তবে অনেকেই বলছেন, প্রশিক্ষণহীন সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের নির্দিষ্ট পরিধি আছে। কিন্তু সব জায়গায় তাদের পুলিশের কাজই করানো হচ্ছে। হাতে ওয়াকিটকি, লাঠি দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়ন্ত্রণের দায় কেন পুলিশের কর্তারা নেবেন না, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে।
ফাইল চিত্র।
আইন রক্ষাই তাঁদের কর্তব্য। কিন্তু উর্দিধারীদের দল নিজেরাই কি সর্বদা আইন এবং নিয়ম মেনে চলেন?
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর পরে এই প্রশ্নই উঠেছে। বুধবার সেই ঘটনায় এক জন হোমগার্ড এবং এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার পরে পুলিশের বিরুদ্ধে আইন অমান্যের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণহীন সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে কেন অপরিসীম ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে থানায় বসানো হচ্ছে এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের। তাঁরা থানার খবর প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের একটি মহল থেকে।
পুরোদস্তুর পুলিশের হাতে তো বটেই, পথেঘাটে সিভিক ভলান্টিয়ার কিংবা হোমগার্ডদের মতো তথাকথিত আধা-পুলিশের হাতেও মানুষের হেনস্থার অভিযোগ নতুন নয়। বছর কয়েক আগে মধ্যমগ্রামে সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে এক মোটরবাইক আরোহীর মৃত্যুর ঘটনাও মানুষের স্মৃতি থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “সিভিক ভলান্টিয়ারের নামে যেন এক দল নৃশংস রোবটকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পথেঘাটে লোককে হেনস্থা করছে, মারছে। এমনকি দিনেদুপুরে কার্যত তোলাবাজির অভিযোগও মিলছে!”
মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনজীবীদের অনেকেই মনে করেন, সামগ্রিক ভাবে পুলিশ বাহিনীকে বেপরোয়া করে দেওয়া হয়েছে। তার জেরেই ফৌজদারি কার্যবিধি, মানবাধিকার আইন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কোনও কিছুর পরোয়া না করেই উর্দির শাসন চলছে। জয়ন্তনারায়ণ বলছেন, রাতে কারও বাড়িতে তল্লাশি করার নিয়ম রয়েছে। আনিসের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এ ব্যাপারে নির্দেশিকা আছে। বাড়িতে মহিলা থাকলে রাতে পুলিশ বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারে না। কারও বিরুদ্ধে এফআইআর হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা থানার ওয়েবসাইটে দিতে হবে। তা-ও পুলিশ মানেনি। আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার অবশ্য অভিমত, যদি কোনও পুলিশকর্মী কাজে ভুল করেন তা হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভুল। সামগ্রিক ভাবে বাহিনীকে এ ভাবে দায়ী করা যায় না। আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
তবে শুধু তল্লাশি বা কার্যকলাপ নয়, আনিস কাণ্ডে পুলিশের তদন্তের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। হাই কোর্টের আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষের পর্যবেক্ষণ, শুধু তল্লাশি বা হানা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ নয়,পুলিশের তদন্তের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, পুলিশ গিয়েছিল কিনা, থানার জেনারেল ডায়েরি দেখে তা বার করতে পাঁচ মিনিট লাগে। প্রথম থেকেই পুলিশ যে মনোভাব নিয়ে এগিয়েছে তাতে বহু প্রমাণ নষ্ট করে তদন্তকে দুর্বল করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন।
তবে অনেকেই বলছেন, প্রশিক্ষণহীন সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের নির্দিষ্ট পরিধি আছে। কিন্তু সব জায়গায় তাদের পুলিশের কাজই করানো হচ্ছে। হাতে ওয়াকিটকি, লাঠি দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়ন্ত্রণের দায় কেন পুলিশের কর্তারা নেবেন না, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। খোদ রাজ্য পুলিশেরই এক কর্তার পর্যবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ ছাড়া এক দল মানুষের গায়ে উর্দি এবং হাতে পুলিশের অপরিসীম ক্ষমতা দিলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে। প্রশ্ন উঠেছে, সামগ্রিক ভাবে এই মানসিকতার দায় কি কর্তাদের নয়? কার নির্দেশে আনিসের সঙ্গে এমন ব্যবহার হল তার খোঁজ কি উচিত নয়?
আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, মানবাধিকার রক্ষায় কিংবা পুলিশের মানবিক আচরণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কিংবা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা থাকলেও তা অমান্য করার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক অতীতে কোনও বড় মাপের সাজা হয়নি। কলকাতার সিঁথি থানার দু’টি পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর মামলা হাই কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন। আদালতে এ ভাবে মামলা ঝুলে থাকার ফলেই কি পুলিশের বেপরোয়া মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy