Advertisement
E-Paper

ববির দাওয়ায় ইদের দাওয়াতে হাজির অভিষেক, গিয়ে বসলেন বক্সীর পাশে, তৃণমূলে জল্পনা, পাল্টাচ্ছে উপরতলার সমীকরণ

ববির বাড়ির ইদের নিমন্ত্রণে অনেক নেতা-মন্ত্রীই গিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষেরা। তবে তৃণমূলের আলোচনায় শুধু ববির দাওয়াতে অভিষেকের উপস্থিতি।

Abhishek Banerjee attended the Eid function at Minister Firhad Hakim\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s house

(উপরে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করছেন ফিরহাদ হাকিম। সুব্রত বক্সীর পাশে অভিষেক (নীচে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫৪
Share
Save

সোমবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রেড রোডে ইদের নমাজে অংশ নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা ছিল সকালের ছবি। সোমবার সন্ধ্যায় আরও একটি ছবি তৈরি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার চেতলায়। রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি) বাড়িতে ইদের অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলেন অভিষেক। যা নিয়ে আপাতত আবর্তিত হচ্ছে তৃণমূলের অন্দরের আলোচনা। যে আলোচনার নির্যাস: দলের উপরতলার সমীকরণ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। যা ‘বার্তা’ দেবে নিচুতলাতেও।

ববি-অভিষেকের পারস্পরিক সম্পর্ক বরাবরই ‘মধুর’। তা কখনও-সখনও বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যেও চলে এসেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে অভিষেক যে তৃণমূলে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি চালু করার কথা বলেছিলেন, তার প্রধান উদ্দেশ্য ববি ছিলেন বলেই তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য। কারণ, ববি এক দিকে যেমন কলকাতার মেয়র তেমনই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী। অভিষেক যখন প্রথম ওই নীতির কথা বলেছিলেন, তখন ববির হাতে ছিল পরিবহণ দফতরও। পরে যা স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে দেওয়া হয়।

দলের অন্দরে এই বিষয়গুলি ছিলই। কিন্তু দু’জনের সম্পর্কের ‘শৈত্য’ সর্বসমক্ষে চলে আসে গত বছর। যখন অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর থেকে ববির আপ্তসহায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলা হয়েছিল, ওই ব্যক্তি অভিষেকের নাম করে ‘তোলাবাজি’ করছেন। যা নিয়ে আলোড়িত হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরমহল। তার আগে কলকাতা পুরসভা যখন শহরের রাস্তায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল, তখন অভিষেক-অনুগামীরা প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, মেয়র ববি দলের সঙ্গে আলোচনা না করে এবং দলনেত্রীর অনুমোদন না নিয়ে একতরফা ভাবে ফি বৃদ্ধি করেছেন। পক্ষান্তরে, ববির বক্তব্য ছিল, তাঁর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ওই ‘প্রকাশ্য বিরোধিতা’ না করে যা বলার দলের অন্দরে বলা যেতে পারত। দু’পক্ষের ‘সংঘাত’ যখন প্রকাশ্যে এসে পড়েছে, তখন আসরে নামতে হয় স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি কথা বলেন ববির সঙ্গে। তখনকার মতো ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে হয় কলকাতা পুরসভা তথা মেয়র ববিকে।

এক দিকে যেমন অভিষেকের সঙ্গে ববির সম্পর্ক তৃণমূলের অন্দরে সর্বজনবিদিত, তেমনই শাসক শিবিরের অন্দরে এ-ও সকলে জানেন যে, ববি মমতার ‘অত্যন্ত আস্থাভাজন’। ববি একে রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী, দ্বিতীয় তিনি তৃণমূলের সবচেয়ে পরিচিত সংখ্যালঘু মুখ। আবার তিনি মহা ধুমধামে দুর্গাপুজোও করেন। যা তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। ফলে ববিকেও তৃণমূলের প্রয়োজন।

তৃণমূলের ভিতরের আলোচনা এবং জল্পনার যোগফল বলছে, ববি-অভিষেকের এই সৌহার্দের ছবি দলের প্রয়োজনেই। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে দলের উপরতলার ঐক্যের ছবি সর্বসমক্ষে আসাটা জরুরি। প্রতি বারই ইদে ববি তাঁর চেতলার বাড়ির দাওয়ায় বিশাল দাওয়াতের আয়োজন করেন। সেখানে অভ্যাগতও আসেন প্রচুর। কিন্তু সেখানে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেকের আগমন হল এক বছর পরে। যে ছবি রাত পোহাতে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে ববির বাড়ির ইদের দাওয়াতে আরও অনেক নেতা-মন্ত্রী গিয়েছিলেন। তালিকায় ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষেরা। তবে তৃণমূলের আলোচনা শুধু অভিষেকের উপস্থিতি নিয়েই। অভিষেক এর আগে ববির বাড়ির ইদের দাওয়াতে গিয়েছেন। তবে গত বছর তিনি যাননি। আবার তিনি এ বছর গেলেন। যার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূলের উপরতলার সমীকরণকে জুড়ে দেখা অসমীচীন হবে না। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে ‘দূরত্ব’ নিয়ে কিছু দিন আগেও বিস্তর আলোচনা হয়েছিল শাসকদলে। সম্প্রতি সেই দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে বলেই দাবি অনেকের। সেই প্রেক্ষিতেই ববির বাড়িতে অভিষেকের উপস্থিতি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। যেমন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ববির বাড়ির দাওয়াতে একই সঙ্গে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল এবং অভিষেকের উপস্থিতি। একদা ‘ঘনিষ্ঠতা’ থাকলেও গত কয়েক বছর ইন্দ্রনীল অভিষেকের আকাশে ‘দূরের বলাকা’ হয়েই রয়েছেন বলে দলের অন্দরের খবর। যদিও এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। প্রকাশ্যেও এ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি।

তবে শাসকদলের উপরতলার ‘দূরত্ব’ যে কাটছে, তার সূচক গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্পষ্ট। গত ১৫ মার্চ ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের প্রায় ৪,৫০০ নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। যে বৈঠকের আনুষ্ঠানিক সূচনা এবং সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য সভাপতি বক্সী। নবীন প্রজন্মের অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন প্রবীণ রাজ্য সভাপতি। বৈঠকে বক্সী বলেছিলেন, ‘‘অভিষেক আমাদের সকলের নেতা।’’ যা দলের বিভিন্ন স্তরে ‘বার্তা’ দিয়েছে। আবার সোমবার ইদ-সন্ধ্যাতেও ববির বাড়িতে পাশাপাশি চেয়ারে বসেছেন বক্সী-অভিষেক। দাওয়াতের একাধিক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অভিষেক পৌঁছোনোর পরে তাঁকে সাদরে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছেন ববি। যে দৃশ্য তৃণমূলের অন্দরে ‘নজরকাড়া’। সেই দৃশ্যের উপর নজর রেখেই ভবিষ্যতের দৃশ্যপট তৈরি করছেন শাসক শিবিরের নেতারা। যে দৃশ্যপটে দলের অন্দরে ঐক্য অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। যে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় মাইলফলক বিধানসভা ভোট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}