(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুকান্ত মজুমদার (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ভোট পড়েছে ঘাস-ফুল চিহ্নে। আর রাজ্যের শাসকদলের এই বিরাট জয় নিয়ে নানা ব্যাখ্যার, নানা মতের তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৪৮ শতাংশ। দু’বছর পরের পঞ্চায়েত ভোটে সেটা বেড়ে হয়েছে ৫২ শতাংশ। এই ভোটবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ নিয়েও শুক্রবার প্রত্যয়ের সুর শোনা গেল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথায়। এসএসকেএম হাসপাতালে দলের আহত কর্মীদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অভিষেক। সেখানেই বলেন, ‘‘৪৮টা (শতাংশ) ৫২ করেছি। লোকসভায় এই ৫২-টাকে ৫৬ করব।’’ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের ভোটের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘তৃণমূলের ভোট বেড়েছে। আর বিজেপির ভোট কমেছে। ৩৮ থেকে কমে ২২ হয়েছে।’’
অভিষেকের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শুক্রবার দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছেন সুকান্ত। ভোটে হিংসা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে শাহের দরবারে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ। শাহি সাক্ষাতের পর বেরিয়ে তিনিও মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। অভিষেকের কথার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‘এ ভাবে তুলনা হয় না। তুলনা করতে হলে, গত পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনা করতে হবে।’’ সুকান্ত বলেন, ‘‘২০১৮ সালে যে পরিমাণ আসন পেয়েছিলাম, এ বার তার চেয়ে ১০৬টি আসন বেশি পেয়েছি। পঞ্চায়েত কম পেলেও গত বারের চেয়ে আসন বেশি পেয়েছি।’’ সুকান্তের এই বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে অমিত শাহের টুইটেও। শুক্রবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের এই রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাস বিজেপিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুর্দান্ত ফল করা থেকে থামাতে পারেনি। বিজেপি আগের নির্বাচনের তুলনায় তার আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে যা প্রমাণিত আমাদের ওপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই মতে, নির্বাচনে জনসমর্থনের ভিত্তি বুঝতে গেলে আসনের চেয়ে ভোট শতাংশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে দিক থেকে দেখা যাচ্ছে গত বিধানসভার থেকে এ বারের পঞ্চায়েতে বিজেপির ভোট অনেকটা কমে গিয়েছে। সেই ভোট গেল কোথায়? তৃণমূলের ভোট বাড়ার পাশাপাশি বাম-কংগ্রেসেরও উল্লেখ্যযোগ্য হারে ভোট বেড়েছে। যা বিরোধী তিন-প্রধানের সমীকরণে খানিকটা বদল এনেছে বলেও মত অনেকের। বামেদের বড় অংশের ভোট বাক্স বদল করে রামের দিকে চলে গিয়েছিল। পঞ্চায়েতের ফল দেখে অনেকেই বলছেন, রামের বাক্সে যাওয়া সেই ভোট কিছুটা হলেও বামেদের দিকে ফিরেছে। বিরোধী ভোটের এই ভাগাভাগি তৃণমূলের জন্যও স্বস্তির। কিন্তু বিজেপি নেতাদের যুক্তি হল, পুরসভা-পঞ্চায়েত ভোট আর লোকসভা-বিধানসভার মতো ভোট জনগণ এক মানসিকতা থেকে দেন না। প্রথম ক্ষেত্রে স্থানীয় বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বৃহত্তর রাজনীতি। তাই পঞ্চায়েত ভোটের অঙ্ক দেখে যাঁরা লোকসভার হিসাব কষছেন, তাঁরা গোড়ায় ভুল করছেন।
অনেকেরই বক্তব্য, পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্য দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পরের বছর লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছিল তাদের। ফলে, সতত পরিবর্তনশীল রাজনীতি এক ধারায় বয় না। একদিকে তৃণমূল যখন ধারণা তৈরি করতে চাইছে বিজেপি ক্ষয়িষ্ণু। তেমন বিজেপির বক্তব্য, লুটের ভোটের হিসাব কষে রাজনীতির পাটিগণিত কষাটাই ভুল।
পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির বহু সাংসদ, নেতাদের এলাকাতেই গেরুয়া শিবিরের ফল ভাল হয়নি। সুকান্ত মজুমদারের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে বিরোধীশূন্য জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। এ দিন তা নিয়েও সুকান্ত মজুমদারকে কটাক্ষ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি নিজের জেলায়, নিজের ব্লকে, নিজের পাড়াতেও হেরেছেন।’’ সুকান্তর লোকসভা এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ৩৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে।
দিল্লি থেকে পাল্টা সুকান্ত বলেন, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটে ৩৪ হাজারের ডবল মার্জিনে তৃণমূলকে হারাব। উনিও প্রার্থী হতে পারেন, যদি ক্ষমতা থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy