Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

হাজিরা-বিধি জরুরি কি না, বিতর্ক শিক্ষায়

হাজিরা নিয়ে ঘেরাও-আন্দোলন, অনশন, কলেজ-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের দ্বৈরথ এই প্রশ্নগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

স্কুল স্তরে হাজিরায় বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া দরকার ছাত্রছাত্রীরা অপ্রাপ্তবয়স্ক বলেই। কিন্তু পড়ুয়ারা যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক, সেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে হাজিরার কড়াকড়ি কি সত্যিই দরকার? জোর করে ছাত্রছাত্রীদের কলেজে টেনে আনলে কি আখেরে লাভ হবে? আবার হাজিরায় যতটুকু যা কড়াকড়ি আছে, তা তুলে দিলে পড়ুয়াদের একাংশের কি আরও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে না?

হাজিরা নিয়ে ঘেরাও-আন্দোলন, অনশন, কলেজ-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের দ্বৈরথ এই প্রশ্নগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম অনুযায়ী স্নাতক এবং স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় বসতে গেলে গোটা শিক্ষাবর্ষে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ হাজিরা থাকা বাধ্যতামূলক।

কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ৭৫ শতাংশ হাজিরার শর্ত পূরণ করতে পারছেন না অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই। তাই ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবেই সেই নিয়ম পরিবর্তন করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে হাজিরার শতাংশ ঠিক করেছে। কিন্তু সেটাও সব ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

শিক্ষা শিবিরের অভিমত, হাজিরা বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা এসেছে মূলত পড়ুয়াদের কলেজমুখী করার জন্য। কিন্তু এক জন প্রাপ্তবয়স্ক পড়ুয়াকে জোর করে কলেজে নিয়ে আসা যায় কি না, তা নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। এক পক্ষের মত, শিক্ষকতা যদি মনোগ্রাহী হয়, তা হলে পড়ুয়ারা তো এমনিতেই ক্লাসে আসবেন। তাঁদের জোর করে আনার জন্য কোনও পন্থা ভাবতে হবে না। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বিভিন্ন কলেজে ভার্চুয়াল ক্লাস গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। সে-ক্ষেত্রেও ক্লাসে বাড়তি আগ্রহ আসাই উচিত।

পড়ুয়াদের একাংশের বক্তব্য, কোন ছাত্র বা ছাত্রীর হাজিরার হাল কী, শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকেই তা স্পষ্ট ভাবে জানানো উচিত। প্রতি মাসে সেই তথ্য নোটিস বোর্ডে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। ন্যূনতম হাজিরা না-থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে সম্প্রতি কলকাতার একটি কলেজে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ক্লাস করলেও ইচ্ছা করেই খাতায় নাম তোলা হয়নি। কিছু ছাত্রী মনে করছেন, কার কত হাজিরা, প্রতি মাসে নোটিস বোর্ডে সেই তথ্যের উল্লেখ থাকলে অভিযোগটিই ধোপে টিকত না।

কার্যত ওই পড়ুয়াদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু। তিনি বলছেন, ‘‘একেবারে শিক্ষাবর্ষের শেষে হাজিরার তালিকা প্রকাশ করে পরীক্ষায় বসতে না-দিলে সমস্যা হতেই পারে।’’

হাজিরার নিয়ম তুলে দেওয়াই ভাল বলে মনে করছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার। তাঁর যুক্তি, ‘‘প্রাপ্ত বয়সের পড়ুয়াদের উপরে হাজিরার শর্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কোনও রকম আপস না-করে যথাযথ ভাবে মূল্যায়ন হলেই ক্লাস করার সুবিধা বা না-করার অসুবিধা কতটা, পড়ুয়ারা তা বুঝতে পারবেন।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হাজিরা-বিধির সঙ্গে কোনও রকম আপস না-করে বাংলা বিভাগের বহু পড়ুয়াকেই পরীক্ষায় বসতে দেননি। তবে শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, হাজিরা নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই নির্দিষ্ট একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE