Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Anubrata Mondal

জোর করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের জমিও হাতিয়ে নেন কেষ্ট! কী ঘটেছিল? চার্জশিটে জানাল সিবিআই

সিবিআই জানিয়েছে, প্রথমে ক্লাব, তার পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং শেষে অনুব্রতের দরজায় গিয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়েই দানে পাওয়া জমিটি বিক্রি করতে হয় আশ্রমকে।

অনুব্রতকে নিয়ে  চার্জশিট সিবিআইয়ের।

অনুব্রতকে নিয়ে চার্জশিট সিবিআইয়ের। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৫৪
Share: Save:

সামাজিক কাজের জন্য জমি পেয়েছিল ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। সেই জমি কৌশলে হস্তগত করেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। কী ভাবে? তা গরু পাচার মামলার চার্জশিটে প্রকাশ্যে আনল সিবিআই।

ঘটনাটি ২০১২-১৩ সালের। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সভাপতি ত্রিদীপানন্দ মহারাজকে জমিটি দান করেছিলেন সুচিন্তা কুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। কিন্তু সঙ্ঘ সেই জমি নিজের কাছে রাখতে পারেনি। সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, দানে পাওয়া জমিটি বাজারদরের থেকে অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয় আশ্রমকে। আর তার পর জমিটি কিনে নেয় অ্যাগ্রোকেম নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। যার ডিরেক্টর হিসেবে নাম রয়েছে অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের।

ঘটনাটি কী ভাবে ঘটেছিল তার ধারাবাহিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওই চার্জশিটে। সিবিআই জানিয়েছে, প্রথমে একটি স্থানীয় ক্লাব জমিটির একটি অংশ চেয়ে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে। সুরাহা চেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা পরামর্শ দেয় ঝামেলা এড়াতে জমিটি বিক্রি করে দেওয়ার। উপায়ান্তর না দেখে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রতের দ্বারস্থ হন সঙ্ঘের স্থানীয় মহারাজ। কিন্তু দেখা যায় অনুব্রতও জমিটি বিক্রি করতেই বলছেন। ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই জমি তাঁরই একটি সংস্থাকে বেচে দিতে বলেন অনুব্রত। সেই সংস্থারই নাম এএনএম অ্যাগ্রোকেম ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড।

সিবিআই জানিয়েছে, প্রথমে ক্লাব, তার পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং শেষে অনুব্রত একই ভাবে জমি বিক্রির কথা বলায়, শেষে উপায়ান্তর না দেখেই জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য হন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। অনুব্রতের প্রস্তাবে না বলার সাহস হয়নি তাঁদের। আশ্রমের তরফে তদন্তকারীদের জানানো হয়েছে, তখন পরিস্থিতি এমনই ছিল যে ওই প্রস্তাবের অন্যথা করতে পারেননি তাঁরা। জমির বাজারদরের থেকে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে জেনেও তাঁরা জমিটি বিক্রি করেন। সিবিআই জানিয়েছে, জমিটি বিক্রি করার সময় কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া বা অন্যদের থেকে দর চাওয়ার মতো নিয়ম মানা হয়নি। সঙ্ঘ কর্তৃপক্ষেরও জমিটির তৎকালীন বাজারদর জানতে চাওয়া বা প্রশ্ন করার সুযোগ হয়নি।

গোটা প্রক্রিয়াটিই চুপচাপ সারা হয়েছিল। মালিকানা হস্তান্তরের নথি সই করার সময় সঙ্ঘের তরফে হাজির ছিলেন স্বামী সংঘমিত্রানন্দ। তবে অনুব্রত ছিলেন না। সুকন্যার অ্যাগ্রোকেমের তরফে এসেছিলেন সংস্থার আরেক ডিরেক্টর বিদ্যুৎ বরণ গায়েন।

ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে সিবিআই চার্জশিটে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সুকন্যা এবং বিদ্যুতের ওই সংস্থাটির নামে এমন ১৬ টি সম্পত্তি রয়েছে। বোলপুরের কালিকাপুরে হারাধন মণ্ডল রোডে সংস্থার অফিস। আর এই মুহূর্তে ওই সংস্থার বাজারদর ৭ কোটি ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৯৪ টাকা।

উল্লেখ্য, গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির খোঁজ করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মর্মে অনুব্রত-কন্যা সুকন্যাকে বুধবারও নথি-সহ ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার এই মামলায় চার্জশিট দিয়েছে তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal Sukanya Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE