দলনেত্রীর দেখানো পথেই দলীয় কর্মী তথা নেতা-নেত্রীরা আক্রমণ করবেন বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-কে। এ ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা খোলা চিঠি হবে তাঁদের দৃষ্টান্ত। এমনই নির্দেশ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের।
রাজ্যবাসীর উদ্দেশে চার পাতার খোলা চিঠি লিখে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-কে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। শনিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর খোলা চিঠি প্রকাশ পায়। যেখানে ছত্রে ছত্রে তিনি পদ্মশিবিরের ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতিকে আক্রমণ করেছেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, চিঠিটি জনসমক্ষে আসার আগেই তা পাঠানো হয়েছিল দলের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের কাছে। পাঠানো হয়েছিল দলের শাখা সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও। সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, চিঠিতে যে ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী সঙ্ঘ পরিবার ও তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন, সেই ভাষা এবং সেই লাইনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে হবে। প্রয়োজনে এলাকায় এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিটি লিফলেটের আকারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
এ ছাড়াও পথসভা তথা জনসভাতেও মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে লেখা বার্তার নির্যাসকে নিজেদের বক্তব্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে আমজনতার কাছে। খোলা চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘রাজ্যে যে মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে রয়েছে আরএসএস।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, প্ররোচনার কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ব্যবহার করে বিভেদের রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে বিজেপি এবং আরএসএস। সেই বিভাজনের কৌশল যেন কোনও ভাবেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে না পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
এই চিঠিকে অনেক তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি নেত্রী সতর্কবার্তা হিসাবেই দেখছেন। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদের ঘটনা যেন জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, দিদি সে কথাই খোলা চিঠির মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। দলের নির্দেশমতো আমরা এখন থেকেই নিজের নিজের এলাকায় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছি। কারণ, বিজেপি চাইছে এই বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যেতে। যেহেতু দল থেকে আমাদের দিদির চিঠি দিয়ে সেই মর্মে প্রচার শুরু করতে বলেছে, তাতে আমাদের কাজ অনেকটা সহজ হবে বলে আমরা মনে করছি।’’ ঘটনাচক্রে, ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে জঙ্গিপুর লোকসভার অধীন এলাকাগুলি বেশি উত্তপ্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে আবেদন করেছেন, ‘‘দয়া করে ওদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই। ওরা সঙ্কীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।’’ মমতার এই বার্তা প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক রাজ্য স্তরের নেতা বলেছেন, ‘‘চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, সকলে শান্ত থাকুন, সাম্প্রদায়িক অশান্তি রোখা হবেই। এই অশান্তির নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের কড়া হাতে দমন করা হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন রাজ্যের সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে। তাই আমরা সম্প্রীতির বার্তা নিয়েই রাজ্যের সর্বস্তরের সব ধর্মের মানুষের কাছে যাব।’’ চিঠির একটি অংশে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিকে নিশানা করেছেন মমতা। তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের মতো নয়। এখানে সংবিধান-বিরোধী ব্যবস্থা কায়েম নেই। বাস্তবিকই বাংলা সব অর্থেই অগ্রণী রাজ্য।” মমতা টেনেছেন উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, মণিপুরের অশান্তির ঘটনার প্রসঙ্গও। তাই তৃণমূল নেতারা তাঁদের প্রচারে বিজেপিশাসিত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়েও আক্রমণ শানানোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি এবং তৃণমূলের আক্রমণ প্রসঙ্গে বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সকল নাগরিকের প্রতি নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল। তাঁর প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য প্রধান বিরোধী দল এবং একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।’’ তিনি আরও বলেন, “বিজেপি এবং সঙ্ঘের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা স্পষ্ট যে, মুখ্যমন্ত্রী বার বার জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এখন সময় হয়েছে জবাবদিহির। তাই তাঁর উচিত যাবতীয় দায়িত্ব মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করা। দলকে বিজেপি বা আরএসএসের বিরুদ্ধে না নামিয়ে তিনি আগে ইস্তফা দিন।’’