ফাইল চিত্র।
এক মাস আগে, ২৮ জুনই ভাঙড় আন্দোলনে ধৃত শর্মিষ্ঠা চৌধুরী ও প্রদীপ সিংহ ঠাকুর জামিন পেতে পারতেন বলে মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের বিচারককে আরও এক দফা তিরস্কার করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী।
২৫ জুলাইয়ের শুনানিতেও বারুইপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে ভর্ৎসনা করেছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি বাগচীর পর্যবেক্ষণ, ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে ধৃতদের আটকে রাখার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হলেও সেটা নিয়মবিধি মেনে করা হয়নি। তাই ওই আবেদনের দিন অর্থাৎ ২৮ জুন ধৃতেরা জামিন পেয়ে যেতে পারতেন। আবেদনে বিধি মানা হয়নি বুঝেও নিম্ন আদালতের বিচারক তা মঞ্জুর করেন এবং সেই জন্যই ভাঙড় মামলার ওই অভিযুক্তদের বাড়তি এক মাস আটক থাকতে হয়েছে।
এ দিন জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট জানিয়েছে, শর্মিষ্ঠা ও প্রদীপ আদালতের অনুমতি ছাড়া ভাঙড়, কাশীপুর ও রাজারহাট থানা এলাকায় ঢুকতে পারবেন না। আন্দোলনের নামে বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগে ইউএপিএ-তে মামলা হয় শর্মিষ্ঠাদের বিরুদ্ধে। গত ২৫ জানুয়ারি গ্রেফতার হন তাঁরা। বারুইপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে ফের ভর্ৎসনা করে বিচারপতি জানান, যে-কাজ খোদ ম্যাজিস্ট্রেটের করার কথা, সেটা এক জন পুলিশ অফিসারকে দিয়ে করিয়ে ওই বিচারক কেবল নিজের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হননি, তিনি তদন্তকারী সংস্থার কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন।
শর্মিষ্ঠা-প্রদীপদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, ফৌজদারি মামলায় পুলিশ চার্জশিট পেশের জন্য সময় পায় ৯০ দিন। কিন্তু ইউএপিএ-তে মামলা হলে চার্জশিট পেশের জন্য ১৮০ দিন সময় মেলে। তাঁদের মক্কেলদের গ্রেফতারের পরে ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হয় ২৮ এপ্রিল। পুলিশ এপ্রিলেই বারুইপুর আদালতে আবেদন জানায়, তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা করতে চায়। চার্জশিট পেশের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৮০ দিন করা হোক।
অভিযুক্তেরা তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজের আবেদন জানিয়ে মে মাসে হাইকোর্টে মামলা করেন। পুলিশ পরে তাঁদের বিরুদ্ধে যে-চার্জশিট পেশ করে, ওই মামলায় সেই চার্জশিটকেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। ২৫ জুন সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের পক্ষ থেকে একটি নথি পেশ করা হয় বিচারপতি বাগচীর আদালতে। ওই নথি খুঁটিয়ে দেখেন বিচারপতি। দেখা যায়, অভিযুক্তদের জেলে আটকে রাখার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করার নির্দেশ লিখেছেন গভর্নমেন্ট রেকর্ড (জিআর) অফিসের এক পুলিশ অফিসার। ম্যাজিস্ট্রেট সেই লেখার তলায় ‘অনুমতি দেওয়া হচ্ছে’ লিখে সই করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের সেই কাজের তীব্র সমালোচনা করেন বিচারপতি। নির্দেশ দেন, বারুইপুর আদালত থেকে মামলার সব নথি তাঁর আদালতে পেশ করতে হবে।
অভিযুক্তদের অন্য আইনজীবী শীর্ষেন্দু সিংহ রায় জানান, বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে বলেছেন, ইউএপিএ-তে আটক রাখার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করার কথা সরকারি কৌঁসুলির। কিন্তু তাঁর বদলে আবেদন করেছেন এক পুলিশ অফিসার। বাড়তি সময় আটকে রাখার আবেদন কেন, তা বলা হয়নি। তদন্তে কতটা কী অগ্রগতি হয়েছে, জানানো হয়নি তা-ও। তা সত্ত্বেও ২৮ জুন সেই আবেদন মঞ্জুর করেন নিম্ন আদালতের বিচারক। অভিযুক্তেরা সে-দিনই জামিনের আর্জি জানান। বিচারক সেই আবেদনও খারিজ করেন। পুরো বিষয়টি ওই বিচারকের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার দৃষ্টান্ত তো বটেই। সেই সঙ্গে এটা তদন্ত সংস্থার কাছে তাঁর আত্মসমর্পণ করারও প্রমাণ।
এ দিনই কাশীপুরের শ্যামনগরে ইছা মোল্লা নামে ভাঙড়ের এক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী ও শর্মিষ্ঠা চৌধুরীদের এলাকায় নিয়ে এসে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে সামিল করতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy