গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার প্রশ্নে জুনিয়র ডাক্তারদের যে উদ্বেগ রয়েছে, তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্বেগ ‘বৈধ, বিচক্ষণ এবং ন্যায়সঙ্গত’ বলেও উল্লেখ করেছেন অভিষেক। পাশাপাশিই, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরে রদবদলের পর জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে অভিষেক বার্তা দিয়েছেন, এ বার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে তাঁরা যেন কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করেন।
বুধবার দুপুরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দীর্ঘ পোস্ট করেন অভিষেক। সেই পোস্টে গত ১০ বছরে সিবিআইয়ের রেকর্ডও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের সেনাপতির দাবি, গত এক দশকে সিবিআই একটি তদন্তও সম্পন্ন করতে পারেনি। আরজি করের নির্যাতিতার বিচার যাতে দ্রুত হয়, তা সিবিআইকেই ‘সুনিশ্চিত’ করতে হবে বলে পোস্টে উল্লেখ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এর আগে গত ২৮ অগস্ট টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকেও সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের সেনাপতি। তখনও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হননি। অভিষেক প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেনি? তার পরে সিবিআই সন্দীপকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। পরে তাঁকে ধর্ষণ-খুনের মামলাতেও গ্রেফতার করা হয়। ওই মঞ্চ থেকেই অভিষেক ১৪ অগস্ট মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলনকেও সম্মান জানিয়েছিলেন।
আরজি কর আন্দোলনের গোড়া থেকেই অভিষেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে সরব। সেই বিষয়টিও তিনি জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমি নিরাপত্তার প্রশ্নে চিকিৎসকদের উদ্বেগকে সমর্থন জানিয়ে আসছি। আমি বরাবরই বলেছি, তাঁদের অধিকাংশ উদ্বেগই বৈধ, বিচক্ষণ এবং ন্যায়সঙ্গত।’ প্রসঙ্গত, গত ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার পর কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করে অভিষেক বার্তা দিয়েছিলেন, দলমত না দেখে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হোক। অনেকের মতে, সামগ্রিক ভাবে অভিষেক এই পর্বে চিকিৎসকদের ভাবাবেগ, উদ্বেগের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে একাত্ম থাকতে চেয়েছেন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ছিল। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে, আরজি কর হাসপাতাল-সহ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসকদরে নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে। অভিষেক সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন।
গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে রাজ্য সরকার বদল করবে। ডাক্তারেরা কালীঘাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে মমতা সেই ঘোষণা করেন। ডাক্তারেরা জানিয়েছিলেন, সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়িত হলে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই পুলিশ এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনে বদল করে নবান্ন। তার পর দফায় দফায় বৈঠক করেন ডাক্তারেরা। শেষে মধ্যরাতে ঘোষণা করেন, তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। চালিয়ে যাবেন স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানও।
কিন্তু বুধবার সকালে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট আবার ইমেল করেছে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। সেই চিঠিতে তাঁরা আবার আলোচনা চেয়েছেন। সম্ভব হলে বুধবারেই। ঘটনাচক্রে, সেই চিঠি পাঠানোর খানিক পরেই অভিষেক তাঁর পোস্টে ডাক্তারদের উদ্বেগের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন। যা থেকে অনেকে মনে করছেন, অভিষেক দু’পক্ষকেই ‘বার্তা’ দিতে চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চাননি। তাঁরা আলোচনা চেয়েছেন মুখ্যসচিব তথা রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে। প্রকাশ্যে স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণের দাবি জানালেও ইমেলে কিন্তু সে দাবি তাঁরা জানাননি। বরং ‘নিরাপত্তা’ সংক্রান্ত দাবিটিই নতুন করে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy