অজন্তা বিশ্বাস।
তৃণমূলের মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা নিয়ে বিতর্কে সুর খানিকটা নরম করলেন সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস। সূত্রের খবর, দলের কলকাতা জেলা কমিটিকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন ধরনের কোনও কাজ থেকে তিনি বিরত থাকবেন। মনে করা হচ্ছে, অজন্তার এই জবাবে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টির উপর আপাতত যবনিকা পড়ল। সাময়িক ভাবে অস্বস্তি কাটল সিপিএমেরও। সাময়িক ভাবে, কারণ, ভবিষ্যতে অন্য কেউ যে এমন নিবন্ধ লিখে বসবেন না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
তবে অজন্তা-প্রশ্নে সিপিএমকে যে ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে, তা সাম্প্রতিক অতীতে বিরল। লোকসভা ভোটে হার, বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে দল যখন বেনজির সঙ্কটে, তখন তৃণমূলের মুখপত্রে উপর্যূপরি উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ এবং তার শেষ কিস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে আরও বিপাকে ফেলেছে। ইতিহাসের অধ্যাপক অজন্তা তাঁর নিবন্ধে মমতাকে বাংলার মহিলা রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে মন্তব্য করেছেন। সিঙ্গুর আন্দোলনকে গণবিক্ষোভ বলে বর্ণনা করেছেন। যে আন্দোলন থেকে মমতার ক্ষমতায় উত্থান। তবে মমতা সংক্রান্ত বক্তব্য প্রকাশের আগেই অজন্তার সঙ্গে কথা বলেছিল সিপিএম। তৃণমূলের মুখপত্রে তাঁর প্রথম কিস্তির লেখা প্রকাশের পরেই তাঁ সঙ্গে কথা বলা হয় দলের তরফে। সূত্রের খবর, তখনই অজন্তা জানিয়েছিলেন, তাঁর লেখায় কেউ মানসিক ভাবে আহত হয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত।
তার পরে অজন্তাকে শোকজ করা হয়। কারণ, তিনি এখনও দলের সদস্য। সেই চিঠির জবাব অজন্তা দিয়েছেন বলে সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি। পাশাপাশিই সেই সূত্রের দাবি, অজন্তার উত্তর ‘সন্তুষ্ট’ নয় সিপিএম। অজন্তার লেখা নিয়ে প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন সিপিএমের নেতানেত্রীরা। প্রথমে ওই বিষয়ে দলের শীর্ষনেতারা প্রকাশ্যে মুখ না করতে চাইলেও পরে ঠিক হয় অজন্তা সিপিএমের যে অধ্যাপক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেই সংগঠন মারফত তাঁর কাছে জবাব চাওয়া হবে। পাঠানো হয় শোকজের চিঠি। সিপিএম রাজ্যনেতৃত্ব বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটি ও কলকাতা জেলা কমিটির উপর দায়িত্ব দেন। শুক্রবার রাজ্য সিপিএম সূত্রের খবর, দলের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে যে চিঠি দিয়েছেন অজন্তা। কিন্তু সেই ব্যাখ্যায় ‘সন্তুষ্ট’ হননি এরিয়া কমিটির নেতারা। কারণ, শোকজের চিঠিতে অজন্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন তিনি বিরোধী দলের মুখপত্রে ধারাবাহিক উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছেন। কিন্তু অজন্তার চিঠিতে সে বিষয়ে ‘স্পষ্ট’ কোনও জবাব নেই বলেই রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বের একটি সূত্র জানাচ্ছে।
তবে রাজ্য সিপিএমের একটি সূত্রে বক্তব্য, শোকজের জবাবি চিঠিতে অজন্তা বলেছেন, তিনি ভবিষ্যতে ‘এই ধরনের কাজ’ থেকে বিরত থাকবেন। পাশাপাশি, তাঁর লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোকপাত করেছেন অনিল-কন্যা। সিপিএমের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনও পার্টি সদস্যকে অভিযুক্ত করার আগে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। অজন্তার ক্ষেত্রেও তেমনই করা হয়েছিল। কিন্তু জবাবি চিঠিতে অজন্ত ‘আসল’ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন বলেই মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। আপাতত এরিয়া কমিটি অজন্তার জবাব পেয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা জানানো হবে কলকাতা জেলা কমিটিকে। বিষয়টি বিবেচনা করে তা আবার এরিয়া কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অজন্তা সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমিটিই। অজন্তার বিরুদ্ধে সিপিএম কড়া পদক্ষেপ নেবে কিনা, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র তৃণমূলের মুখপত্রে অজন্তার লেখা উত্তর সম্পাদকীয়কে ‘খারাপ কাজ’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy