তবে স্থানীয় স্তরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার মাত্রা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের যোগ থাকতেও পারে। সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নানা গবেষণাও চলছে।’’
বৈশাখেই ব্রাহ্মণী নদী কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ শুকিয়ে গিয়েছে। হেঁটে, সাইকেলে পার হওয়া যাচ্ছে নদী। মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের চোরকাটায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিনে আমজনতা যার পথ চেয়ে বসে আছে, সেই ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা অবশেষে শোনাল হাওয়া অফিস। অব্যাহত তাপপ্রবাহের মধ্যেই মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, পরশু, শুক্রবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আগামী সোম ও মঙ্গলবার গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাব্য ঝড়বৃষ্টির জেরে মাত্রাছাড়া গরমে কিছুটা লাগাম পড়তে পারে। কিন্তু তার আগে আজ, বুধবার এবং কাল, বৃহস্পতিবার গরমের জোরদার দাপট মালুম হতে পারে। বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টা তাপপ্রবাহ চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে শুক্রবার থেকে পরিস্থিতির বদল দেখা দিতে পারে। ২ মে থেকে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা জোরালো হবে। তিনি বলছেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের সব জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হবে, এমন নয়। কারণ, গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবেই ঝড়বৃষ্টি হয়।’’
এ দিন উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় সন্ধ্যা ৮টার পরে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলায়। কোথাও কোথাও বৃষ্টির সঙ্গে শিলও পড়েছে।
কিন্তু গরমে ছটফট করেছে দক্ষিণবঙ্গ। রবিবার কলকাতায় ১৮ বছরের এক তরুণী মারা গিয়েছেন বলে জানান তাঁর বাবা। অনিশা আফরিন মণ্ডল নামে তপসিয়ার ওই তরুণী উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রমজানের উপবাসে সকাল থেকে তিনি কিছু খাননি। তার পরে রোদের মধ্যে রবিবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে নিউ মার্কেট যান কেনাকাটা করতে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে উপবাস ভঙ্গের পরে খাওয়াদাওয়া সারেন। তার কিছু পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিশা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর শংসাপত্রে চিকিৎসক মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে পেটের সমস্যা, বমি এবং ‘ডিহাইড্রেশন’-এর কথা উল্লেখ করেছেন।
এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তাপপ্রবাহ থেকে মানুষকে যথাসম্ভব রক্ষা করতে জেলাশাসকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে নবান্ন। জেলায় জেলায় পানীয় জলের সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। কৃষি দফতরের পরামর্শ, বোরো ধান ৭০-৭৫ শতাংশ পাকলেই কেটে ফেলতে হবে। আম, লিচুর বাগানে ফলের উপরে ছেটাতে হবে জল। কৃষকেরা যাতে বেলা ১০টার পরে মাঠে না-থাকেন, সেটাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
আগামী দু’দিন শুধু পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকলেও রাজ্যের বাকি এলাকায় যে গরমের দাপট কমবে, এমন নয়। কারণ, ‘তাপপ্রবাহ’ আবহবিজ্ঞানের একটি পারিভাষিক শব্দ মাত্র। সাধারণত, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে তার ন্যূনতম ফারাক পাঁচ ডিগ্রি হলে তবেই তাকে বলা হয় তাপপ্রবাহ। কিন্তু হিসেবের সামান্য হেরফেরে তাপপ্রবাহ না-হলেও মানবশরীরে গরমের খুব বেশি তারতম্য বোঝা যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত দু’দিন কলকাতায় খাতায়-কলমে তাপপ্রবাহ বয়নি, কিন্তু গরমের অনুভূতি কিছুমাত্র কম কষ্টদায়ক ছিল না। গরমের অনুভূতি বা অস্বস্তিটা তাপমাত্রা ছাড়াও আর্দ্রতা, হাওয়া চলাচল, জনবসতির ঘনত্ব ইত্যাদি বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল। তাই তাপমাত্রা এক থাকলেও এলাকাভেদে অস্বস্তির তারতম্য হয়। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি এবং অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৬। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি এবং অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৮। দুপুরে পথেঘাটে লোকের সংখ্যা কমেছে। একই ভাবে মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের কথাও বলা যায়। সেখানে তাপপ্রবাহ না-বইলেও দুপুরে বাজারহাট ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।
এমন কালবৈশাখীহীন চৈত্র-বৈশাখ সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা এর জন্য শুকনো আবহাওয়া, ঝাড়খণ্ডের উপরে ঘূর্ণাবর্তের অভাব, বাতাসে কম পরিমাণে আর্দ্রতা ইত্যাদি কারণকে দায়ী করছেন। এর পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু বদলের কারিকুরি আছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা জলবায়ু বদল করছে কি না, তা এক বছরের তথ্যের নিরিখে বলা যায় না। তবে স্থানীয় স্তরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার মাত্রা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের যোগ থাকতেও পারে। সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নানা গবেষণাও চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy