তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের কাজ নিয়ে দলকে নতুন নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি জানান, ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত সহায়তা শিবির তৈরি করতে হবে। সেই শিবির আট দিন ধরে চলবে। সেখানে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ করা হবে।
শুক্রবার বিকেলে দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই বৈঠক হয়। অভিষেকের আগে ওই বৈঠকে বক্তৃতা করেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তার পর সকলের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক। তিনি জানান, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে সহায়তা শিবির তৈরি করবে তৃণমূল। সেখানে ১০০ দিনের কাজ সম্পর্কে মানুষকে বোঝানো হবে। কী ভাবে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করছে বাংলাকে, তা-ও জানবেন সাধারণ মানুষ। রবিবার থেকেই এই শিবির শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। ওই শিবির চলবে ১৮ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি।
বুথে বুথে, মোড়ে মোড়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বলতে বলেছেন অভিষেক। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আমি নবজোয়ার যাত্রা থেকে ব্যক্তিগত ভাবে উপলব্ধি করেছি, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম। টাকা রাজ্য সরকার দেয়, না কেন্দ্রীয় সরকার দেয়, তা অনেকেই জানেন না। আইন অনুযায়ী কেন্দ্র ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা ছাড়তে বাধ্য। তাই আগামী ১৮ তারিখ থেকে সব ব্লকে সহায়তা শিবির করতে হবে। সব গ্রাম পঞ্চায়েতে এটা করা হবে। পূর্ণাঙ্গ অঞ্চল কমিটি তথ্য সংগ্রহ করবে। শিবির চলবে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিবির চালু থাকবে।’’ ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ওই শিবির হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল সেনাপতির নির্দেশ, সহায়তা শিবিরগুলিতে সংশ্লিষ্ট জায়গার বিধায়ককে অন্তত দু’বার করে পরিদর্শনে যেতে হবে। সাংসদেরা নিজেদের এলাকায় পাঁচটি করে ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। যেখানে দলের বিধায়ক নেই, সেখানে ব্লক সভাপতিরা এই দায়িত্ব নেবেন। এ নিয়ে দলকে ঢালাও প্রচার করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে অভিষেক আরও একটি নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১ এবং ২ মার্চ রাজ্য জুড়ে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে সভা করবে তৃণমূল। যাঁরা ওই কাজের জন্য সরকারের কাছ থেকে টাকা পাবেন, তাঁদের নিয়ে করা হবে ওই সভা। অভিষেক জানিয়েছেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যের প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দলের তফসিলি জাতি ও জনজাতির কর্মীদের নাম পাঠাতে হবে তাঁর কাছে। তফসিলি জাতির ১০ জন এবং জনজাতির পাঁচ জনের নাম চেয়েছেন অভিষেক। দল তাঁদের কাজে লাগাবে। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে, এমন কর্মীর নামই চেয়েছেন অভিষেক।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্পকে সামনে রেখে দলকে প্রচারেরও নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। বৈঠকে তিনি জানান, মানুষকে বোঝাতে হবে, দল কাজ করেছে, কথা রেখেছে। লোকসভার স্লোগানও এই বৈঠক থেকেই স্থির করে দিয়েছেন দলের ‘সেনাপতি’। আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান হবে, ‘জমিদারি হটাও, বাংলা বাঁচাও’।
এর আগে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে দিল্লি গিয়েছিলেন অভিষেক। ‘বঞ্চিত’দের নিয়ে পুজোর আগে রাজধানীতে যান তিনি। তবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। সেখান থেকে ফিরে কলকাতায় রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তখন কলকাতায় ছিলেন না। পাঁচ দিন ধরে অভিষেকের ধর্না চলেছিল। তার পর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক সেই সময় জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল পদক্ষেপ না করলে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তিনি। মমতার কথায় এর পর ধর্না তুলেও নেন তিনি।
এর পর ১০০ দিনের কাজ নিয়ে পথে নামেন মমতাও। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার পরেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার সুরাহা না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রেড রোডের ধর্না থেকে ঘোষণা করেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা মিটিয়ে দেবে রাজ্য সরকারই। আগামী ১ মার্চ থেকে ওই টাকা দেওয়া হবে বলে জানান মমতা। প্রথমে বলা হয়েছিল, ২১ ফেব্রুয়ারি ১০০ দিনের টাকা দেবে রাজ্য। তার পর বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের অর্থ প্রাপকের সংখ্যা ২১ লক্ষ নয়, ২৪ লক্ষ ৫০ হাজার। ওই টাকা আগামী ১ মার্চ থেকে প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে বলে জানান মমতা। সেই টাকা পৌঁছনোর আগেই তৃণমূলের সর্ব স্তরের নেতারা সহায়তা শিবিরের মাধ্যমে এই কাজের খুঁটিনাটি মানুষকে বোঝাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy