জবাবি বক্তৃতা হল। কিন্তু জবাব মিলল কই?
শিল্পায়নের পথে হেঁটে সরকার কেন রাজস্ব আয় বাড়াচ্ছে না, তিন দিনের বাজেট বিতর্কে প্রশ্নটা বারবার তুলেছেন বিরোধীরা। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মঙ্গলবার জবাবি ভাষণে অনেক কথা বললেন। কিন্তু এই প্রশ্নেরই কোনও জবাব দিলেন না।
বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, এ রাজ্যে কোনও বড় শিল্প হচ্ছে না। তার ফলে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে। মেধা চলে যাচ্ছে অন্য রাজ্যে। যে ন্যানো কারখানা সিঙ্গুরে হওয়ার কথা ছিল, সেটা গুজরাতের সানন্দে চলে যাওয়ায় ওই রাজ্যের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। ওই আয় পশ্চিমবঙ্গেরই হতে পারত। কিন্তু হল না।
অর্থমন্ত্রীর যদিও দাবি, রাজ্যের রাজস্ব আয় বেড়েছে। যে দাবিকে আমল দিতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের যুক্তি, তিনটি উপায় ছাড়া এ রাজ্যে আর কোনও ভাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। এক, আগে কেন্দ্রের রাজস্বের ৩২% পেত রাজ্য। এখন সেই ভাগ বেড়ে হয়েছে ৪২%। দুই, পেট্রোল-ডিজেলের দাম বারবার বাড়ছে। ফলে তার উপর রাজ্য যে সেস পায়, সেটাও বাড়ছে। তিন, ঢালাও মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার ফলে আবগারি রাজস্ব বেশি পাচ্ছে রাজ্য। কিন্তু এর বাইরে তৃণমূল সরকার বড় শিল্পের মতো কোনও উৎপাদক অর্থনীতির পথে হাঁটেনি, যার ফলে রাজস্ব বাড়তে পারে।
এ দিন সুজনবাবু বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট বা তেলেভাজা শিল্প কি উৎপাদক বিনিয়োগ? সিঙ্গুর সমস্যা মেটান। কোর্টে করুন, কোর্টের বাইরে করুন, ৪০ একরে করুন, ৪০০ একরে করুন— কিন্তু করুন।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ক’টা বড় শিল্প হয়েছে? আপনাদের উদ্দেশ্য তো তেলেভাজা-মুড়ি শিল্প করা। যাদের মানসিকতা এ-ই, তাদের কাছ থেকে বড় শিল্প আশা করা
যায় না।’’ বড় শিল্পের আকাল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে প্রায়শই কুটির শিল্পে সাফল্যের কথা বলে থাকে রাজ্য। তা নিয়েও মান্নানের প্রশ্ন, ‘‘ক’টা কুটির শিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে পেরেছে রাজ্য?’’
বিরোধী নেতাদের এই যাবতীয় প্রশ্নের জবাবই কার্যত এড়িয়ে যান অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু। উল্টে কোন দফতরকে কেন্দ্রীয় সরকারের কত টাকা দেওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তারা কত কম দিয়েছে, অনটনের মধ্যেও রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু, অনগ্রসর শ্রেণি, তফসিলি উপজাতির মানুষদের উন্নয়নের জন্য কত খরচ করছে— সেই সমস্ত বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভাতেই বলেছিলেন, ‘‘এ রাজ্যে ঋণের ফাঁদ এখন মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ অমিতবাবুর জবাবি ভাষণে সেই মৃত্যুফাঁদ থেকে নিষ্কৃতিও কোনও দিশা মেলেনি। অথচ এ দিন বিধানসভায় হঠাৎই রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন একটি বিষয়ের অবতারণা করেন অর্থমন্ত্রী। একটি সংবাদপত্র থেকে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘কেরলের এলডিএফ সরকার কেন্দ্রের জিএসটি বিল সমর্থন করছে। অথচ, সিপিএম তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। দলের কী দুর্দশা!’’
সুজনবাবু পরে বলেন, সভায় উপস্থিত নন, এমন কারও প্রসঙ্গ বিধানসভায় তোলা যায় না। সংবাদপত্র দেখিয়ে বা পড়ে কিছু বলাও যায় না। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘অর্থমন্ত্রী সেই নিয়ম ভাঙলেন। আমি চাওয়া সত্ত্বেও স্পিকার এ নিয়ে রুলিং দিলেন না। এটা আমরা মানব না। হয় সরকার বন্ধ করবে, নয়তো পর দিন থেকে সকলে যে যার খুশি মতো কাগজ এনে সভায় পড়তে থাকবে।’’
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়া-সহ বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও সরকার কেন তিন বছরের সিএজি রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করেনি? অর্থমন্ত্রী জানান, তিনি সর্বশেষ দু’বছরের সিএজি রিপোর্ট এই অধিবেশনেই পেশ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy