দেহ লিখে দুখিরাম

দুখিরাম সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ লাল। সারা শরীর লাল। মাথার কালো চুলেও সেই লাল রং লেপে এসেছেন। যে ট্রাউজ়ার্স পরেছিলেন সেটিও লাল। কপালে লেখা সিআইটিইউ। দু’গালে আঁকা কাস্তে-হাতুড়ি। বুকে-পিঠেও লালের উপর সাদা দিয়ে আঁকা প্রতীক। নিজের দেহে সংগঠনের নাম লিখে, প্রতীক এঁকে ব্রিগেডে এলেন দুখিরাম সরকার। মধ্যমগ্রামে থাকেন। ইলেক্ট্রিকের কাজ করেন। কেন এমন বেশ? এক গাল হেসে দুখিরাম বললেন, ‘‘ভাল লাগে। পার্টিটা আবেগে করি।”

রবীন্দ্র রাই। —নিজস্ব চিত্র।
হাঁটু দিয়ে হেঁটে
তিনি শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। হাঁটেন হাঁটু দিয়ে। সেই হাঁটুতে জড়ানো থাকে প্যাড। হাতে লালঝান্ডা নিয়ে হাঁটুতে হেঁটেই ব্রিগেডে এলেন বছর ৫৫-র রবীন্দ্র রাই। আসল বাড়ি বিহার। কলকাতায় থাকেন পোদ্দার কোর্টের কাছে। পেশায় দিনমজুর। কেন এলেন ব্রিগেডে? রবীন্দ্রের জবাব, ‘‘অনেক দিন ধরে পার্টি করি। আর সেলিমভাইকে (সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম) ভাল লাগে।’’

ব্রিগেডের ভিড়ে বিমান বসু। —নিজস্ব চিত্র।
পিছনে ৪২, সামনে ৮৪
গত বছর যখন দলের যুব সংগঠনের ডাকে ব্রিগেড হয়েছিল, তখনও তিনি ছিলেন মঞ্চের নীচে। রবিবারের ব্রিগেডেও সেই তিনি মঞ্চের নীচেই রইলেন। কখনও মঞ্চের পিছনে তাঁবুতে, কখনও রোদে তেতে ভিড়ে মিশে রইলেন ৮৪ বছরের প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু। মঞ্চের ডান পাশে তিনি যখন ভিড়ের মধ্যে বসে রয়েছেন, তখন তৈরি হল সেই ফ্রেমটি। পিছনে কলকাতার সর্বোচ্চ বহুতল ‘দ্য ফর্টিটু’। ৪২। সামনে বিমান। ৮৪।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং রতন টাটার মূর্তি নিয়ে সমাবেশে। —নিজস্ব চিত্র।
বুদ্ধ-টাটা
ছিল ‘মেহনতীর সমাবেশ’। শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, বস্তিবাসীদের ভিড় করতে চেয়েছিল সিপিএম। যে সভা থেকে আদানি, অম্বানিদের বিরুদ্ধে কড়া কড়া কথাও বললেন বাম নেতারা। কিন্তু সেই সভাতেই দেখা গেল এক তরুণ মাথার কাছে ধরে রয়েছেন থার্মোকলের দু’টি মূর্তি। অনেক কষ্ট করে বুঝতে হল, মূর্তি দু’টির একটি প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের, অন্যটি প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটার। নীচে লেখা ‘বেকারের স্বপ্নভঙ্গ’। বুদ্ধদেবের সময়েই রতন সিঙ্গুরে কারখানা করতে এসেছিলেন। কিন্তু জমি-আন্দোলনের জেরে সেই কারখানা শেষ পর্যন্ত পাত্তারি গুটিয়েছিল সিঙ্গুর থেকে। কিন্তু তাই বলে শ্রমিক-কৃষকের সমাবেশে শিল্পপতি টাটার মূর্তি? অবাক হলেন অনেক সিপিএম নেতাই। কেউ কেউ অস্বস্তিও পেলেন।

জল ভরার লাইন। — নিজস্ব চিত্র।
জল ধরো-জল ভরো
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি প্রকল্প রয়েছে যার নাম ‘জল ধরো-জল ভরো’। প্রবল গরমে কার্যত সেটাই করতে হল বাম কর্মীদের। রবিবারের ব্রিগেডে কলকাতা পুরসভার জলের গাড়ি ছিল। দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন লাইন দিয়ে বোতলে জল ভরলেন। একটা সময়ে লাইন বেশ কয়েকশো লোকের হয়ে গিয়েছিল।

ঝাঁটা হাতে বন্যা টুডু। —নিজস্ব চিত্র।
যিনি বক্তৃতা করেন, তিনি ঝাঁটও দেন
রবিবার বামেদের ব্রিগেডে চমক ছিল তাঁর বক্তৃতা। সেই বন্যা টুডু শুধু বক্তৃতাই করলেন না। সভা শেষে বাকি কর্মীদের সঙ্গে ব্রিগেড পরিষ্কার করতে হাতে ঝাঁটা নিয়ে ঝাঁটও দিলেন। কথায় বলে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ বন্যা দেখালেন, যিনি মঞ্চে বক্তৃতা করেন, তিনি মাঠ পরিষ্কার করতে হাতে ঝাঁটাও তুলে নেন।