‘যোগ্য-অযোগ্য’দের তালিকা কি সোমবার প্রকাশ করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)? আপাতত সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মনে। এসএসসির ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেল অনুসারে ‘দাগি’ নন এমন শিক্ষকেরা আপাতত স্কুলে যেতে পারছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। তবে শিক্ষাকর্মীদের জন্য পূর্বের রায়ই বহাল রয়েছে। এই অবস্থায় সোমবার এসএসসি ‘যোগ্য-অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করার কথা। ওই তালিকা কি শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হবে? এই বিষয়ে রবিবার কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকেই চাকরিহারারা দাবি তুলছিলেন, যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। এই দাবিতে গত ১১ এপ্রিল বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিরা। এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থও ছিলেন বৈঠকে। ওই দিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, ২১ এপ্রিলের মধ্যে ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে তাঁরা আশ্বাস পেয়েছেন। তাঁরা আরও জানান, বিকাশ ভবনের বৈঠকের পরে জানানো হয়েছিল, ওএমআরের প্রকৃত মিরর ইমেজ নেই। যদি সেটি থাকত, তবে সিবিআই তা খুঁজে পেত। তাই সিবিআইয়ের কাছে যে প্রতিলিপি আছে, সেটিই প্রকাশ্যে আনা হবে।
১১ এপ্রিলের বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যও জানিয়েছিলেন, আইনি পরামর্শ নিয়ে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের পর থেকে দু’সপ্তাহের সময়সীমা অতিক্রম করতে অবশ্য এখনও কিছুটা সময় বাকি থাকছে। সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি (২৪ এপ্রিল) দু’সপ্তাহের মেয়াদ ফুরোচ্ছে। তবে ‘দাগি’ নন এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সুপ্রিম কোর্ট সাময়িক স্বস্তি দেওয়ার পরে ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের তালিকা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যথাসময়ে এসএসসির তরফে তা প্রকাশ করা হবে। ২১ এপ্রিলের মধ্যেই কমিশন সেই পদক্ষেপ করবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
এই পরিস্থিতিতে সোমবার সল্টলেক করুণাময়ী থেকে এসএসসি দফতর পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কমিশন তালিকা প্রকাশ না-করা পর্যন্ত এসএসসি দফতরের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকে চাকরিহারাদের একটি সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চ’ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি চাকরিহারারাও। সোমবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মিছিলে শিক্ষাকর্মীরা শামিল হবেন কি না, তা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে একটি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। কারণ, মঙ্গলবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল চাকরিহারা আন্দোলনরত শিক্ষাকর্মীদের। ওই দিন একটি মিছিল এবং জমায়েতের কথা ভাবছিলেন শিক্ষাকর্মীরা। তবে পরে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মঞ্চ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলেই শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পর্ষদ সভাপতি।
সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সোমবারের মিছিলে শিক্ষাকর্মীরাও থাকবেন বলে স্থির হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ওই মঞ্চের আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, “যোগ্য শিক্ষাকর্মীদের মিছিলে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁরা থাকবেন কি না, সেটা তাঁদের বিষয়।” আন্দোলনরত ওই মঞ্চের অন্যতম শিক্ষাকর্মী সত্যজিৎ ধর জানান, তাঁরা মিছিলে থাকবেন। একই সঙ্গে মিছিল করলেও শিক্ষাকর্মীরা পৃথক কোনও ব্যানার নিয়ে হাঁটবেন কি না, সেটি নিয়েও তাঁদের আলোচনা চলছে বলে জানান সত্যজিৎ।
- ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
- এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল।
- রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৫২) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
-
চাকরি বাতিল: বেতন ফেরতের বিচার কোথায় হবে, হাই কোর্ট? না সুপ্রিম কোর্টে? শুনানি শেষে রায় স্থগিত রাখল ডিভিশন বেঞ্চ
-
স্কুলশিক্ষকদের বেতন হল সময়েই, পেলেন ‘চাকরিহারা যোগ্য’-রাও, এখন চিন্তা: ডিসেম্বরের পর কী হবে?
-
প্রায় ৩০ ঘণ্টা পরে এসএসসি দফতর থেকে বার হলেন কর্মীরা, ঘেরাও করেছিলেন ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীরা
-
আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডলের নামই বাদ! এসএসসির ‘যোগ্য’ তালিকা দেখে কী বলছেন তিনি?
-
যোগ্য কারা? তালিকা প্রকাশ না করেই ১৮০৩ জন শিক্ষকের নাম বাদ দিয়ে শিক্ষাদফতরে তথ্য পাঠাল এসএসসি