Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

আগুন জ্বালাচ্ছেন অমিত শাহ, অভিযোগ মমতার

নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রতিবাদে সোমবার থেকে পরপর তিনদিন পথে নেমে মিছিল করেন মমতা।

হাওড়া থেকে এনআরসি-বিরোধী পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়া থেকে এনআরসি-বিরোধী পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৩
Share: Save:

দেশে আগুন ‘জ্বালানো’র অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শাহের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনি শুধু আপনার দলের (বিজেপি) সভাপতি নন। দেশে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। আগুন জ্বালানো নয়, আগুন নেভানোই আপনার কাজ।’’

এরই পাশাপাশি রেলের সম্পত্তি নষ্ট করলে দেখামাত্র গুলির যে নির্দেশ রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গদি দিয়েছেন, তারও কড়া নিন্দা করেছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক হাজার বুলেটের দামের থেকে ১০ জন লোক যদি পথে নেমে শান্তির কথা বলেন, তা হলে তার দাম অনেক বেশি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বুলেট দিয়ে হয় না। দাঙ্গা, সন্ত্রাস দিয়ে হয় না।’’

আরও পড়ুন: সানার ‘রাজনৈতিক’ পোস্ট নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া, সৌরভ বললেন: ওকে জড়াবেন না

নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রতিবাদে সোমবার থেকে পরপর তিনদিন পথে নেমে মিছিল করেন মমতা। বুধবার তৃতীয় দিনে হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া সেতু হয়ে ব্যবসায়ীদের এলাকা বড়বাজার ছুঁয়ে এবং ব্যস্ততম অফিসপাড়া ডালহৌসির মধ্য দিয়ে বড় মিছিল নিয়ে মমতা বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ধরে পৌঁছন ধর্মতলায়। এ দিনই দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। আজ, বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এবং কাল, শুক্রবার পার্ক সার্কাস ময়দানের সমাবেশে বক্তৃতা করবেন মমতা। ২৪ ডিসেম্বর আরও একটি বড় মিছিলেরও ডাক দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘এর পর দিল্লি ও পঞ্জাবেও যাব।’’

সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ রাজ্যের একের পর এক রাজ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এই অবস্থাতেও মানুষের ‘ক্ষোভ’ প্রশমনের চেষ্টা না করে শাহ সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তোলেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দেশ জ্বলছে। এই অবস্থাতেও কেন আপনি বলছেন, এনআরসি হবেই হবে? কেন বলছেন, আধার কার্ড চলবে না? যদি আধার কোনও কাজেই না লাগে, তা হলে ফোনের সঙ্গে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে কেন জুড়েছিলেন এই কার্ড?’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যে ভোটার আই-কার্ড দেখিয়ে মানুষ আপনাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে, এখন সেই পরিচয়পত্র না চললে কি বিজেপির মাদুলি চলবে?’’

বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতাই আগুন লাগিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগুন নেভাচ্ছেন।’’ একই সঙ্গে আধার-প্রসঙ্গে রাহুলের খোঁচা, ‘‘আধার কার্ড করেছিল ইউপিএ সরকার। আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণ হওয়ায় ওঁর দলের আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। তাই এত গায়ের জালা ওঁর।’’

গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে গোলমালের ঘটনা ঘটেছে, তার পিছনে বিজেপি-র ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন মমতা। এ দিনও একই অভিযোগ শানিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘বিজেপি নেতারা যদি মনে করে থাকেন যে আগুন নিয়ে খেলে যা খুশি তাই করবেন, তা হলে তাঁরা ভুল করছেন। আর আমাদের এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত চলবে। আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে, এটা ভেবে কেউ আমাদের হেয় করবেন না।’’

প্রতিবাদ চালিয়ে গেলেও অশান্তির পথে যাতে কেউ না যান, সেই আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘মনের রাগ, ক্ষোভ উজাড় করে দিন। কিন্তু ট্রেনে আগুন লাগিয়ে বা রাস্তা অবরোধ করে নয়। ছবি এঁকে, গান গেয়ে রাগ জানান। আর ঢাক, ঢোল, শাখ, করতাল, উলু যে যেটা বাজাতে পারেন, আগামী দিনে এই আন্দোলনে সেটাই বাজাবেন।’’ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপর নিগ্রহের প্রতিবাদে আজ, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল...’ গানের সঙ্গে একে অপরের হাতে রাখি বেঁধে দেবেন বলে মমতা জানিয়েছেন।

কোনও চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাঁকে এবং তৃণমূলকে পর্যূদস্ত যে করা যাবে না, তা বুঝিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আপনারা পাহাড়ের মতো হলে আমরাও ছোট ছোট ইঁদুর। লড়াই করে উঠেছি আমরা। তাই ছোট ছোট ইঁদুর হয়ে তোমাদের পাহাড়কে কুটুস কুটুস করে কেটে দেব। মনে রেখ।’’

তাঁকে ‘অপদস্থ’ করতে তাঁর নামে ভুয়ো ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন মমতা। সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতেই তিনি ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই পথে নেমেছিলেন এবং পুলিশের গুলিতে তদানীন্তন যুব কংগ্রেসের ১৩ জন নিহত হন। সে কথা মনে করিয়ে মমতার মন্তব্য, ‘‘বিজেপি ভুয়ো টাকায় ভুয়ো ভিডিও করে। আমার বিরুদ্ধে ভুয়ো ভিডিও ছড়াবেন না।’’ দলের যুব-ছাত্রদের এ ধরনের ভিডিও-প্রচারের মোকাবিলা করারও পরামর্শ দেন তৃণমূল নেত্রী।

মমতার পরবর্তী মিছিলের আগের দিন, ২৩ ডিসেম্বর কলকাতায় বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডার নেতৃত্বে সিএএ এবং এনআরসি-র সমর্থনে মিছিল হওয়ার কথা। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘বিজেপি চায়, ওর পায়ে পা দেব আমরা। কিন্তু তা আমরা দিতেও দেব না, দেব-ও না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy