শপথের পাঠ। মালদহে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
নাবালিকা বিয়ে রুখতে এ বার বিয়ে দেওয়াটাই আটকাতে চায় মালদহ জেলা প্রশাসন। তাই জেলার প্রায় সাড়ে সাতশো পুরোহিতকে দিয়ে বুধবার শপথ বাক্য পাঠ করালো প্রশাসন। মালদহ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে পুরোহিতেরা সার দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের বুকে হাত দিয়ে এক সঙ্গে বললেন, ‘‘আমরা ঈশ্বরের নামে শপথ করছি, ১৮ বছরের নীচে মেয়ে এবং ২১ বছরের নীচের ছেলেদের বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করব না।’’ সেই সঙ্গেই জানালেন, তাঁদের কানে এমন ঘটনার খবর এলে সংশ্লিষ্ট নাবালক-নাবালিকার অভিভাবকদের এই বেআইনি কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবেন। অভিভাবকেরা যদি না শোনেন, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে বিষয়টি জানাবেন তাঁরা।
প্রেক্ষাগৃহে ছিলেন মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল। তাঁর সামনেই পুরোহিতেরা শপথ পাঠ করেন। দেবতোষবাবু জানান, ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ ওয়েলফেয়ারের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে জেলায় নাবালিকা বিয়ের হার আগের চেয়ে কমলেও, এখনও বেশ বেশি। বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকেও জানা গিয়েছে, প্রসূতিদের মধ্যেও নাবালিকাদের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেশি। কিন্তু নানা ভাবে চেষ্টা করেও নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রদ করা যায়নি। তাই নাবালিকা বিয়েই বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। বছর দু’য়েক আগে জেলার ইমামদের একই ভাবে নাবালক-নাবালিকাদের বিয়ে না দেওয়ার জন্য সচেতনতা শিবিরে ডাকা হয়। দেবতোষবাবু বলেন, ‘‘সেই শিবিরের পরে এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তাতেই উৎসাহী হয়ে এ বার পুরোহিতদের আহ্বান করা হয়েছে।’’
পুরোহিতদের একটি করে পঞ্জিকাও দেওয়া হয়েছে। তাতে যেমন বিস্তারিত ভাবে নাবালিকা বিবাহের কুফলগুলো লেখা রয়েছে, তেমনই রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তাদের ফোন নম্বর। জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ের খবর সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা গেলেও, পুরোহিতকে তো খবর দিতেই হবে। আর তখন পুরোহিত আমাদের কানে খবর পৌঁছে দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
যে পুরোহিতেরা এ দিন শপথ নিলেন, তাঁদের অধিকাংশই বঙ্গীয় পুরোহিত সভার সদস্য। ওই সভার মালদহ শাখার সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই উদ্যোগে সঙ্গী হতে পেরে আমরা খুশি। আমরা শপথ নিয়েছি, নাবালক-নাবালিকার বিয়ে দেব না। তেমন খবর শুনলে প্রশাসনকে জানাব।’’ কয়েকজন জানান, তাঁরা বিয়ে দিতে রাজি না হলে ভয় দেখানো হয়। আবার কেউ বলেছেন, পুজো করে সামান্য টাকাই রোজগার হয়, বিয়ে দিলে আর একটি বেশি টাকা পাওয়া যায়, তাই অনেকে রাজিও হয়ে যান। তবে এ দিনের পরে এমন প্রস্তাব এলে তাঁরা আর রাজি হবেন না বলে জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy