তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি শেষ হলে পঞ্চায়েত ভোট হবে। তার পরে দিল্লির কাছ থেকে ১০০ দিনের কাজ-সহ বকেয়া প্রকল্পের টাকা আদায় করতে নব উদ্যমে লড়াই শুরু হবে। মুর্শিদাবাদে এমন ঘোষণাই করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
হরিহরপাড়ার সভায় পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত ওই বার্তা দিয়ে রবিবার রাতে অভিষেক এসেছেন বহরমপুরে। তাঁর তাঁবুর পাশেই ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে ব্যালটে ভোট দেওয়া ঘিরে ফের বিশৃঙ্খলা, হাতাহাতি হয়েছে। দলীয় কর্মসূচির গোপন ব্যালটেও ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার প্রেক্ষিতে অভিষেক পরে আবার বলেছেন, যাঁরা ভোট দিতে পারেননি, তাঁরা নাম লিখে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে দল যাঁকে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী করবে, তাঁকেই সকলকে মেনে নিতে হবে এবং ভোটের কাজ করতে হবে।
অভিষেক এ দিন হরিহরপাড়ার সভায় বলেছেন, ‘‘নবজোয়ার যাত্রা শেষ হলেই পঞ্চায়েত ভোট হবে। তার পরে আমরা দিল্লি যাব বাংলার হয়ে আন্দোলন করতে। দিল্লি থেকে ১০০ দিনের টাকা আদায় করে আনবই।’’
এই পর্বের আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় জনসংযোগও সেরেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দলের নেত্রীর স্লোগান ‘খেলা হবে’। মাঠে নেমে অভিষেক এ দিন শুধু খেলেননি, একটি গোলও করেছেন! রেজিনগরের দাদপুর থেকে তকিপুর পর্যন্ত রাস্তায় তিনি নিরাপত্তা বেষ্টণী সত্ত্বেও বারবার পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কথা বলেছেন। তখন অনেকেই তাঁকে নানা অভাব-অভিযোগের কথা বলেন। এর কিছু ক্ষণ পরেই বেলডাঙার যুবক সঙ্ঘের মাঠে গিয়ে তিনি খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলান। সেখানেই তিনি একটি ফুটবলে শট করে গোল করেন।
‘খেলা’র কথা এ দিন শোনা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখেও। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় বিজেপি কর্মী বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার খুনের প্রতিবাদে জেলায় বন্ধের দিন পটাশপুরে অবরোধে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে পুলিশ মারধর করেছিল বলে অভিযোগ বিজেপির। তারই প্রতিবাদে এ দিন পটাশপুরে সভা থেকে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘এ বার আসল খেলা হবে! পার্থ-অপা, কেষ্ট-সুকন্যার খেলা হয়েছে। মানিক ভট্টাচার্যের খেলা হয়েছে। জীবন সাহার খেলা হয়েছে। বাকি রয়েছে পিসি ভাইপোর খেলা! সেটাও হয়ে যাবে।’’
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূল পরাজিত হয়েছে। তার পরে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। কিন্তু অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রায় মানুষের সাড়া ও আস্থা পাওয়া যাচ্ছে বলে শাসক দলের নেতাদের দাবি। অভিষেক এ দিন হরিহরপাড়ার সভায় সরাসরি শ্রোতাদের প্রশ্ন করেছেন। জিজ্ঞাসা করেছেন, ২০১৯ সালে কেন আপনারা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন? উত্তরে কেউ বলেছেন, এনআরসি রুখতে। অনেকের দাবি, উন্নয়নের জন্য। কেউ বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে। অভিষেক বলেন, ‘‘বাংলায় এনআরসি হয়নি, উন্নয়ন হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও রক্ষা করা গিয়েছে। তাই আবার বলছি, আমরা নিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই না।’’ সেই সূত্রেই তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। বাংলার প্রাপ্য আমরা ছিনিয়ে আনবই। পঞ্চায়েতের পরে দিল্লি যাব বাংলার হয়ে আন্দোলন করতে।’’
অভিষেক এ দিন যেখানেই গিয়েছেন, তাঁকে ঘিরে দৃশ্যত ভাল ভিড় হয়েছে। তবে বিরোধীদের দাবি টোটো, বাস, লরি ভাড়া করে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছে। নওদার একটি বেসরকারি স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের এ দিনের কর্মসূচিতে নিয়ে আসা হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, নেতাকে দেখতে ও কর্মসূচিতে যোগ দিতেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
জঙ্গিপুরের দলীয় নেতাদের সঙ্গে এ দিন সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বাগ-বিতণ্ডা এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। কয়েক দিন আগে জঙ্গিপুরে জেলা কমিটি ঘোষণা নিয়ে সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস দলের জেলা সভাপতি খলিলুর রহমানকে আক্রমণ করেছিলেন। ইমানি এ দিন অভিষেকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ভবিষ্যতে এই ঘটনা আর ঘটবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy