আনিসুর রহমান। নিজস্ব চিত্র
ধর্ষণ, মারধর, রাজনৈতিক সভা শেষে গোলমাল পাকানো— মামলা রয়েছে একাধিক। জেলেও গিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু ছাড়া পেয়েই আবার ‘স্বমহিমায়’ ফিরে গিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল, বর্তমানে বিজেপি পাঁশকুড়ার নেতা আনিসুর রহমান। এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুনে ফের আনিসুর গ্রেফতারের পরে নন্দীগ্রামের জেলার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চর্চা। আনিসুরের গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূল নেতা তথা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়ারও কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা।
রবিবার গভীর রাতে মেচেদা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন আনিসুর। গত ৭ অক্টোবর কুরবান দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকেই ফেরার ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কুরবানের পরিজন। ঘটনার পর থেকেই সরব হয়েছিলেন জেলার দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রকাশ্য নাম না করলেও আনিসুরের দিকেই অভিযোগের তির তুলেছিলেন।
সোমবার পুলিশ যখন আনিসুরের গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করে, তখন শুভেন্দু ছিলেন খড়্গপুরে। উপ নির্বাচনের মনোনয়নের মিছিলে। আনিসুর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘কোনও সমাজ বিরোধী সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারী কোনও মন্তব্য করে না।’’ ওই মন্তব্য শুনে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, বর্তমানে বিজেপি নেতা আনিসুরের বাড়বড়ন্ত তো তৃণমূলে থাকার সময়ই!
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘আনিসুর বিজেপিতে যোগ দেওয়া পর থেকে অধিকাংশ সময়ই জেলে কেটেছে ঠিকই। কিন্তু উনি তো আগে তৃণমূলে ছিলেন। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী কী সে সময় সমাজবিরোধীর বাইকে চেপে তমলুক গিয়েছিলেন? শুভেন্দু যখন আনিসুরকে নিয়ে কাজ করতেন, তখন তাঁকে সমাজবিরোধী বলে মনে হয়নি!’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির কথায়, ‘‘২০০৯ সালে দলীয় নেতা গোবিন্দ সামন্ত খুন হন আনিসুরের প্ররোচনায়। শুভেন্দু পুলিশকে কাজে লাগিয়ে ওই মামলায় সবাইকে খালাস করার ব্যবস্থা করেন। আনিসুর তো দশ বছর তৃণমূলে কাজ করেছেন। তাঁকে সমাজবিরোধী বানাল কে?’’
‘সমাজবিরোধী’ তকমা পাওয়া আনিসুরকে ২০০৬ সালে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। বহিষ্কৃত ওই নেতাকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় দলে টেনেছিল তৃণমূল। ২০০৭ সালের নভেম্বরে সিপিএমের নন্দীগ্রাম দখল অভিযানের সময় তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোটর বাইকে চাপিয়ে পাঁশকুড়া থেকে তমলুকে এনেছিলেন আনিসুর। তারপর থেকেই ‘স্পটলাইট’ তাঁর উপর। এলাকায় পরিচত হন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসাবে।
শুভেন্দুর সঙ্গে আনিসুরের মধুর সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের পর তৃণমূলের মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হন আনিসুর। পান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা যুব তৃণমূলের পদ। ২০১৪ সালে আনিসুরের বিকল্প হিসাবে পাঁশকুড়ার রাজনীতিতে উঠে আসেন কুরবান। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান কুরবানকে মারধরের অভিযোগ ওঠে আনিসুরের বিরুদ্ধে। এর পরে একাধিক কারণে দলের সঙ্গে আনিসুরের বাড়তে থাকে দূরত্ব।
২০১৭ সালে আনিসুর বিজেপি’তে যোগ দেয়। তার পরে বিতর্ক বেড়েছে বহু গুণে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ধর্ষণের অভিযোগে মেদিনীপুর থেকে গ্রেফতার হন আনিসুর। সেই মামলায় জামিন পেলেও ওই বছরই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কুরবানকে মারধরের অভিযোগে ফের গ্রেফতার হন তিনি। কয়েকমাস জেল খেটে বেরনোর পর কাঁথিতে বিজেপি নেতা অমিত শা’র সভার পরে গোলমালের ঘটনায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা বিমান বন্দর থেকে আনিসুরকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৩০ শে মে ছাড়া পেয়েছিলেন আনিসুর।
এর পরেই এবার কুরবানকে খুনে গ্রেফতার হয়েছেন আনিসুর। যদিও তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিজেপি জেলা সভাপতি (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘আনিসুর এর আগেও অনেকবার গ্রেফতার হয়েছেন। প্রমাণের অভাবে ছাড় পেয়েছেন। এবারও ছাড়া পাবেন।’’
জেল-যাত্রা
• জানুয়ারি, ২০১৮: ধর্ষণের অভিযোগে মেদিনীপুর থেকে গ্রেফতার। পরে জামিন
• ২০১৮: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কুরবানকে মারধরের অভিযোগে ফের গ্রেফতার। কয়েক মাস জেলে
• ফেব্রুয়ারি, ২০১৯: কাঁথিতে বিজেপি নেতা অমিত শাহের সভার পরে গোলমালের ঘটনায় কলকাতা বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার। ৩০ মে ছাড়া পান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy