মৃত দুষ্কৃতী প্রভু সাউ। —নিজস্ব চিত্র।
ফিল্মি কায়দায় পুলিশ-ক্রিমিনাল গুলির লড়াই। কয়েক মিনিটের এনকাউন্টার। খতম ওয়ান্টেড। শুক্রবার ভর দুপুরে এ রকমই এনকাউন্টারের সাক্ষী রইলেন জগদ্দল থানা এলাকার বাসিন্দারা। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা অবশ্য জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা গুলি চালায়। পুলিশ নিজেকে বাঁচাতে গুলি চালায়।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে মৃত ওই যুবকের নাম প্রভু সাউ। কাকিনাড়া শুকরমারি এলাকার বাসিন্দা তিনি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে ব্যারাকপুর বিএন বোস হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: রাজ্যের ৯ যাত্রীকে হেনস্থা আরপিএফের
পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রভু সাউ ওই এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। দীর্ঘ দিন ধরেই পুলিশ তাকে খুঁজছিল। তার মৃত্যুর সঙ্গে ওই এলাকার আগের অশান্তির কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রভু সাউয়ের সঙ্গে আরও দু’জন ছিল। হঠাৎ করেই ওই তিন জন পুলিশের একটি টহলদারি দলের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে যায়। পুলিশ দেখে প্রভু এবং তার সঙ্গীরা পালানোর চেষ্টা করে। এক স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করেন, পুলিশ ওই তিন জনকে থামতে বলে। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় প্রভু এবং তার সঙ্গীরা। পাশের একটি বাড়ির অ্যাসবেসটসের চালে উঠে যায় প্রভু। সেখান দিয়ে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ওই দুষ্কৃতীর। ওই অ্যাসবেসটসের ছাদ ভেঙে ঘরে পড়ে গুলিবিদ্ধ দুষ্কৃতীর দেহ।
তবে প্রভুর অন্য দুই সঙ্গী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে প্রভুর। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি পিস্তলও পাওয়া গিয়েছে। প্রভুর কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে পুলিশ এখনও মুখ খোলেনি। তবে ভরদুপুরে গুলির লড়াইতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার মানুষদের মধ্যে।
দুপুরের ওই ঘটনার আগে বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামনগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রাজু নামে এক দুষ্কৃতীর। অপরাধ জগতে গোবরা রাজু নামে পরিচিত ওই দুষ্কৃতী। কয়েক দিন আগেই জামিনে মুক্তি পেয়েছিল সে।
গত মে মাসে বিধানসভা উপনির্বাচনের পর থেকে তৃণমূল বনাম বিজেপির রাজনৈতিক সংঘর্ষ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়া-কাকিনাড়া এলাকায় অন্য মাত্রা নেয়। রাজনৈতিক সংঘর্ষ গোষ্ঠী সংঘর্ষে পরিণত হয় যা সামলাতে হিমশিম খায় প্রশাসন। প্রকাশ্য রাস্তায় বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপির জেরে অলিখিত বন্ধের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। বিঘ্নিত হয় ট্রেন পরিষেবাও। রাস্তায় গুলি, বোমাবাজি রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে জুন মাসের ২০ তারিখ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ভাটপাড়া ফাঁড়িকে থানার মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ওই দিন ভাটপাড়া থানা উদ্ধোধন করার কথা ছিল রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক বীরেন্দ্রর। কিন্তু সকাল থেকেই থানার ১০০ গজের মধ্যে শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। ঠেকাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করেও উড়ে আসে ইট, বোমা-গুলি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়। সংঘর্ষের মধ্যেই মৃত্যু হয় কাকিনাড়া কাছাড়ি পাড়ার দুই বাসিন্দার। এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন যে পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে ওই দু’জনের।
আরও পড়ুন: শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ, অভিষেককে কোর্টে তলব
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৎকালীন পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীকে অপসারণ করে দায়িত্ব দেওয়া হয় মনোজ বর্মাকে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ভাটপাড়া এলাকার ওই গোষ্ঠী সংঘর্ষের সঙ্গে শুক্রবারের ঘটনার কোনও যোগ নেই। দু’টি খুনের ঘটনাই সম্পূর্ন ভিন্ন। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ মনোজ বর্মা এ দিন ঘটনার পর বলেন,‘‘ দু’দিন আগেও ওই দুষ্কৃতীকে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল। তাঁকে খুঁজছিল পুলিশ।” ভাটপাড়া-কাকিনাড়া এলাকার সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনায় প্রভুর যোগ থাকার সম্ভবনাও উড়িয়ে দেননি পুলিশ কমিশনার ।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy