অঞ্জনা ভৌমিক
জীবনে তিনি ছিলেন এক। মরণে বহু হলেন হাওড়া উদয়নারায়ণপুরের গৃহবধূ অঞ্জনা ভৌমিক (৪৯)। তাঁর হৃদ্যন্ত্র নিয়ে এক জন, কিডনি নিয়ে দু’জন আর লিভার নিয়ে এক জন নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। বুধবার এসএসকেএম এবং আন্দুল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অঞ্জনাদেবীর চার অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে চার জনের দেহে।
ওই মহিলার একটি কিডনি পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের নওদার বাসিন্দা মোজাম্মেল হকের তরুণী স্ত্রী যূথিকা বিবি। অন্য কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে ৬০ বছরের হারুন রশিদ খানের শরীরে। বছরখানেক অপেক্ষার পরে তেহট্টের বাসিন্দা যুবক মৃন্ময় বিশ্বাস পেয়েছেন অঞ্জনাদেবীর হৃদ্যন্ত্র। তাঁর লিভার প্রতিস্থাপিত হয়েছে বারাসতের কাজিপাড়ার প্রৌঢ় বাসিন্দা রীনা শীলের শরীরে। পরিবার সূত্রের খবর, অঞ্জনাদেবীর কর্নিয়া এবং ত্বকও সংরক্ষিত হয়েছে।
এতগুলো পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে মৃতার জামাই মিলন বেরা বলেন, ‘‘আমার শাশুড়ি আর ফিরে আসবেন না। তবে তাঁর অঙ্গে এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচবে ভেবে শোকেও শান্তি পাচ্ছি আমরা।’’
মৃতার দাদা শ্যামল মণ্ডল জানান, রবিবার বিকেলে আচমকা অসুস্থ বোধ করেন উদয়নারায়ণপুরের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জনাদেবী। রক্তবমি শুরু হয়। ভর্তি করানো হয় স্থানীয় নার্সিংহোমে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দুল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, ব্রেন সেল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন অঞ্জনাদেবী। মঙ্গলবার তাঁর ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তার পরেই স্বামী সন্তোষ ভৌমিক এবং পরিবারের অন্যদের ডেকে অঙ্গদানের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরিবারের সদস্যেরা তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান।
গ্রিন করিডর করে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এসএসকেএমে প্রথমে পৌঁছয় অঞ্জনাদেবীর হৃদ্যন্ত্র। তার পরে আসে লিভার ও কিডনি। ‘স্কুল অব ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড লিভার ডিজিসেস’ বিল্ডিংয়ে লিফট না-আসায় দু’মিনিটেরও বেশি অপেক্ষা করতে বাধ্য হন ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। গ্রিন করিডর করে যেখানে অঙ্গ আনা হচ্ছে, সেখানে লিফট কেন আগে থেকে তৈরি থাকবে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এসএসকেএমে হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন হল এই প্রথম। ভূগোলে স্নাতক মৃন্ময় বেলঘরিয়ার মেসে থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন। গত বছর পুজোর সময় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মৃন্ময়ের কাকা রুবেল বিশ্বাস জানান, চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন ছাড়া রাস্তা নেই। এসএসকেএমের চিকিৎসকেরাও একই কথা জানান। মঙ্গলবার বিকেলে কার্ডিওথোরাসিক ভাসকুলার সার্জারি (সিটিভিএস) বিভাগ থেকে ফোন করে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে মৃন্ময়কে ভর্তি করাতে বলা হয়। দেরি করেনি বিশ্বাস পরিবার।
বারাসতের বাসিন্দা রীনা শীলের লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা চলছিল পাঁচ বছর ধরে। মেয়ে রিয়া জানান, এক বছর আগে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। সরকারি নিয়ম মেনে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আর্জি জানানোর মাস ছয়েকের মধ্যে সুসংবাদ পায় রীনার পরিবার। এ দিন অঞ্জনাদেবীর লিভার বসানো হয় রীনার শরীরে।
যূথিকার বছর দশেকের একটি ছেলে রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তানের আশায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরে কিডনির অসুখের কথা জানতে পারেন তিনি। যূথিকার স্বামী মোজাম্মেল জানান, মাস ছয়েক আগে ফোন করে তিন ঘণ্টার মধ্যে এসএসকেএমে আসতে বলা হয়। তা সম্ভব ছিল না বলে সে-বার যূথিকার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়নি। এ দিন হল।
‘‘হৃদ্যন্ত্র ও কিডনি যাঁদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে, তাঁরা ভাল আছেন,’’ বললেন এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসক তথা রোটো (রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন)-র যুগ্ম অধিকর্ত্রী অর্পিতা লাহিড়ী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy