ভোটার তালিকার ‘ভূত’ তাড়াতে গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের তৃণমূলের মহাসমাবেশ থেকে বড় একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সেই কমিটি প্রথম বৈঠকে বসেছিল। কিন্তু তৃণমূল ভবনের সেই বৈঠকে গরহাজির রইলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার গঠিত কমিটিতে প্রথম নাম ছিল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর। দ্বিতীয় নামটিই ছিল অভিষেকের। কিন্তু অভিষেক কমিটির প্রথম বৈঠকে রইলেন না। নেতাজি ইন্ডোরের মহাসমাবেশে অভিষেক বক্তৃতা করেছিলেন। সেই বক্তৃতার বেশ কিছু অংশে স্বয়ং মমতা ‘সিলমোহর’ দিয়েছিলেন। তার পরে তৃণমূলের অনেকেরই ধারণা ছিল, সর্বোচ্চ স্তরের দ্বন্দ্ব মিটে গিয়েছে। বস্তুত, শাসক শিবিরের অন্দরে অনেকেই বলছিলেন, ‘শৈত্য’ কেটে গিয়েছে। কিন্তু সেই সমাবেশের আট দিনের মাথায় মমতার গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে অভিষেকের অনুপস্থিতি শাসকদলের ভিতরে আবার নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে। কেন অভিষেক এলেন না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক ‘প্রবীণ’ নেতা আবার বলেছেন, ‘‘কে এলেন, কে এলেন না, জানি না। তবে যিনি আসবেন না, তাঁকে পিছিয়ে পড়তে হবে।’’
তবে এই বিষয়টিকে বড় করে দেখতে বা দেখাতে চাইছেন না তৃণমূলের অনেকে। তাঁদের সংখ্যাও কম নয়। বক্তব্য, বৃহস্পতিবারের বৈঠকেই বলা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চ বিকাল ৪টের সময়ে দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে মিলিত হবেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেখানে রাজ্য কমিটির সমস্ত সদস্য, সমস্ত জেলা সভাপতি এবং শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকে যুক্ত হতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বুধবার অভিষেক তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের অন্তর্গত মহেশতলায় গিয়েছিলেন ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতাতেই রয়েছেন। তা-ও কেন বৈঠক ‘এড়িয়ে’ গেলেন? ডায়মন্ড হারবারের অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সেবাশ্রয়ের শেষ পর্বের কাজ নিয়ে সাংসদ ব্যস্ত রয়েছেন। হয়তো সে কারণেই যেতে পারেননি।’’
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে সমীকরণ নিয়ে যাঁরা বিবিধ জল্পনা করেন এবং বিভিন্ন আলোচনার জন্ম দেন, নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশের পরে তাঁদের ময়নাতদন্তে দু’টি দিক ধরা পড়েছিল। যাঁরা ‘আশাবাদী’, তাঁরা মনে করেছিলেন, মমতা যে হেতু বলেছেন, ‘অভিষেক সবটা গুছিয়ে বলেছে’, তাই এক অর্থে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যকে ‘সিলমোহর’ দিয়েছিলেন দলের সর্বময় নেত্রী। আবার ‘সন্দিগ্ধু’ অংশের বক্তব্য ছিল, মমতা যে কমিটি গড়ে দিয়েছেন, তাতে বাকি সকলের মতো অভিষেকও ‘এক জন’। পৃথক কোনও মর্যাদা তাঁকে দেওয়া হয়নি। তবে তাঁর নাম রয়েছে দু’নম্বরে। রাজ্য সভাপতির পরেই। ফলে গুরুত্ব তাঁর আছে। পাশাপাশিই তাঁরা উল্লেখ করছেন, মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজ পরিচালিত হবে ইস্টার্ন বাইপাসের লাগোয়া মেট্রোপলিটনের তৃণমূল ভবন থেকেই। সেই নির্দেশকে ওই অংশের অনেকে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই বলে যে, মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, দলের কাজ দলের দফতর থেকেই হবে। অন্য কোথাও (ক্যামাক স্ট্রিট) থেকে নয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অভিষেকের গরহাজির থাকাকে তাঁরা এই আলোকেও ব্যাখ্যা করতে চাইছেন। তাঁদের একজনের কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, অভিষেক ১৫ তারিখে যে বৈঠক করবেন, তা কিন্তু ভার্চুয়াল। অর্থাৎ, তাঁকে তৃণমূল ভবনে আসতে হবে না।’’ যদিও এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে অনেকে বলছেন, মেট্রোপলিটানের তৃণমূল ভবনে যাওয়া নিয়ে অভিষেকের কোনও ছুতমার্গ নেই। তিনি একাধিক বার সেখানে গিয়েছেন। বস্তুত, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধারের পর তিনি সেখানেই দলের নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে পার্থ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তবে বৃহস্পতিবার মমতার গড়ে দেওয়া কমিটির প্রথম বৈঠকে হাজির তৃণমূলের এক নেতা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সাংগঠনিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের পাল্টা বিকেন্দ্রীকরণের মডেল দেখা যাচ্ছে।’’ সূত্রের খবর, প্রথম বৈঠকে ভোটার তালিকার কাজ এক একটি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সভাপতি বক্সী নিজে দেখবেন দক্ষিণ কলকাতার কাজ। অভিষেককে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, তৃণমূলের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে স্মারকলিপি দেবে।