পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে বলেও এ দিন জানা গিয়েছে। রাত ন’টা নাগাদ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। তবে রাত পর্যন্ত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে ক্ষুব্ধ ছাত্র এবং প্রতিবাদীরা জমায়েত করেন।
ফাইল চিত্র।
নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ‘কলকাতার শাহিনবাগ’ পার্ক সার্কাসের মাঠে নিয়মিত দেখা যেত তাঁকে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নেতা আনিস খান লিখতেন, ‘আমার রক্ত দিয়ে সংগ্রামী ব্যানার লেখা হবে!’
সেই তরুণের নৃশংস খুনের অভিযোগ ওঠায় শনিবার দফায় দফায় প্রতিবাদে সরব হল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নাগরিক সমাজের একাংশও আন্দোলনে যোগ দেন। ফলে, সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাস মোড়ে কিছু ক্ষণের জন্য অবরোধের জেরে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অবশ্য পুলিশের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় রাস্তায় ভিড় এমনিতেই কম থাকায়, এর বেশি প্রভাব পড়েনি।
পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে বলেও এ দিন জানা গিয়েছে। রাত ন’টা নাগাদ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। তবে রাত পর্যন্ত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে ক্ষুব্ধ ছাত্র এবং প্রতিবাদীরা জমায়েত করেন। সাদা পোশাক এবং উর্দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশও ঘটনাস্থলে মজুত ছিল।
আনিস গণ আন্দোলনের অগ্রণী
কর্মী হিসাবে নানা মহলে পরিচিত। ওই আন্দোলনে শামিল আলিয়ার আর এক ছাত্র রোকিম শেখ শনিবার বলেন, “সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অক্লান্ত সৈনিক ছিল আনিস। যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও শত্রু ছিল না। ওকে কেউ এ ভাবে খুন করতে পারে, ভাবতে পারছি না।”
আনিসের কথা মনে পড়লে এক সদাহাস্যময় ছেলের কথাই মনে পড়ে আলিয়া বিশ্ববদ্যালয়ের ইলেট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনের অধ্যাপক সাইন শেখের। সাইন বলেন, “ও এমবিএ পড়ত। তবে ওকে খুব ভাল করে চিনতাম। নানা প্রতিবাদে ছেলেটাকে দেখা যেত।”
রোকমি জানান, ২০১৫ সালে আনিস আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউটাউন ক্যাম্পাসে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে কিছু দিনের জন্য নিউটাউন ক্যাম্পাসের হস্টেলেও ছিলেন আনিস। পরে বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতেন। রোকমি জানান, ২০১৭ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন হয়। সেখানেই আনিসকে প্রথম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। কাজি মিনহাজুল ইসলাম নামে আলিয়ার এক প্রাক্তন ছাত্র তথা আনিসের বন্ধু বলেন, “২০১৭ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই আন্দোলনে ওর পাশে ছিলাম। ওর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ ছিল। এর পরে পার্ক সার্কাসে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনেও ওর পাশে থেকেছি। কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনেও আনিস বরাবর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের এক তরতাজা প্রতিবাদী মুখের এমন খুনের ঘটনা মানতে পারছি না। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।”
বর্তমানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হলেও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের পড়ুয়াদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের পাশে ছিলেন আনিস। জানালেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের ছাত্রেরা। আনিস খান হত্যার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিল হয় আলিয়ার পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাস থেকে। ওই মিছিলে যোগ দেওয়া আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ছাত্র সাজিদুর রহমান বলেন, “আলিয়ার জমি হস্তান্তর বিতর্ক থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের হস্টেলের পরিকাঠামো ঠিক করা, স্কলারশিপের টাকা বাড়ানোর দাবিতে আমাদের লাগাতার আন্দোলনেও আনিসদা পাশে ছিল। আমাদের বিক্ষোভ মঞ্চে নিয়মিত আসত।”
সামাজিক যে কোনও কাজেও আনিসকে পাশে পাওয়া যেত বলে জানান বন্ধু মিনহাজুল। তাঁর কথায়, করোনার সময়ে লকডাউনে বাড়ি ফিরতে না-পারা শ্রমিকদের ফেরানোর উদ্যোগও নিয়েছিলেন আনিস। কোন রাজ্যে কত জন আটকে আছে খোঁজ রাখতেন। টাকা পাঠিয়ে তাঁদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হতেন। এ দিন ‘আনিস হত্যার’ ন্যায়বিচার চেয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ও নিউটাউন ক্যাম্পাস
থেকেও মোমবাতি মিছিল বেরোয়। তাতে শামিল কিছু ছাত্র বলেন, ‘‘জাস্টিস ফর আনিস বলে আমরা সবাই এক হয়েছি। দরকারে আরও বড় আন্দোলন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy