পথ আটকেছিল যুবক। ভরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেটির বিয়ের প্রস্তাব সটান নাকচ করে দিয়েছিল তরুণী।
শাস্তি জুটল নিমেষে। পকেট থেকে বেরিয়ে এল ‘অস্ত্র’। কাচের শিশি থেকে চলকে উঠল অ্যাসিড। ছিটকে লাগল মেয়েটির মুখে। অসহ্য যন্ত্রণায় আতর্নাদ করে উঠল তরুণী।
বৃহস্পতিবার নওদার ঘটনা। বছর আঠারোর এক তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ডোমকলের জিৎপুরের বাসিন্দা রাকিবুল শেখকে।
পুলিশ ও তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছর আগে মোবাইল ফোনে রাকিবুলের সঙ্গে আলাপ হয় নওদার এলামনগরের ওই তরুণীর। সেই থেকে মাঝেমধ্যেই মেয়েটিকে ফোন করত রাকিবুল। ওই যুবক মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। মেয়েটি না করেনি। বলেছিল, ‘ভাগ্যে থাকলে হবে’। তবে পড়াশোনা শেষের পরে। এখন সে নদিয়ার কানাইনগর হাইমাদ্রাসায় একাদশ শ্রেনীতে পড়ে।
কিন্তু অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না যুবক। দিন চারেক আগে নওদার এলামনগরে চলে এসে মেয়েটির বাড়ির খোঁজ করে। গ্রামের লোকজন তাকে মেয়েটির বাড়ি চেনাতে চায়নি। উল্টে তাকে এলাকার লোকজন ভয় দেখায়। জানায়, এলাকায় তাকে দেখা গেলে বড় ক্ষতি হবে। তাতেই সে রেগে যায়। সে দিনের মতো বাড়ি ফিরে গেলেও, বৃহস্পতিবার মেয়েটির বাড়ির কাছে অপেক্ষায় বসেছিল।
সে ঠিক করে রেখেছিল, স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েটিকে ধরবে। কিন্তু এ দিন স্কুলে যায়নি ওই ছাত্রী। ওবিসি সার্টিফিকেট নিতে দুই বন্ধুকে নিয়ে সাইকেলে চেপে চাঁদপুর পঞ্চায়েতে যাচ্ছিল সে। রাস্তা আটকায় রাকিবুল। বলে, তার সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে। কিন্তু পাটিকাবাড়ি স্কুলের কাছে রাজ্য সড়কের উপর দাঁড়িয়ে অত লোকের মাঝে বেশি কথা বলতে চায়নি ওই তরুনী। তার পরেই প্যান্টের পকেট থেকে বেরিয়ে আসে অ্যাসিডের শিশি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অ্যাসিড লাগে মেয়েটির মুখের ডান দিকে। মুখে হাত দিয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে সে। আশপাশে লোক জমে যায়। মেয়েটির বন্ধুরা চেঁচাতে থাকে। ওই যুবককে দেখিয়ে বলে, ‘‘ওই ছেলেটা অ্যাসিড ছুড়েছে।’’ তার পরেই ওই যুবক পালানোর চেষ্টা করলে এলাকার মানুষ ধরে ফেলে। শুরু হয় গণপ্রহার। খবর যায় পুলিশের কাছে। পুলিশের গাড়ি কাছেই ছিল। কিন্তু গাড়ি আসার আগেই রাকিবুলের সঙ্গে থাকা সাইকেলটি পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। শুরু হয় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ। ও দিকে, জখম তরুণীকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে নওদার ওসি উৎপল দাসের নেতৃত্বে বড় পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বছর ছাব্বিশের রাকিবুল শেখকে তারা গ্রেফতার করে। জেরার মুখে রাকিবুল পুলিশকে জানিয়েছে, সে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ওই তরুনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল সে। কিন্তু মেয়েটি এখনই বিয়ে করতে রাজি হয়নি। সেই রাগেই এই কাজ করেছে সে।
আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই তরুণী বলেন, ‘‘আমাকে ফোন করতো ও। আমি দু’বার দেখেছি ওকে। আমাকে বলেছিল, বেঙ্গালুরুতে কাজ করে। ভাল আয় করে। বিয়ে করবে। কিন্তু আমি এখনই বিয়ের কথা দিইনি। তাতেই ক’দিন আগে আমার বাড়ি ধাওয়া করেছিল। কিন্তু গ্রামের লোক তাকে আমার বাড়ি চিনিয়ে দেয়নি। ওকে বকাঝকাও করে। তাতেই...।’’
সে আরও বলতে থাকে, ‘‘আজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাইকেল আটকে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় ও। আমি সে কথা না শুনতে চাইলে, প্যান্টের বেল্ট খুলে পকেটের ভেতরে কাঁচের শিশিতে রাখা অ্যাসিড আমার মুখে ছুড়ে মারে। তার পর... আমি জ্ঞান হারাই।’’
তারা পাঁচ বোন। সেই ছোট। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। অনেক কষ্ট করে ছোট মেয়েটাকে পড়াচ্ছিলেন। ‘‘স্বপ্ন ছিল, মেয়ে বড় হবে। কী করব? কিছুতেই কিছু মাথায় আসছে না। পুলিশ ওই যুবককে কড়া শাস্তি দিক,’’ চোখ মুছতে মুছতে বললেন মা।
যে কাচের শিশিতে করে সে বাড়ি থেকে অ্যাসিড এনেছিল, তার অবশিষ্ট অংশ পুলিশ ছেলেটির কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। নওদার ওসি উৎপল দাস জানান, অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী জাতীয় অ্যাসিড, ওই যুবক তা কোথা থেকে পেল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy