Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Price Hike

মমতার নির্দেশে বাজারে বাজারে অভিযান, প্রথম দিনেই খানিক নিয়ন্ত্রণে আলু-পটল-বেগুনের দাম

বুধবার বাজারে বাজারে হানা দিল টাস্ক ফোর্স। তাতে এক ধাক্কায় এক একটি আনাজের দাম প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছে। কোথাও আবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওজনে কারচুপিও হাতেনাতে ধরা হল।

Vegetable

এক ধাক্কায় কমেছে বেগুন, পটলের দাম। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ১৪:২৩
Share: Save:

কাঁচা আনাজের দর কমাতে মঙ্গলবার ১০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের রুখতে বাজারে বাজারে অভিযান চালাবে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ এবং পুলিশ। সঙ্গে থাকবে এসটিএফ এবং সিআইডি-ও। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে বাজারে হানা দিল টাস্ক ফোর্স। তাতে এক ধাক্কায় এক একটি আনাজের দাম প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছে। কোথাও আবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওজনে কারচুপিও হাতেনাতে ধরলেন সরকারি আধিকারিকেরা।

বুধবার সকালে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের একাধিক বাজার পরিদর্শন করলেন আসানসোল সদরের মহকুমা শাসক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলার কৃষি বিপণন বিভাগ, কৃষি পরিমাপ বিভাগ, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকেরা। অভিযানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ‘হোলসেল’ বাজারের চেয়ে পাইকারি বাজারে বিভিন্ন সব্জির দাম বেশি। সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। কয়েক জনকে ‘স্পট ফাইন’ও করা হয়। অভিযান শেষে মহকুমা শাসক বলেন, ‘‘বাজারে সব্জির দাম সত্যি সত্যি অনেকটাই বেশি রয়েছে। হোলসেল মার্কেটে যে দাম দেখলাম তার থেকে পাইকারি বাজারে দাম অনেকটাই বেশি। এতটা ‘ডিফারেন্স’ হওয়ার তো কথা নয়। কয়েক জন পাইকারি ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে।’’

অনেক দোকানে ওজনের দাঁড়িপাল্লাও ঠিক নেই বলে জানিয়েছেন মহকুমা শাসক। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকে যেমন জিনিসের দাম অনেকটাই বেশি নিচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা, আবার ওজনেও কারচুপি করা হচ্ছে!’’ আসানসোল বাজার ছাড়াও হটন রোড-সহ আরও বেশ কিছু বাজারে ঘুরেছেন আধিকারিকরা। এর পরেই বাজারে বাজারে কাঁচা আনাজ দাম অনেকটাই কম হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। কয়েক জন ক্রেতা হাসিমুখে দাবি করেন, মঙ্গলবার থেকে বুধবার, এক দিনে সব্জির দাম অনেকটাই কমে গিয়েছে। এক ক্রেতা বলেন, ‘‘বেগুন প্রতি কেজিতে ছিল ১২০ টাকা। আজ (বুধবার) তা ৭০-৮০ টাকায় চলে এসেছে। পটল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। আজ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’’ অনেকেরই বক্তব্য, এখান থেকেই পরিষ্কার যে, অনেক ব্যবসায়ী অযথা এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে সব্জির দাম বাড়িয়ে রেখেছিলেন।

বৃষ্টির জেরে ফলনে ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। মরসুমি সব্জির চাহিদা মতো জোগান ছিল না। তার পর থেকে কাঁচা আনাজের মূল্য মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছিল। মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরের একাধিক বাজারে এ সপ্তাহে কিছুটা হলেও সব্জির দাম নিম্নমুখী। সরকারের নজরদারিই দাম কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহের মধ্যে আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। চন্দ্রমুখী এবং জ্যোতি আলুর দাম কেজিতে প্রায় ৫ টাকা করে বেড়ে ৩৫ এবং ৪৫ টাকা হয়েছে। এক কেজি ঝিঙের দাম এখন ৮০ টাকা, সপ্তাহখানেক আগেও যা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কাঁচালঙ্কার মূল্যবৃদ্ধিতে চোখে জল আসার জোগাড়। এক সপ্তাহের মধ্যে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে কাঁচালঙ্কা এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। উচ্ছে ৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। এক কেজি ঢ্যাঁড়শের দাম ছিল ৬০ টাকা। হয়েছে ৭০ টাকা। এখনও জেলার কোনও সব্জি বাজারে টাস্ক ফোর্সের অভিযানের খবর মেলেনি।

অগ্নিমূল্য বীরভূমে কাঁচা শাকসব্জি। মুখ্যমন্ত্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পর বুধবার বীরভূমের বাজারগুলিতে পুলিশ দেখা গিয়েছে। জেলার বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম ছিল ৩৫ টাকা কিলো। পেঁয়াজ ৫০ টাকা। এখন সেটা অনেকটাই বেড়েছে বলে অভিযান শেষে জানালেন এক আধিকারিক। আদা, রসুন, কাঁচালঙ্কা, পটল— সব কিছুরই চড়া দাম। বুধবার সকালে বোলপুর হাটতলার বাজারে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ বোলপুর থানার পুলিশকে নিয়ে অভিযান চালায়। আলুর পাইকারি দাম কত, জানতে চাওয়া হয় বিক্রেতাদের কাছে।

মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন বাজারেও একই পরিস্থিতি। বহরমপুরের স্বর্ণময়ী বাজারে দামদর করতে গিয়ে দেখা গেল গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই সাধারণের আয়ত্তে এসেছে সব্জি। আলু পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিলো দরে। এক কেজি পটলের দাম ৩০ টাকা। বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কুমড়ো ২০ থেকে ২৫ টাকা। আদার কেজি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। সমস্ত আনাজের দাম গড়ে ২৫ শতাংশ কমেছে। বহরমপুরের স্বর্ণময়ী, নিমতলা, কোর্টবাজার, খাগড়া ইত্যাদি পাইকারি বাজারগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন করছেন ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের কর্মীরা। নদিয়ার কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, কল্যাণী এবং করিমপুরেও গত সপ্তাহে তুলনায় এ সপ্তাহে আনাজের দাম অনেকটাই কমেছে। তবে পরিবহণজনিত ব্যয়ের কারণে আলুর দাম বেশি। করিমপুর বাজারে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। কৃষ্ণনগরের আমিনবাজার, ঘূর্ণি ইত্যাদি এলাকার বাজারগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন করছে রাজ্য সরকারের মূল্য নিয়ন্ত্রক পর্ষদ।

হাওড়াতেও সব্জির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কমেছে। ঝিঙে ছিল ৯০ টাকা প্রতি কেজি। এখন হয়েছে ৮০ টাকা। এক কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ২০০ টাকায়। বুধবার বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। কাঁচালঙ্কার দাম ১৫০ থেকে কমে হয়েছে ১২০ টাকা। তবে আলুর দাম কিছুটা বেড়েছে।

হুগলির চুঁচুড়া খড়ুয়াবাজার, মল্লিক কাসেম হাট, শেওড়াফুলির পাইকারি বাজারে অভিযান চালায় ক্রেতা সুরক্ষা দফতর, কৃষি বিপণন দফতর এবং নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির আধিকারিকরা। বুধবার শেওড়াফুলি বাজারে অভিযান চালান শ্রীরামপুর মহকুমা শাসক-সহ পুলিশ আধিকারিকেরা। বিক্রেতাদের দাঁড়িপাল্লা পরীক্ষা করেন আধিকারিকেরা। ‘রিনিউ’ না-করায় কয়েক জনের দাঁড়িপাল্লা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আলুর দাম কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি নেওয়ায় খুচরো বিক্রেতাদের সাবধান করেন আধিকারিকেরা। আগামী কয়েক দিন এই অভিযান চলবে বলে জানা যাচ্ছে।

দুই ২৪ পরগনার থেকে দুই মেদিনীপুর, সর্বত্রই কমবেশি একই ছবি দেখা গেল বুধবার। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতো নজরদারি চালানো হবে। হিমঘর থেকে সব্জি যাতে বার করিয়ে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলা সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি জানান, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে জেলা পরিষদের একটি বৈঠক রয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। কর্মাধ্যক্ষদের দায়িত্ব দেওয়া হবে বাজার ঘুরে দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

Price Hike Vegetables Price rise Price reduced
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy