেরেন দিদির দলে। বলা ভাল দাদার দলে। কেন ছাড়লেন বিজেপি? কেনই বা তৃণমূলে ফিরেছিলেন? কপালে সেলাই নিয়ে কেষ্ট-ভ্রাতা বললেন, ‘‘পারিবারিক কিছু সমস্যা ছিল। তাই।’’ কোনও চাপ ছিল? ভাই বিজেপি করায় দাদা অনুব্রতের অন্য কোনও অসুবিধা হচ্ছিল? সুমিত আর এগোলেন না। জানিয়ে দিলেন, ‘‘এত কথা আমি সংবাদমাধ্যমের সামনে বলব না।’’
বুলেটের ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য বলছেন, ভক্তিতে নয়। ভয়েই তাঁকে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি ছাড়তে হয়েছিল। ভাঙচুর হয়েছিল বাড়ি, গাড়ি। সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষক বুলেটকে। অনুব্রতের বাবা কৃপাসিন্ধু মণ্ডল আর বুলেটের বাবা কার্তিক মণ্ডল দু’ভাই। বুলেট হলেন কেষ্টর কাকার ছেলে। প্রসঙ্গত, গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের সঙ্গে তাঁর মেয়ে জেলবন্দি থাকলেও তার আগে সুকন্যা মণ্ডলের নাম জড়িয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে। অভিযোগ উঠেছিল, বেআইনি ভাবে শুধু তিনি প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ পেয়েছেন তা-ই নয়, বাড়ির পাশের স্কুলের দিদিমণি হয়েও তিনি ক্লাস নিতে যেতেন না। বাড়িতে বসেই নাকি দিনের পর দিন সই করতেন হাজিরা খাতায়। সুকন্যাকে কলকাতা হাইকোর্টে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুলেটও তো প্রাথমিক শিক্ষক, তাঁর চাকরি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি? তাঁর জবাব, ‘‘আমি অনুব্রতের ভাই হিসাবে চাকরি পাইনি। নিজের যোগ্যতায় পেয়েছি। প্রভাব খাটিয়ে চাকরি পেলে ২০১২ সালে ওঁর মেয়ের সঙ্গেই চাকরি পেতে পারতাম। কিন্তু ২০১৭ সালে পরীক্ষা দিয়ে আমি চাকরি পাই।’’
তিনি কি কখনও ভেবেছিলেন, অনুব্রত মণ্ডলের ভাই হয়ে তাঁকে মার খেতে হবে? বুলেট বলেন, ‘‘আমি সাধারণ মানুষ। আমি ভাবতেও পারিনি এ ভাবে আমার উপর আক্রমণ নেমে আসবে। বাংলার আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ নেমে এলে তাঁদেরও যেমন অনুভূতি হবে, আমারও তা-ই। ’’
কথা শুনে বোঝা যাচ্ছিল, অনুব্রতের সঙ্গে সুমিতের রক্তের সম্পর্ক থাকলেও, আত্মিক দূরত্ব অনেক। তাঁর কাজের জায়গায়, সামাজিক ক্ষেত্রে অনুব্রতের ভাই বলে সম্মানহানি হয়? সুমিতের ঝটিতি জবাব, ‘‘এক সময়ে যাঁরা অনুব্রত মণ্ডলকে ধরে গুছিয়ে নিয়েছে, তারাই আজকাল আমাদের দেখলে টিটকিরি দেয়। এ সব সামাজিক সম্মানহানি বটেই।’’ বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরলেও সুমিত আর রাজনীতিতে সক্রিয় নন। স্পষ্টই বললেন, ‘‘আমি এখন কোনও দল করি না। তবে হ্যাঁ, বিজেপি করতাম।’’ আপাতত বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে হবে তাঁকে। কপালের সেলাই কাটতে আরও অন্ত দিন আষ্টেক তো বটেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy