Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
International Mother Language Day

21 February: স্কুলবেলার পাঁচ ভাষা-শহিদের স্মৃতিতে বুঁদ বৃদ্ধ

চিত্তরঞ্জনবাবু স্কুলের ইংরেজি শিক্ষকের বৃত্তি ছেড়ে ভারত সরকারের বিদেশ দফতরে চাকরি নেন। সেই সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের আগেই তাঁর বদলি হয় বাংলাদেশে। কথার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই নেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নাম।

চিত্তরঞ্জন বাইন। নিজস্ব চিত্র

চিত্তরঞ্জন বাইন। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৭
Share: Save:

বরিশালের গাবখান নদীতীরে অজ প্রত্যন্ত এলাকার মালিখালি হাইস্কুল। ক্লাস সেভেনের ক্লাস চলছে। হঠাৎ বাইরে থেকে রীতিমতো আর্তনাদ করে উঠলেন অঙ্কের শিক্ষক বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়, “আমাগো পোলাপানেরে মাইর‌্যা ফ্যালাইসে।”

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সাল। স্কুলে একমাত্র বঙ্কিমবাবুই রেডিয়ো চালাতে পারতেন। স্কুলে রাখা এলাকার একমাত্র রেডিয়োটিতে ভেসে আসে ঢাকার সেই খবর। ভাষা আন্দোলনে শহিদ বাংলার পাঁচ যুবক।

নয়-নয় করে কেটে গিয়েছে সত্তর বছর। বয়সের ভার বিরাশির চিত্তরঞ্জন বাইনের স্মৃতিকে এতটুকু কাবু করতে পারেনি। সল্টলেকের বাড়িতে বসে বললেন, “পাঁচ যুবকের শহিদ হওয়ার সেই খবর আমাদের স্কুল থেকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল বরিশালের হাটে-বাজারে। পরের দিন ছাত্রনেতা নীরদ নাগ এসে স্কুল-চত্বরে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন।” সেই কথা মনে করে আজও ধমনীতে রক্ত ছলকে ওঠে চিত্তরঞ্জনবাবুর।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ‘বিশ্ব ভাষা দিবস’। সত্তর বছর আগে যার সূচনা হয়েছিল ঢাকায়। মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গর্জে উঠেছিল ও-পার বাংলার রাজপথ-গলিপথ। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে খুন করা হয়েছিল আন্দোলনরত যুবকদের। সেই আন্দোলন এবং তারও পরে মুক্তিযুদ্ধে শামিল উদার বাঙালি মন আজ ব্যথিত হয় ধর্মের নামে সঙ্কীর্ণতায়। আর সঙ্কীর্ণতার সেই প্রসঙ্গে ধরে আসে চিত্তরঞ্জনবাবুর গলা, “এখনও আমার একশো বন্ধুর মধ্যে ষাট জনই মুসলমান। কই, আমরা তো কখনও নিজেদের আলাদা করে ভাবিনি। এই তো ২০১৮ সালে বাংলাদেশে গিয়ে পাঁচ মাস ঘুরে বেড়িয়েছি বন্ধুদের বাড়ি। শুধু মুষ্টিমেয় মানুষ নিজেদের স্বার্থে...।”

ও-পার বাংলার বিভেদের ছবিটা আজ কষ্টের হলেও, সত্যি। পরপর ব্লগার খুনের ঘটনায় চিত্তরঞ্জবাবু দায়ী করেন অসহিষ্ণুতাকেই। উদাস চোখে বলেন, “আমাদের ছোটবেলায় ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকায় এমনটা ছিল না। বসন্তপঞ্চমীর দিন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যুবতীদের বাসন্তী রঙের শাড়িতে উদ্বেল হতে দেখেছি। কিছু বিভেদকামী মানুষের প্ররোচনায় এখন এ-সব হচ্ছে।”

চিত্তরঞ্জনবাবু স্কুলের ইংরেজি শিক্ষকের বৃত্তি ছেড়ে ভারত সরকারের বিদেশ দফতরে চাকরি নেন। সেই সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের আগেই তাঁর বদলি হয় বাংলাদেশে। কথার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই নেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নাম। স্মৃতি উজাড় করে দেন, “মুজিবকে প্রথম দেখি, যখন আমার মাত্র সাত বছর বয়স। সেটাই ভারতের স্বাধীনতার বছর। পরের বছর পাকিস্তান থেকে জিন্না এসে বলে গেলেন, পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলাদেশ)-এর সরকারি ভাষা হবে কেবলমাত্র উর্দু। আমাদেরও উর্দু পড়তে হত। সেই ৪৮-৪৯ থেকেই ফল্গুধারার মতো ভাষা নিয়ে ক্ষোভ ধূমায়িত হতে শুরু করে।”

৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সেই চরম মুহূর্তই পরের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বুনে দেয়, পর্যবেক্ষণ চিত্তরঞ্জনবাবুর। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর হয়ে প্রচারে নামেন ১৪ বছরের চিত্তরঞ্জন। বললেন, ‘‘আমার জেঠা অনাদি বালা ছিলেন মুজিবের শিক্ষক। ফলে সেই পরিচিতিটাও ছিল।” মুজিবুরের ভাই ছিলেন শেখ নাসের, হাঁটতেন লাঠিতে ভর দিয়ে। হ্যামলিনের বাঁশির মতো, সেই নাসেরের গলায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান শুনে একজোট হতেন যুবক-যুবতীরা— বলতে বলতে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে গেয়ে ওঠেন অশীতিপর বৃদ্ধ।

অন্য বিষয়গুলি:

International Mother Language Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy