(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। সুকান্ত মজুমদার (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শহিদ দিবস’ কর্মসূচির দিন ২১ জুলাই ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করা হবে। গত রবিবার রাজভবনের সামনে ভোটের সন্ত্রাসে ‘আক্রান্ত’দের নিয়ে বসা ধর্না থেকে ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রবিবার সেই কর্মসূচি সে ভাবে পালনই করল না রাজ্য বিজেপি। বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি জায়গায় থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা দেখা গেলেও দলের কোনও প্রথম সারির নেতা, সাংসদ, বিধায়ককে কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি। স্বয়ং শুভেন্দুও কোথাও যাননি। তবে কি শুভেন্দুর ঘোষিত কর্মসূচি অসফল করল বিজেপিই! এমন জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি এক দিনে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু সেই প্রস্তাবের পরে রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে ঠিক হয় আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে। যে জেলা যে দিন সুবিধাজনক মনে করবে থানা ঘেরাও করবে।’’ কিন্তু বিজেপি কি এই কর্মসূচিকে সে ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না? সুকান্ত বলেন, ‘‘তেমন কোনও বিষয় নেই। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি তো সারা বছরই চলে এবং চলবে। কিন্তু দলের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যে সব জেলায় তা করতে হয়। আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। সেটাকেই জেলা নেতৃত্ব অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’’
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু ঘোষণা করেছিলেন, ২১ জুলাই দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ধর্মতলার মঞ্চে বক্তৃতা শুরু করবেন, তখন বিজেপি কর্মীরা রাজ্যের প্রতিটি থানায় মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাবেন। সেই মতো কয়েকটি জায়গায় কর্মসূচি হয়। শুভেন্দুর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া মোড়ে বিজেপির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। সেখানে ফিরহাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। তবে সেখানে শুভেন্দু ছিলেন না। এ ছাড়াও নদিয়ার গাংনাপুর থানা ঘেরাও হয়। কলকাতার বটতলা থানা ঘেরাও করতে গেলে কয়েক জনকে আটকও করে পুলিশ।
তবে উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি জায়গায় রাজ্য নেতৃত্বের পরিচিত মুখ দেখা যায়। ভাটপাড়া থানার সামনে বিক্ষোভে উপস্থিত রাজ্য বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র। আর জগদ্দল থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভে ছিলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহ, ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিংহ।
২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঘোষণার সময়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় এক কোটি লোককে ভোট দিতে দেয়নি। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হাত-পা কার্যত বেঁধে রাখা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক আরিজ আফতাব কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজ করতে দেননি, তার প্রমাণ আমরা তুলে ধরব। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, আইকার্ড চেক করতে দেওয়া হয়নি।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘২০২৪-এর লোকসভা ভোট এবং চারটি উপনির্বাচনে হিন্দুদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। রায়গঞ্জে অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে, রানাঘাটে ৭০ হাজার মানুষকে এবং বাগদায় ১০ হাজার লোককে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। মানিকতলার আটটি ওয়ার্ডে ভোট লুট হয়েছে। তাই ২১ জুলাই রাজ্যের সর্বত্র বেলা ১টায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে দলমত নির্বিশেষে আমি সকলকে রাস্তায় নামতে বলব।’’ তবে অন্য দল দূরের কথা তার নিজের দলই সে ভাবে কর্মসূচি পালন করল না। সুকান্ত যাই বলুন, বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের পক্ষে থানা ঘেরাও কর্মসূচির কোনও নির্দেশ জেলাস্তরে পাঠানো হয়নি।
শুভেন্দু এমনটাও বলেন, ‘‘আগামী দিনে নবান্ন অভিযানের মতো কর্মসূচির আবারও প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। ১৭ তারিখ আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক রয়েছে। সেখানে আমি দলের কাছে এই প্রস্তাব রাখব।’’ যদিও দলের সেই অভ্যন্তরীণ বৈঠকে মোদীর স্লোগান বদলে দেওয়ার ডাক দিয়ে দলের সাংগঠনিক কাঠামো বদলে ‘সংখ্যালঘু মোর্চা’ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিতর্কে জড়ান শুভেন্দু। দলের পক্ষে সুকান্ত স্পষ্টই জানিয়ে দেন, শুভেন্দুর ওই দুই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয় বিজেপি। শুভেন্দুও তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বলে সমাজমাধ্যমে দাবি করেছিলেন। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। এ বার ২১ জুলাইয়ে তাঁর ঘোষিত কর্মসূচি রূপায়ণ না হওয়ায় রাজ্য সংগঠনের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব যেন থেকেই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy