Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC Old vs New Controversy

নবীন-প্রবীণ সমন্বয়বার্তা মমতা-অভিষেকের কণ্ঠে, তবে ২১ জুলাইয়ে ব্রাত্য রইল তিন প্রবীণ-কণ্ঠস্বর

রবিবার অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উৎসাহ-উদ্দীপনা, দু’টিই তৃণমূলের একই বৃন্তে দু’টি কুসুম।’’ এ-ও জানান যে, পুরনোরা নতুনদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করবেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে। ছবি: ফেসবুক।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৪ ১৯:২৫
Share: Save:

তৃণমূলের অন্দরের ‘নবীন-প্রবীণ’ বিতর্ক চাপা পড়ে গিয়েছিল লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে। রবিবার তা আবার ফিরে এল ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে। ওই বিতর্কের ‘হোতা’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তুললেন সেই প্রসঙ্গ। বললেন, নতুনদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি করতে মাঠে নামতে হবে পুরনোদের। নবীন-প্রবীণের নাম না করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামার বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু সমাবেশের বক্তার তালিকায় সেই ‘সামঞ্জস্য’ চোখে পড়ল না। তৃণমূলের ‘পুরনো’ বা ‘প্রবীণ’দের প্রতিনিধিত্ব দেখা গেল না। তার মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য’ তিন প্রবীণ— সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের মধ্যে প্রথম জন লোকসভায় তৃণমূলের নেতা। দ্বিতীয় জন প্রবীণতম সাংসদ। তৃতীয় জন লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক। তা ছাড়াও, এঁরা প্রত্যেকেই অতীতে ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের নিয়মিত বক্তা। রবিবারের সভায় তাঁরা সকলেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কল্যাণকে তা-ও সভার শেষে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার জন্য ডেকে নিয়েছিলেন মমতা। বাকি দু’জনকে তেমন ভাবে চোখেই পড়েনি।

তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু তা তুঙ্গে উঠেছিল গত বছর। যখন অভিষেক রাজনীতিতে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ে প্রকাশ্যেই তাঁর অভিমত জানিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা নরেন্দ্র মোদীর মতো ‘ব্যতিক্রম’ বাদ দিলে সাধারণ ভাবে রাজনীতিকদের ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়া উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। বলেছিলেন, ‘‘সমস্ত পেশাতেই অবসরের বয়স আছে। রাজনীতিতে কেন থাকবে না? কারণ, বয়স হলে কর্মক্ষমতা কমে।’’

সেই সূত্রেই অনেকে মনে করেছিলেন, সুদীপ-সৌগত-কল্যাণের মতো নেতারা লোকসভা ভোটে টিকিট না-ও পেতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিন জনই টিকিট পান। ভোটে জেতেনও। যদিও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে, ওই তিন নেতার কারওরই ভোটের প্রচারে যাননি অভিষেক। তবে লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ভাল ফল করায় সেই বিতর্ক ‘চাপা’ পড়ে। রবিবার বিতর্কে ইতি টানার ইঙ্গিত শোনা গিয়েছে অভিষেকের কণ্ঠেও। যখন তিনি বলেছেন, ‘‘পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উৎসাহ-উদ্দীপনা, দু’টিই তৃণমূলের একই বৃন্তে দু’টি কুসুম।’’ ব্যাখ্যা করে অভিষেক বলেন, ‘‘যাঁরা পুরনো রয়েছেন, তাঁদের নতুনদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার জন্য মাঠে নেমে লড়াই করতে হবে। সামঞ্জস্য রেখে করতে হবে।’’ পরে মমতাও তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘সবাই দলের কর্মী। সবাইকে একসঙ্গে নিয়েই চলতে হবে।’’ কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের ওই ভাবনার প্রতিফলন বক্তার তালিকায় দেখা যায়নি।

তৃণমূল সূত্রের খবর, শনিবার সভাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে বক্তার তালিকা মমতা নিজেই তৈরি করে দিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর হাতে। তবে অনেকেই বলছেন, রবিবারের সমাবেশে বক্তার তালিকা ঠিক করা হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিকে দিয়ে। সেখানে যেমন ছিলেন সংখ্যালঘু মুসলিম, তেমনই ছিলেন রাজবংশী, মতুয়া, সাঁওতালি সমাজের প্রতিনিধিও। অর্থাৎ, নেত্রী মমতা চেয়েছেন, দলের বার্ষিক সমাবেশের বক্তার তালিকায় সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের উপর জোর দিতে। আবার তৃণমূলের অন্য একাংশের মতে, প্রতি বছর সমাবেশে অখিলেশের মতো ‘অতিথি বক্তা’ থাকেন না। অখিলেশকে যে হেতু মমতা বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাই তাঁর বক্তৃতার জন্য বরাদ্দ ছিল তুলনায় বেশি সময়। অখিলেশের জন্য সময় বার করতে গিয়ে দলের তিন প্রবীণ নেতাকে বক্তা তালিকা থেকে বাদ রাখছে হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই সমাবেশ আড়াইটার বেশি দীর্ঘায়িত করতে চান না মমতা। কারণ, দূরদূরান্ত থেকে যে লক্ষ লক্ষ সমর্থক আসেন, তাঁদের ফিরে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও দিতে হয়।

রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা এবং অভিষেক ছাড়া বক্তা ছিলেন মোট ছ’জন। তাঁদের মধ্যে ‘অতিথি’ অখিলেশ যাদবকে বাদ দিলে মঞ্চে বক্তৃতা করেন যথাক্রমে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, কোচবিহারের সাংসদ জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া (রাজবংশী), ফিরহাদ হাকিম, বনগাঁর মধুপর্ণা ঠাকুর (মতুয়া) এবং নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু (সাঁওতাল)। তৃণমূলের প্রতি বছরের ২১ জুলাইয়ের বক্তার তালিকা মেলালে দেখা যাবে এ বছরের বক্তা তালিকা সামান্য ছোট। প্রতি বার ১০ থেকে ১১ জন বক্তৃতা করেন। এ বছর মমতা এবং অভিষেককে নিয়ে মোট ৮ জন বক্তৃতা করেছেন। বাদ গিয়েছেন ২-৩ জন। ঘটনাচক্রে, তিন জনের হিসাবও হাতে মজুত।

অন্য বিষয়গুলি:

21 July TMC Rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy