Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
তর্জমা করে দিল্লিতে

বুঝে কাজ করুন, ফের হুমকি-বচন কেষ্টর

এক দিকে নির্বাচন কমিশন হুঁশিয়ারির পর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। জানাচ্ছে, বেচাল দেখলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। অন্য দিকে অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই। তাঁর মুখে লাগাম পরায়, কার সাধ্যি!

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

এক দিকে নির্বাচন কমিশন হুঁশিয়ারির পর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। জানাচ্ছে, বেচাল দেখলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। অন্য দিকে অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই। তাঁর মুখে লাগাম পরায়, কার সাধ্যি!

দু’বছর আগে লোকসভা ভোটের প্রচার পর্বে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার দায়ে কমিশন শো-কজ করেছিল বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডলকে। তিনি অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ সবে তাঁর থোড়াই কেয়ার! কারণ, এ বারও বিধানসভা ভোট পর্ব সূচনার মুখে দিল্লির নির্বাচন সদনে তাঁর নামে নালিশ গিয়েছে। ভোটারদের উদ্দেশে সরাসরি হুমকির তির ছোড়ার জন্য।

আর এর মূলে মঙ্গলবার দলীয় এক কর্মিসভায় অনুব্রতের একটি বক্তৃতা। যেখানে তিনি কর্মীদের বলেছেন, ‘‘যদি দেখেন পাঁচ-সাতটা বাড়ি ভোট দেবে না, তা হলে তাদের ভোট দেওয়ার দরকার নেই। সেই সব পরিবারকে বলে দেবেন, নির্বাচন কমিশন-কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের দিন পর্যন্ত। তার পরে আমরাই ‘কন্টিনিউ’ থাকব। সেই বুঝে কাজ করুন।’’

শাসক দলের নেতার এ হেন শাসানি-বক্তৃতা একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার মূল বক্তব্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিল্লিতে পাঠিয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) অফিস, কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে অভিযোগ আসার অপেক্ষা না-করে। বোলপুরের ওই কর্মিসভায় দলীয় পর্যবেক্ষক তথা বিদায়ী মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতেই অনুব্রতের নির্দেশ, ‘‘এখনই নয়, ভোটের পাঁচ দিন আগে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে যে ভাবে (অপারেশন) চালিয়ে আসেন, সে ভাবে চালিয়ে আসবেন। এক-একটা বিধানসভায় পঞ্চাশ হাজার ভোটের লিড করতে হবে। এটা কিন্তু বলে দিলাম। যে কোনও মূল্যে পঞ্চাশ হাজার লিড দিতে হবে।’’

সরব বিরোধী শিবিরও। অনুব্রতের বক্তব্যকে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের আওতায় ফেলে দ্রুত ব্যবস্থার দাবিতে কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামেরা। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সিউড়ির প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোটে উনি (অনুব্রত) যা যা করেন বা করতে চান, সবটাই খোলাখুলি বলে দিয়েছেন! এটা ভোটারদের প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকি।’’ সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বুধবার বলেন, ‘‘বক্তৃতার অডিও ক্লিপ জোগাড় করেছি। কমিশনে জমা দিয়ে নালিশ জানানো হবে।’’ প্রসঙ্গত, বিরোধী থাকাকালীন তৃণমূলের চিরন্তন অভিযোগ ছিল, বামেরা রাজ্যে অবাধে ভোট হতে দেয়নি, এমনকী বিপক্ষের ভোটারকে তারা বুথ পর্যন্ত পৌঁছাতেই দিত না। আর তারই প্রেক্ষিতে ক’দিন আগে দু’টি প্রকাশ্য সভায় অনুব্রত ঘোষণা করে দেন, ‘‘চৌত্রিশ বছর বামেরা যে ভাবে ভোট করেছে, ২০১৬-য় আমরা সেই কায়দায় ভোট করব।’’

এই অবস্থায় অনুব্রতের মঙ্গলবারের মন্তব্যকে ওই ‘বিশেষ পন্থা’রই অঙ্গ হিসেবে দেখছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, বিরোধী ভোটারদের ঘরে আটকে রেখে দলনেত্রীকে ‘শান্তিপূর্ণ ও অবাধ’ ভোট উপহার দেওয়ারই ছক কষেছেন ‘দক্ষ সংগঠক’ অনুব্রত। একই সঙ্গে পরিকল্পনা রূপায়ণের পথও বাতলে দিয়েছেন কর্মীদের। ‘‘লোকসভা ভোটেও তো ওরা এ ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে এসেছিল!’’
— আক্ষেপ এক সিপিএম নেতার।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিন তৃণমূলনেত্রীর করা মন্তব্যকেও সামনে আনছে বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিন বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো তিন দিনের জন্য! ভোটটা হয়ে গেলে চলে যাবে। তার পরে তো আমাদেরই দেখতে হবে!’’ বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী যে সাময়িক ভাবে থাকবে এবং পরে রাজ্য পুলিশের ভরসাতেই থাকতে হবে, ঘুরপথে তা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূলনেত্রী বিপক্ষের ভোটারদের চাপে রাখার চেষ্টা করেছেন।

অনুব্রতও নেত্রীর দেখানো পথে হাঁটছেন বলে বিরোধীদের পর্যবেক্ষণ। অনুব্রত যদিও এ দিন দাবি করেন, ‘‘ও সব আমি বলিনি। ঘরোয়া বৈঠক ছিল। ঘরের ভিতরে আমি বৌকে মারব না কী করব, তা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বলেছি, যাঁরা আমাদের ভোট দেবেন না, তাঁদের কিছু করার দরকার নেই। নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’’ ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘এমন কিছু শুনিনি।’’ (কর্মিসভার অডিও রেকর্ডিং অবশ্য আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে।)

বিরোধীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযোগ দায়ের করার আগেই কিন্তু রাজ্যের সিইও দফতর সক্রিয়। এ দিন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘অনুব্রতের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিংস আমরা পাইনি। দু’টি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ইংরেজিতে তর্জমা করে আমরা দিল্লিতে পাঠিয়েছি।’’

এ বার দিল্লি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে বলে জানিয়েছেন দিব্যেন্দুবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE