Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Anubrata Mondal

দিল্লি এড়ানোর চেষ্টা! নিজের জালেই নিজে জড়াচ্ছেন কেষ্ট? বলছেন আইনজীবীদের একাংশ

ইডি অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে বলে রাজধানীর রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট সোমবার নির্দেশ দেওয়ার পরেই মঙ্গলবার তড়িঘড়ি কেষ্টকে কোর্টে তুলে হেফাজতে নিয়েছে দুবরাজপুর থানা।

দুবরাজপুরে আদালত চত্বরে অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুরে আদালত চত্বরে অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫৩
Share: Save:

দিল্লি এড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে কি নিজের জালে নিজেই ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট? অন্তত তেমনটাই পর্যবেক্ষণ আইনজীবী শিবিরের একাংশের।

গরু পাচারের মামলায় ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে বলে রাজধানীর রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট সোমবার নির্দেশ দেওয়ার পরেই মঙ্গলবার তড়িঘড়ি কেষ্টকে কোর্টে তুলে হেফাজতে নিয়েছে দুবরাজপুর থানা। অভিযোগ, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনুব্রত দলেরই এক পঞ্চায়েত প্রধানকে ‘গলা টিপে খুনের চেষ্টা’ করেছিলেন। সেই মামলায় এত দিন পরে কেষ্টকে ঘিরে এই পুলিশি তৎপরতা কেন? আইন বিশারদেরা বলেন, খুন বা খুনের চেষ্টার মামলা কখনও তামাদি হয় না এবং তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে-কোনও সময়েই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আইনজীবীদের পর্যবেক্ষণ, পুলিশি হেফাজতে থাকলে অনুব্রতকে এখনই দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে না ইডি। এবং সেই সময়ের ফাঁকে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাতে পারবেন অনুব্রতের কৌঁসুলিরা।

এটা যে কৌশল, আইনজীবীদের অনেকের কাছেই তা স্পষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, খুনের চেষ্টার দেড় বছর পরে অভিযোগ দায়ের হল। তার পরেই তড়িঘড়ি অনুব্রতকে হেফাজতে নিল পুলিশ! সব কিছুই হল তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায়। কাকতালীয় বলা হলেও আইনের চোখকে ফাঁকি দেওয়া মুশকিল। এই কৌশলে কার্যত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতেই অস্ত্র তুলে দেওয়া হল বলে আইনজীবী শিবিরের বড় অংশের অভিমত। কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ জানান, অনুব্রত যে প্রভাবশালী, সেটা বোঝাতে এ বার কোর্টে এই ঘটনাকেই হাতিয়ার করতে পারেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কৌঁসুলিরা। এটাও বলা হবে যে, তাঁকে ঠেকাতে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনও তৎপর!

হাই কোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডলের বক্তব্য, দিল্লি গেলে যে সমস্যা হবে এবং তাতে সমস্যা যে রাজ্য সরকারেরও, সেটাই কার্যত প্রমাণিত হচ্ছে। তবে এ ভাবে দিল্লি যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। এতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থারই হাত শক্ত হচ্ছে। তাঁর কথায়, “পুরনো মামলায় এত হুড়োহুড়ি করে পুলিশি হেফাজত! এ তো মনে হচ্ছে, রাজ্যের স্পনসর্ড অভিযুক্ত।”

আদালত সূত্রের খবর, দুবরাজপুর কোর্টে অনুব্রতের জামিনের আর্জিও জানাননি তাঁর আইনজীবী। তা থেকেই স্পষ্ট, অনুব্রত যেন পুলিশি হেফাজতে গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে চাইছিলেন! দিল্লি যাওয়া ঠেকাতে অনুব্রত উচ্চতর আদালতের গেলে কেন্দ্রের কৌঁসুলিরা সেই প্রসঙ্গ তুলতে পারেন।

এখানেই শেষ নয়। এই কৌশলে ভবিষ্যতেও কেষ্টর ব্যথা বাড়বে বলে মনে করছেন অনেক আইনজীবী। অনুব্রত-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে ‘প্রভাবশালী’ তকমাকে বারে বারেই হাতিয়ার করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। দিল্লির একটি আদালতের সোমবারের নির্দেশ ইডি-র পক্ষে যাওয়ার পরে যা ঘটেছে ও ঘটছে, তাতে প্রভাবশালী তকমা অনুব্রতের ভাবমূর্তিতে আরও দৃঢ় ভাবে চেপে বসছে বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের অনেকে। কল্লোলের কথায়, “এ বার জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা বাড়বে অনুব্রতের। কারণ, তিনি যে প্রভাবশালী এবং রাজ্য সরকার যে তাঁর সঙ্গে আছে, সেটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।”

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy