Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Health Department

কোভিড বর্জ্য সাফ: বেআইনি বরাতের অভিযোগ

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৫৬
Share: Save:

বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও নষ্ট করার ক্ষেত্রে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে একটি সংস্থাকে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগকে মান্যতা দিল পরিবেশ দফতরও। শুধু তাই নয়, এই বিতর্কে জড়িয়ে গেল রাজ্যের প্রভাবশালী এক প্রাক্তন শীর্ষ আমলার নামও।

বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৬ ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ, তা নিয়ে যাওয়া, প্রক্রিয়াকরণ ও নষ্টের জন্য কোনও সংস্থার নিজস্ব প্লান্ট থাকা জরুরি। প্রশাসনিক সূত্র বলছে, গত বছরে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটিজ অপারেটরস’ (সিবিডব্লিউটিএফ) নির্বাচনের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল। দরপত্রে ‘কনসোর্শিয়াম অব স্পেকট্রাম ওয়েস্ট সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড এসএনজি মার্কেন্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা কাজের বরাত পায়। অথচ এ রাজ্যে তাদের প্লান্টই নেই! এই কাজের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে ছাড়পত্র থাকার কথা, সংশ্লিষ্ট সংস্থার তা পর্যন্ত নেই। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের নথি বলছে, পরিষেবা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা কত টাকা পাবে, তার ‘রেট’ ঠিক হয়ে গিয়েছে! আর নিয়ম-বর্হিভূত ভাবে ‘পাইয়ে দেওয়া’ এই বরাতের কারণে সরকারি কোষাগার থেকে বছরে কোটি টাকারও বেশি বেরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে ছ’টি সিবিডব্লিউটিএফ রাজ্যে কাজ করছে। পরিবেশ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, স্বীকৃত ওই ছ’টি সংস্থার মধ্যে একটির সঙ্গে এসএনজি মার্কেন্টাইল প্রাইভেট লিমিটেডের ‘সমঝোতা’ হয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী, এসএনজি বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করে তা নিয়ে যাবে। আর ওই বর্জ্য পর্ষদ স্বীকৃত সংস্থার প্লান্টে প্রক্রিয়াকরণ, নষ্ট করা হবে। স্বীকৃত ওই সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) কৃষ্ণেন্দু দত্তের বক্তব্য, ‘‘এসএনজি সংস্থার সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ চুক্তি অনুযায়ী, ওদের প্লান্ট না-হওয়া পর্যন্ত ওদের সংগৃহীত বর্জ্যের ক্ষেত্রে আমরাই পরিষেবা দেব। ওরা শুধু আমাদের গাড়ি, লোকবল দেবে। ওরা সেটাই করছে। নিজেরা কোনও কাজ করছে না।’’ কিন্তু পরিষেবা না-দিয়েও সংস্থা যে স্বাস্থ্য দফতরে বিল দিয়ে টাকা নিচ্ছে? কৃষ্ণেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘হ্যাঁ। নিচ্ছে। কারণ, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।’’

যদিও পরিবেশ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দরপত্রের শর্তের বাইরে এ রকম সমঝোতা করার কথা নয়। তা ছাড়া, কোথাও এসএনজি-কে ‘আউটসোর্সিং’ সংস্থা হিসেবে দেখানোও হয়নি। এক কর্তার কথায়, ‘‘বর্জ্য সংগ্রহের কাজের স্বীকৃতি (অ্যাপ্লিকেশন অব অথরাইজেশন) বা স্বীকৃতি নবীকরণের (রিনিউয়াল অব অথরাইজেশন) জন্য ‘অকুপায়ার অব হেলথ কেয়ার ফেসিলিটি’ এবং কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি, শুধু আবেদন করতে পারে। অন্য কারও কথা, যেমন আউটসোর্সিং সংস্থার উল্লেখ সেখানে নেই।’’ কর্তারা এ-ও জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতর দরপত্র থেকে শুরু করে সংস্থা সংক্রান্ত এখনও পর্যন্ত যতগুলো নির্দেশিকা বের করেছে, সবেতেই এসএনজি-কে ‘অপারেটর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব হসপিটাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর প্রেসিডেন্ট অশোক আগরওয়াল জানাচ্ছেন, অপারেটরদের ভূমিকা বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে। অপারেটর মানেই তাদের সংশ্লিষ্ট বর্জ্য সংগ্রহ, তা নিয়ে যাওয়া, রাখা, প্রক্রিয়াকরণ ও তা নষ্ট করতে হবে। সে জন্য নিজস্ব প্লান্ট থাকা বাধ্যতামূলক। তাঁর কথায়, ‘‘তা ছাড়া প্লান্টের জমি, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি রয়েছে কি না-সহ সমস্ত কিছু সরেজমিনে পরিদর্শন করার পরে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ছাড়পত্র দেবে। পর্ষদের ছাড়পত্র ছাড়া কোনও ভাবেই বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিষেবা দেওয়া যাবে না।’’

তা হলে ছাড়পত্র ছাড়াই কোভিড-সহ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের কাজের বরাত কী করে পেল ওই সংস্থা? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘দরপত্র স্বাস্থ্য দফতর ডেকেছে। আমাদের দায়িত্ব শুধু ছাড়পত্র দেওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটা ফাইল দেখে বলতে হবে। কারণ, সব ফাইল আমার কাছে আসে না।’’ পর্ষদে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বিষয়টি দেখার কথা ছিল যাঁর, সেই আধিকারিক তাপস কুমার গুপ্ত অবসর নিয়েছেন কিছু দিন আগে।। আপাতত ‘টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর’ হিসেবে পর্ষদে কাজ করছেন। তিনি আবার বলেন, ‘‘এ বিষয়ে পর্ষদের চেয়ারম্যানই বলবেন।’’ এই টালবাহানার মধ্যে পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বিষয়টি নিজে খতিয়ে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এসএনজি নামে কোনও সংস্থাকে ছাড়পত্র দিইনি। তারা কাজ করে থাকলে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে করছে। কেউ যদি রিপোর্ট করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।’’

যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পুরোটাই জানে। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে পর্ষদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ওই সংস্থা গত এক বছর ধরে কাজ করছে। এখন যদি পর্ষদ বলে যে তারা ছাড়পত্র দেয়নি, তা হলে আমরা খতিয়ে দেখব। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করব।’’

যে সংস্থাকে ঘিরে এত প্রশ্ন, তাদের নেপথ্যে এক প্রাক্তন শীর্ষ আমলা রয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁর ‘প্রভাব’ নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। তবে এসএনজি সংস্থার ডিরেক্টর এস পি সিংহ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ীই সব করা হচ্ছে। কারণ, কোভিড পরিস্থিতিতে বর্জ্যের পরিমাণ যে ভাবে বেড়ে গিয়েছে, তাতে যাতে সমস্যা না হয়, সে কারণেই আমরা কাজ করছি।’’ কিন্তু পর্ষদের ছাড়পত্র ছাড়াই কী ভাবে কাজ করছেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার সব জানে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Department Coronavirus in West Bengal COVID Waste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy