মুখোমুখি: পুরন্দরপুরে বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (উপরে)। তাঁর প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন মাজিগ্রামের বুথ সভাপতি গণেশ রায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
রাস্তার সংস্কার নেই দীর্ঘদিন। এ বার সেই বেহাল রাস্তার কথা তুলে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের চোখে চোখে রেখে সরব হলেন দলের এক বুথ সভাপতি। সভায় এমন প্রশ্ন তোলায় তাঁকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিলেন অনুব্রত। ক্ষোভে সভা ছাড়লেন বুথ সভাপতি এবং তাঁর অনুগামীরা। পরে জেলা ও ব্লক নেতারা এসে তাঁকে বুঝিয়ে সভায় ফিরিয়ে নিয়ে যান।
খোদ অনুব্রতের কোনও কর্মিসভায় এমন ঘটনা বেনজির বলেই জানাচ্ছেন জেলা নেতৃত্বের বড় অংশ। এক নেতা তো বলেই ফেললেন, ‘‘এমনকি জেলা স্তরের নেতারাও অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কখনও বাদানুবাদে জড়ান না। কিন্তু, ওই বুথ সভাপতি সেটা করেছেন। ঘটনার কথা জেনে সকলেই অবাক হয়েছেন।’’ তবে এই ঘটনা দলের অস্বস্তি বাড়াল বলেই মনে করছেন ওই নেতারা।
সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তাঁরা পান কি না, এলাকাবাসীর কোনও দাবিদাওয়া আছে কিনা, স্থানীয় নেতাদের প্রতি তাঁদের কোনও ক্ষোভ রয়েছে কিনা— এমন খুঁটিনাটি তথ্য নিতে এবং জনসংযোগ বৃদ্ধিতে বুথে বুথে কমিটি তৈরি করেছে তৃণমূল।
বুধবার সিউড়ি ২ ব্লকের পুরন্দরপুরে বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করেন অনুব্রত। করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা তিনটি সভা করেন। প্রত্যেক বুথ সম্মেলনের মতো এ দিনও বুথ সভাপতিদের কাছে তাঁদের এলাকার খবর নিচ্ছিলেন অনুব্রত। প্রথমেই ছিল দমাদমা পঞ্চায়েত। মাজিগ্রামের বুথ সভাপতি গণেশ রায়কে জিজ্ঞেসা করতেই তাল কাটে। অনুব্রত জানতে চান, ‘‘ওই এলাকার মানুষের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কোন ক্ষোভ নেই তো?’’ উত্তরে গণেশ বলেন, ‘‘না, ভরসা রয়েছে। কিন্তু গ্রামে প্রবেশের রাস্তার বেহাল দশার কারণে মানুষের ভরসা উঠে যাচ্ছে।’’ এই নিয়ে অল্প কথাচালাচালির পরে জেলা সভাপতির সঙ্গে কার্যত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ওই বুথ সভাপতি। এমনকি গণেশ বলে ওঠেন, ‘‘বাম আমলে রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাওয়া যেত, এখন সেটাও যায় না!’’ একটা সময়ে অনুব্রত বিরক্ত হয়ে বলে ওঠেন, ‘‘আপনাকে যতই দিই, আপনার পেট ভরবে না।’’ ঘাবড়ে না গিয়ে গণেশের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কী এমন পেয়েছি?’’
এ কথা শুনে দৃশ্যতই মেজাজ হারান অনুব্রত। মঞ্চ থেকেই গণেশকে পদ সরানোর কথা বলেন। গণেশ ও তাঁর অনুগামীরা চিৎকার করতে করতে সভা ছেড়ে বাইরে চলে যান। পরে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ এবং সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি নুরুল ইসলাম তাঁদেরকে বুঝিয়ে সভায় ফিরিয়ে নিয়ে যান। এর পরে অনুব্রত বলেন, ‘‘মাজিগ্রাম থেকে হাতোড়া পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিমি রাস্তা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ করবে।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত ওই নেতাকে বুথ সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে কিনা, সেটা স্পষ্ট নয়। সভার শেষে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনুব্রত বলেন, ‘‘সেটা দলের অন্দরের ব্যাপার। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সেই আলোচনা করব না।’’ গণেশের সঙ্গে পরে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
দলের নিচুতলার নেতাদের দাবি, এই সভার উদ্দেশ্যই ছিল এলাকার মানুষের সমস্যার কথা শোনা এবং সমাধানের চেষ্টা করা। কিন্তু সমস্যার কথা বলতে গিয়ে যদি পদ থেকেই সরতে হয়, তাহলে সভার মানে কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy